Jalpaiguri: জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ক্রমেই ভাঙছে জলপাইগুড়ি বিজেপি

জলপাইগুড়ি জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্রমে ক্ষোভ চড়ছে দলের নেতা কর্মীদের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভে অনেক পদাধিকারী সরে যাচ্ছেন দলের সাংগঠনিক পদ থেকে।
আশ্বাসের পরেও মেলেনি প্রার্থীপদ, দলীয় বৈঠকে ঢুকে ক্ষোভ বিজেপি কর্মীর
আশ্বাসের পরেও মেলেনি প্রার্থীপদ, দলীয় বৈঠকে ঢুকে ক্ষোভ বিজেপি কর্মীরছবি প্রতীকী সংগৃহীত

অর্জুন সিং নিয়ে বিজেপির ঘা এখনও দগদগে। এই সময়েই জলপাইগুড়ি জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্রমে ক্ষোভ চড়ছে দলের নেতা কর্মীদের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভে অনেক পদাধিকারী সরে যাচ্ছেন দলের সাংগঠনিক পদ থেকে। যা নিয়ে দলে তৈরি হয়েছে বড়সড় ভাঙনের আশঙ্কা। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, এখনই এইসব বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ বিজেপির জেলা সভাপতি থেকে অন্যান্য নেতৃত্ব।

বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই জেলায় ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু বিজেপি। কে ভোটে দাঁড়াবে, কারা নির্বাচনের সময় দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামবেন, তাই নিয়েই দলের মধ্যে শতখণ্ডে বিভাজন ছিল। এমনকি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে না হতেই, জেলায় দলের মূল কার্যালয়ে নিজেরাই অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। যা নিয়ে পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ঘাসফুল শিবিরের উপর দোষারোপের চেষ্টা হয়। যদিও সেসব ধোপে টেকেনি। গেরুয়া শিবিরের যা আশা ছিল, তার অনেক খারাপ ফলাফল হয় গত বিধানসভা ভোটে।

নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরেও জেলায় সাংগঠনিক কর্মকান্ড কারা সামলাবেন তাই নিয়েও চলতে থাকে মতবিরোধ। বিধানসভা ভোটের পর বসে যাওয়া কর্মীদের উজ্জীবিত করার বদলে নিজেরাই অশান্তিতে জড়িয়ে পড়তে থাকে। যার প্রভাবে ক্রমে ক্রমে দলের কর্মসূচিগুলোতে সদস্য সমর্থকদের সংখ্যা কমতে থাকে।

কার্যত তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয় জেলার পুরসভা ভোটের সময়। নিজেদের মধ্যে দলাদলি করতে গিয়ে, কার্যত পায়ের তলায় মাটি আরও সরে যায় বিজেপির। জেলা বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পুর প্রার্থীদের অনেকেই ভোট পান মাত্র ২০ থেকে ১০০ র মধ্যে। যা নিয়ে মুখ লুকোনোর জায়গা পায়নি পদ্ম শিবির। এমনকি জলপাইগুড়ি পুরসভায় একটি আসনও না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় বিজেপিকে।

অন্যদিকে সেই তুলনায় গত পুরসভা নির্বাচন থেকে কিছুটা হলেও জায়গা ফিরে পেয়েছে বামপন্থী প্রাথীরা। বামেদের পুনরুত্থানে গেরুয়া দলের মধ্যে ফের চাপা ক্ষোভ বাইরে আসতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের বক্তব্য, জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতা আগলে রেখেছেন। নিজের পছন্দের কয়েকজনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। যার ফল এখন মিলছে হাতে নাতে।

দলের অন্দরে যা খবর তাতে, বর্তমানে দলের অন্দরে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সমান্তরাল একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গিয়েছে। যাঁরা ক্রমে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একদিকে রাজ্য, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অভিযোগ জানাচ্ছে। আর এই নিয়ে সরগরম জলপাইগুড়ির বিজেপির অন্দরমহল।

জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপিতে বিক্ষুব্ধদের সক্রিয়তা আরও সাড়া ফেলেছে দিন কয়েক আগেই। ময়নাগুড়ির বিজেপি বিধায়ক কৌশিক রায়ের বাড়িতে ষাট জনের বেশি বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সূত্র অনুসারে জানা গেছে, বিক্ষুব্ধরা জেলার সব ব্লকে জেলা কমিটির সমান্তরাল কমিটি তৈরি করে ফেলেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গুরুত্ব না পেলে বড়সড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে সেই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী।

বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ইস্যু, দলের নিয়ম অনুযায়ী ময়নাগুড়ির বিধায়ককে দলের জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। যা নিয়ে দীর্ঘদিনের ঝঞ্জাট কারও অজানা নয়। জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছে বিধায়ক ঘনিষ্ঠরাও। যা নিয়ে দিন দিন চড়ছে পারদ। সেই কারণে এবং টাকার বিনিময়ে মন্ডল সভাপতির পদ দিচ্ছেন জেলা নেতৃত্ব, এই অভিযোগ তুলে বিজেপির জেলা সম্পাদক অমল চন্দ্র রায়, জেলার দুই সহ সভাপতি জয়ন্ত রায় ও নিমাই চন্দ্র রায় সহ ২০ জন দলের সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন। পদত্যাগী নেতাদের স্পষ্ট বার্তা, জেলা নেতৃত্বের উপর তাঁদের আর কোনও ভরসা নেই।

প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ি জেলায় মোট বিধানসভা আসন ৭টি। ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি, মাল এবং নাগরাকাটা। যার মধ্যে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, নাগরাকাটা আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। যদিও ২০২২-এর পুর নির্বাচনে জেলার চার পুরসভার একটিতেও জয়লাভ করতে পারেনি বিজেপি।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in