১ শতাংশ ধনীর হাতে ভারতের মোট সম্পত্তির ৪০ শতাংশ! মোদী জমানায় রেকর্ড আর্থিক অসাম্যের

People's Reporter: সীতারাম ইয়েচুরি লেখেন, মোদির অধীনে বৈষম্য বেড়েছে, এমনকি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক জোট জাতীয় সম্পদ লুট করছে।
মোদী জমানায় ব্রিটিশ রাজকেও টেক্কা দিয়েছে আর্থিক অসাম্য
মোদী জমানায় ব্রিটিশ রাজকেও টেক্কা দিয়েছে আর্থিক অসাম্য গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

মোদী সরকারের জমানায় গত দশ বছরে দেশের ধনী-গরিবদের আর্থিক অসাম্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজত্বের সময়কালের রেকর্ডও ভেঙ্গে দিয়েছে। সম্প্রতি প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সের ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব’ -এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ভারতে এখন ‘আর্থিক বুর্জোয়া শ্রেণির’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’ বা ‘বিলিয়নেয়ার রাজ’ চলছে।

‘ভারতের আর্থিক অসাম্য: ধনকুবেরদের রাজত্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজত্বের থেকেও বেশি অসাম্য’ নামক ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতের মোট সম্পত্তির ৪০ শতাংশ দেশের ধনীতম ১ শতাংশ ব্যক্তির আয়ত্বে ছিল। যা আমেরিকা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের ধনীতম ব্যক্তিদের আয়ের থেকেও বেশি, বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের।

প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতিবিদদের দাবি, ধনীতম ব্যক্তিদের দেশের মোট আয়ের ২২ শতাংশের ভাগ রয়েছে। অন্যদিকে, দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের বছরে গড় আয় ৫৩ লক্ষ টাকা। যেখানে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ শেষ সারির বছরে গড় আয় মাত্র ৭১ হাজার টাকা। ৪০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ মাঝের সারির গড় আয় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। এবং বাকি ১০ শতাংশ অর্থাৎ ধনী ব্যক্তিদের গড় আয় ৪৮ কোটি টাকা। যা ভারতের বাকি মানুষদের আয়ের থেকে দু’হাজার গুণেরও বেশি।

কেন এই অসাম্য? অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছে, নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির ফারাক এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। তাঁদের মতে, আয়ের বিচারে দেশের শেষ ও মাঝারি সারির মানুষরা দমিত থেকে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য নেই উচ্চ শ্রেণির মানুষের মতো শিক্ষার সুবিধা। কর ব্যবস্থাও শেষ ও মাঝারি শ্রেণির মানুষদের উপর বেশি চাপানো হয়েছে।

রিপোর্ট বলছে স্বাধীনতার পর থেকে আশির দশকের গোড়া পর্যন্ত এই আর্থিক অসাম্য অনেক কম ছিল। তারপর ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে ২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে তা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেছে।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এর ফলে ভারতে ধীরে ধীরে ধনীদের শাসন বা ‘ধনিকতন্ত্র’ বা ‘প্লুটোক্রেসি’ কায়েম হতে পারে। যার ফলে দুর্বল হয়ে পড়বে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি। অথচ স্বাধীনতার পর এই প্রতিষ্ঠানগুলিই ছিল ‘রোল মডেল’। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আপোস করে নিচ্ছে তারাও।

ভারতের এই আর্থিক অসাম্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এর সমাধান হিসাবে অর্থনীতিবিদেরা জানিয়েছেন, দেশের ১৬৭ টা ধনীতম ব্যক্তিদের পরিবারের উপর ২ শতাংশ হারে কর বসাতে হবে। তার থেকে যা সরকারের আয় হবে, তা কাজে লাগিয়ে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

লোকসভা ভোটের আগে প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সের এই রিপোর্ট কার্যত চাপে ফেলেছে মোদী সরকারকে। বিরোধীরা বরাবরই মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলছিল। বিরোধীদের দাবি, দেশের ধনীদের আরও ধনী ও গরিবদের আরও গরিব করছে মোদী সরকারের নীতি। এই রিপোর্ট পেশের পর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই ব্যাপারে ফের একবার সরব হয়েছেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

তিনি লেখেন, “মোদির অধীনে বৈষম্য বেড়েছে, এমনকি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মোট আয়ে ধনীতম ১ শতাংশ ব্যক্তির ভাগ ২২.৬ শতাংশ আর দেশের মোট সম্পদে তাঁদের ভাগ ৪০.১ শতাংশ। কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক জোট জাতীয় সম্পদ লুট করছে। ধনীকে আরও ধনী এবং দরিদ্রদের আরও দরিদ্র করছে। এর বিপরীতে মোদী সরকারকে পরাজিত করা অপরিহার্য।“

অন্যদিকে, কংগ্রেসের বক্তব্য, মোদী জমানায় ধনীদের রাজত্ব চলছে। তারা মোদীর দলের প্রচারের পিছনে অর্থ ব্যয় করছে। আর এই সব হচ্ছে মোদীর নীতিতেই।

মোদী জমানায় ব্রিটিশ রাজকেও টেক্কা দিয়েছে আর্থিক অসাম্য
World Happiness Report: সবথেকে সুখী দেশ সেই ফিনল্যান্ড, নজরকাড়া স্থানে ইজরায়েলও, ভারতের স্থান কত?
মোদী জমানায় ব্রিটিশ রাজকেও টেক্কা দিয়েছে আর্থিক অসাম্য
Air Pollution: লজ্জার রেকর্ড! দূষণে তৃতীয় স্থানে ভারত, প্রথম ও দ্বিতীয় কোন কোন দেশ?

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in