এবার কি রাজ্য বিজেপিতে ভাঙনের পালা?

১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে জল অন্যদিকে গড়াতে থাকে। দলে দলে “দমবন্ধ” হয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগ দিতে থাকে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল- যখন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেন।
বিজেপিতে যোগ দিলেন সোনালী গুহ, সরলা মুর্মু
বিজেপিতে যোগ দিলেন সোনালী গুহ, সরলা মুর্মুফাইল ছবি - বিজেপি ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশট
Published on

এক দল থেকে অন্য দলে ঝাঁপ দেওয়া এখন বাংলার রাজনীতিতে জলভাত। বিরোধী দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্য দলে দলে শাসক দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেন – এ দৃশ্যের সঙ্গে বঙ্গবাসী মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে জল অন্যদিকে গড়াতে থাকে। দলে দলে “দমবন্ধ” হয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগ দিতে থাকে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল- যখন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেন।

২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল মাত্র ৩টি আসন। খড়্গপুর সদর, বৈষ্ণবনগর এবং মাদারিহাট – এর মধ্যে খড়গপুর সদর থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও পরে দিলীপ ঘোষ সাংসদ হলে আসনটি ফাঁকা হয়। উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। অন্যদিকে ভাটপাড়া, দার্জিলিং, কৃষ্ণগঞ্জ এবং হবিবপুরে উপনির্বাচনে জয়ী হয় বিজেপি। সুতরাং ২১-এর নির্বাচনের আগে বিজেপির জয়ী বিধায়কের সংখ্যা ছিল ৬ জন।

কিন্তু অন্য দল থেকে জয়ী সদস্য বিজেপিতে আসেন ৩৩ জন। সর্বমোট ৩৯ জন বিধায়ক ছিল বিজেপির ঝুলিতে। ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা বিজেপিতে চলে এসেছেন। যদিও বিধায়ক পদ থেকে তাঁরা ইস্তফা দিয়েছিলেন। ২০২১ এর ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলবদল করা ১৮ জন বিধায়ক। তার মধ্যে জয়ী হয়েছেন মাত্র ৫ জন। শুভেন্দু অধিকারী, তাপসী মণ্ডল, বিশ্বজিৎ দাস, মিহির গোস্বামী এবং সুদীপ মুখোপাধ্যায় ছাড়া বাকি ১৩ জনই পরাজিত। পরাজিত দলবদলকারীদের তালিকায় আছেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বৈশালী ডালমিয়া, বিশ্বজিত কুন্ডু প্রমুখ।

ভোটের ফলাফলের পরেই ইতিমধ্যে ৫ জন তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করেছেন। দীপেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, বাচ্চু হাঁসদা, সোনালী গুহ, অমল আচার্য। শোভন চট্টোপাধ্যায় আগেই বিজেপি ছেড়ে দিয়েছেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তদের সাথে কোনরকম যোগাযগ নেই বলেও দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। দলবদল করে বিজেপি আসা তৃণমূল নেতারা যে বেসুরো গাইছেন তা ভালমতোই টের পাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুও বেসুরো গাইছেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে তৃণমূলকে সমালোচনা না করে “আত্মসমালোচনা” করার প্রয়োজন বলে জানিয়েছিলেন। অসুস্থ মুকুল পত্নীকে দেখতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাওয়ার পর জল্পনা আরও বেড়েছে।

নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরে বিজেপির দখলে থাকা বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদও শাসক দল তৃণমূল দখল নিয়েছে। অনেক পরাজিত দলবদলকারীই বিজেপি নেতৃত্বের ফোনও তুলছেন না, যোগাযোগও রাখছেন না।

১৯ এর লোকসভা ভোটের পর যে দলবদলের পালা ছিল বিজেপির অনুকূলে, ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তা এখন তৃণমূলের অনুকূলে। আগেকার দলবদলকারীরা এবার দলে দলে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতাদের তৃণমূল ফেরাবে কিনা সময়ই তার উত্তর দেবে।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in