১৬৯০ কোটি টাকার হিসেব নেই। ঘটনার জেরে ইস্তফা দিলেন ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্কের (IndusInd Bank) ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও সুমন্ত কাঠপালিয়া। ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্কের সবথেকে বড়ো শেয়ারহোল্ডার ইংল্যাল্ড ভিত্তিক ধনকুবের হিন্দুজা গোষ্ঠী।
জানা গেছে, ২৯ এপ্রিল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ব্যাঙ্কের সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুমন্ত কাঠপালিয়া। ব্যাঙ্কের ১৯৫৯.৯৮ কোটি টাকা হিসেব গরমিলের নৈতিক দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে এই নিয়ে দেশের পঞ্চম শীর্ষ বেসরকারি ব্যাঙ্কের তৃতীয় শীর্ষ কর্তা ইস্তফা দিলেন। সুমন্ত কাঠপালিয়ার ইস্তফার একদিন আগে ইস্তফা দেন এই ব্যাঙ্কের ডেপুটি সিইও অরুণ খুরানা এবং জানুয়ারি মাসে ইস্তফা দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কের মুখ্য আর্থিক আধিকারিক গোবিন্দ জৈন।
ইস্তফাপত্রে সুমন্ত কাঠপালিয়া জানিয়েছেন, আমার নজরে আসা বিভিন্ন নৈতিক অপরাধ এবং অবহেলার কারণে আমি এই ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করছি। আজকের কাজের সময়ের শেষে আমার ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের মার্চ মাসে তিনি ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্কের সিইও-র দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্কের অডিট থেকে জানা যায় ব্যাঙ্কের লাভ ও ক্ষতির হিসেব থেকে ১৯৫৯.৯৮ কোটি টাকার হিসেব নেই। মূল সমস্যা ছিল ডেরিভেটিভ পোর্টফোলিওতেই। চলতি বছরের ১০ মার্চ বেসরকারি এই ব্যাঙ্ক ঘোষণা করে, যে তার ডেরিভেটিভস পোর্টফোলিওর এক অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় এমন অসঙ্গতি পাওয়া গেছে যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২.৩৫% হ্রাস করতে পারে।
এই অনিয়মের কারণ খতিয়ে দেখতে প্রফেশনাল ফার্ম পিডব্লুসি-কে নিয়োগ করা হয়। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুসারে, শনিবার প্রকাশিত সেই রিপোর্টে প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্টে ১,৯৫৮.৯৮ কোটি টাকার হিসেবে গরমিল ধরা পরে। ইকনমিক টাইমস জানিয়েছে, এই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি এবং এই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টিং ত্রুটির তদন্ত করতে অ্যাকাউন্টিং এবং পরামর্শদাতা সংস্থা গ্রান্ট থর্নটনকে দিয়ে বিস্তৃত অডিট করানো হচ্ছে। যেখানে এই ঘটনা কোনো অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির কারণে বা ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
ম্যানেজিং ডিরেক্টরের আচমকা ইস্তফায় সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যাঙ্কের পরিচালনায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের পক্ষ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) কাছে পরবর্তী সিইও নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগী ডিরেক্টরকেই কাজ চালিয়ে যাবার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক অন্তর্বর্তী “কমিটি অফ এক্সিকিউটিভ” তৈরির অনুমতি দিয়েছে। যে কমিটির প্রধান হচ্ছেন সৌমিত্র সেন এবং অনিল রাও।
এই ঘটনার পর ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “উচ্চমানের পরিষেবার লক্ষ্যে ব্যাঙ্ক কাজকর্মের স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন