আরাবল্লীতে অবৈধ নির্মাণ চলছেই

গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ এবং সংলগ্ন জেলায় সমস্ত অবৈধ নির্মাণ অপসারণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ আদেশ সত্ত্বেও, গুরুগ্রামের আরাবল্লী অঞ্চলে খামারবাড়ির ব্যাপক অবৈধ নির্মাণ সহজেই চোখে পড়ছে।
আরবল্লী অঞ্চলে চলছে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা
আরবল্লী অঞ্চলে চলছে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা ফাইল ছবি, ছবি সৌজন্য নিউজ ক্লিক

গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ এবং সংলগ্ন জেলায় আরাবল্লী অঞ্চলে অবস্থিত সমস্ত অবৈধ নির্মাণ অপসারণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ আদেশ সত্ত্বেও, গুরুগ্রামের আরাবল্লী অঞ্চলে খামারবাড়ির ব্যাপক অবৈধ নির্মাণ সহজেই চোখে পড়ছে। জানা গেছে চত্বরের ভিতরে অবৈধ নির্মাণ অব্যাহত রাখার জন্য প্রথমে খামারবাড়ির প্রধান ফটকে একটি বিশাল সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই পাঁচিলের আড়ালে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার সময় দেখা গেছে আরাবল্লী রেঞ্জের রাইসিনা গ্রামে নির্মাণ কাজ চলছে। যেখানে একটি কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে এবং আর্থমুভার ব্যবহার করে মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, ট্রাক্টর-ট্রলির মাধ্যমে কোন বাধা ছাড়াই ঘটনাস্থলে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যদিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হয় যে তারা যদি এর ছবি তোলেন বা ভিডিও তৈরি করেন তবে তাদের হত্যা করা হবে।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আরাবল্লী রেঞ্জে অবৈধভাবে খামারবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে নজর দেওয়ার পর গুরুগ্রাম এবং সোহনায় যেসব অবৈধ নির্মাণ হয়েছে, গুরুগ্রাম জেলা বন বিভাগ এবং সোহনা পৌর পরিষদ সেইসব খামারবাড়ি, অ্যাডভেঞ্চার পার্ক, ব্যাঙ্কোয়েট হল এবং অন্যান্য ভবন চিহ্নিত করতে শুরু করেছে।

পুর কর্তৃপক্ষর পক্ষ থেকে গুরুগ্রাম অঞ্চলে ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং এজেন্সির মাধ্যমে হাই-রেজোলিউশন, রিমোট-সেন্সিং স্যাটেলাইট ইমেজের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। এজন্য তারা জেলার বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছে এবং গুরুগ্রামের আরাবল্লী রেঞ্জে অবস্থিত গ্রামের ম্যাপ পাঠিয়েছে।

আরাবল্লী অঞ্চলকে অবৈধ নির্মাণ থেকে রক্ষা করার জন্য একাধিক সংস্থার দ্বারা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিজ্ঞপ্তি লঙ্ঘন করেও নির্মাণ কাজ চলছে।

গত জুন মাসে, সোহনা পৌর কমিটি আনসাল আরাভালি রিট্রিট এবং গোল্ডেন হাইটসের প্রায় ৪৫০ টি খামারবাড়িকে "গাইর মুমকিন পাহাড়" (অনাবাদী পাহাড়) -এ খামারবাড়ি নির্মাণের জন্য নোটিশ দিয়েছে।

১৯৯১ সালের আরাবল্লী বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চাষাবাদের অযোগ্য পাহাড়ে কোন নির্মাণের অনুমতি নেই। ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালের (এনজিটি) অক্টোবর ২০১৮ -এর নির্দেশ অনুযায়ী এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

যদিও, এক খামারবাড়ির মালিক দাবি করেন যে, আরবল্লী বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হওয়ার বহু আগে এই নির্মাণ হয়েছিলো এবং তাই তারা কোনও আইন লঙ্ঘন করেনি।

তাঁদের বক্তব্য অনুসারে, "আনসাল আরাওয়ালি রিট্রিটের ফার্মহাউসগুলি ব্যক্তিগত জমিতে অবস্থিত। যা বিজ্ঞপ্তির আওতায় পড়ে না। আনসাল রিট্রিটের রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (আরডব্লিউএ) সম্প্রতি নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করে জানিয়েছে, গুরুগ্রাম জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, সোহনা পৌর কাউন্সিল এবং জেলা টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্লানিং (ডিটিসিপি) স্পষ্ট করুক এই অঞ্চল বনভূমি অথবা কৃষিজমি। কারণ সমস্ত খামারবাড়ি মালিকদের তাদের সম্পত্তির রেজিস্ট্রি এবং মিউটেশন রয়েছে। এছাড়াও, আমরা বহু বছর আগে জমি পেয়েছিলাম আনসালের থেকে এবং তার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটিও দিয়েছি"। এই দাবি করেছেন আনসাল রিট্রিট আরডব্লিউএ-র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ ভাট।

তিনি আরও দাবি করেন যে, বন বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট এবং এনজিটি -তে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে যে এই ফার্মহাউসগুলি বনভূমির আওতায় পড়ে না। ভাট বলেন, তারা বরং খনির মাফিয়াদের হাত থেকে আরাবল্লীকে রক্ষা করেছেন এবং এলাকায় সবুজ বজায় রাখতে প্রচুর সংখ্যক গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই রেজিস্ট্রি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল। IANS এর কাছে এই সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি নথির একটি অনুলিপি আছে।

সোহনা পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানান, রাইসিনাসহ সোহনার রাজস্ব সম্পদ ২০১৫ সাল থেকে পৌরসভার সীমানায় আসে।

ওই অঞ্চলের এক পুরকর্তা জানান, "স্যাটেলাইট ছবির সাহায্যে আমরা পাহাড়ে যেসব নির্মাণ হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখব এবং তার ভিত্তিতে পৌর আইন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

তিনি বলেন যে, পৌর আইন অনুযায়ী, ভূমির ব্যবহার পরিবর্তন (সিএলইউ) এবং নির্মাণের জন্য বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক, জমি শ্রেণী নির্বিশেষে তা আরাবল্লী হোক বা অন্য কোনো স্থান। আইন লঙ্ঘন করে কোনো নির্মাণ করা হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়াও, গুরুগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বনাঞ্চলে নির্মিত নির্মাণ শনাক্ত করতে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হবে এবং তাদের নোটিশ দেওয়ার পর সমস্ত অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলা হবে।

গুরুগ্রামের জেলা প্রশাসক যশ গর্গকে এক সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিপের পর অবৈধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বন বিভাগ নোটিশ দেবে। নোটিশ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বন এলাকা থেকে অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলা হবে।

"এই বেসলাইন জরিপের পরে, বনাঞ্চলে নির্মিত সকল প্রকার সম্পত্তি তাদের এলাকা সহ চিহ্নিত করা হবে। গুরুগ্রাম পৌর কর্পোরেশন, মানেসার পৌর কর্পোরেশন এবং জেলার গ্রামাঞ্চলে বনাঞ্চলের সমস্ত সম্পত্তি এই ম্যাপিং করা হবে। শীঘ্রই জরিপের কাজ শুরু করার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন গর্গ।

প্রধান বন সংরক্ষক, বাসভি ত্যাগী বলেন, ফরিদাবাদ জেলার খোরী গ্রামে বন এলাকা থেকে অবৈধ দখল অপসারণের জন্য দেওয়া আদেশ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট বন এলাকাটিকে সব ধরনের অবৈধ নির্মাণ থেকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, "একই আদেশ মেনে, গুরুগ্রাম জেলার বনাঞ্চল থেকেও অবৈধ নির্মাণগুলি সরানো হবে। বন বিভাগ গুরুগ্রাম জেলায় একটি জিও রেফারেন্স ম্যাপ তৈরি করেছে যা জেলা প্রশাসনের জরিপ দলের সাথে ভাগ করা হবে"।

ত্যাগী জানিয়েছিলেন যে পাঞ্জাব ভূমি সংরক্ষণ আইন (পিএলপিএ) এর অধীনে গুরুগ্রাম জেলায় ৩৩টি রাজস্ব এস্টেটের প্রায় ৬৮০০ হেক্টর জমি রয়েছে। বেসলাইন জরিপের জন্য, এই পুরো ভূমি ড্রোন দ্বারা জরিপ করা হবে এবং এতে নির্মিত নির্মাণগুলি চিহ্নিত করা হবে। এর পর অবৈধ নির্মাণ অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in