'I-N-D-I-A': রাজ্যে 'ইন্ডিয়া'-র সিদ্ধান্ত কার্যকর হবার সম্ভাবনা নেই; তৃণমূল-বিজেপি বিরোধিতায় অনড় বাম

রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুসারে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, CPIM-এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একই মঞ্চে একত্রিত হয়ে বিজেপি বিরোধিতা করার যে কোনও সম্ভাবনাই তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল CPIM।
বেঙ্গালুরুতে গত জুলাই মাসে ইন্ডিয়া মঞ্চের বৈঠক
বেঙ্গালুরুতে গত জুলাই মাসে ইন্ডিয়া মঞ্চের বৈঠকছবি সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)-র সুনির্দিষ্ট আকার নেওয়ার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশই ক্ষীণ হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজ্যের রাজনৈতিক কার্যকলাপে যা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুসারে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একই মঞ্চে একত্রিত হয়ে বিজেপি বিরোধিতা করার যে কোনও সম্ভাবনাই তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল সিপিআইএম।

সদ্য সমাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর সিপিআই(এম) সেই ধারণা আরও স্পষ্ট করেছে এবং জানিয়ে দিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বিজেপি বা তৃণমূল কাউকেই ছাড়া হবেনা।

পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিরা পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতিতে স্পষ্টভাবে নিজেদের আপত্তির কথা জানায়। রাজ্যের নীচুতলার দলীয় কর্মীদের মধ্যে একই মঞ্চে সীতারাম ইয়েচুরি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সময় নীচুতলা থেকে উঠে আসা এই অসন্তোষের বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়। কংগ্রেসের ডাকা বিজেপি বিরোধী দলের মঞ্চের পাটনা এবং বেঙ্গালুরু বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সীতারাম ইয়েচুরি দুজনেই উপস্থিত ছিলেন।

একইভাবে মঞ্চের বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও রাজ্যের ক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং সিপিআইএম-এর থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্তরে যখন একটি মহা-বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি গোপন বোঝাপড়া করছে।

বৃহস্পতিবার মমতা ব্যানার্জি জানান, “ওদের নিজেদের লজ্জা পাওয়া উচিত। ন্যূনতম রাজনৈতিক সততা থাকতে হবে। প্রতিটি দলের রাজনৈতিক আদর্শের একটি নির্দিষ্ট লাইন অনুসরণ করা উচিত। যদি তারা এই কৌশল চালিয়ে যায় তবে আমিও বলতে বাধ্য হব যে তৃণমূল কংগ্রেসও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে এক অবস্থান নিয়ে চলবে।”

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং পাঁচ বারের লোকসভা সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ জারি রেখেছেন। রাজ্যে বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে শাসক দলের লাগাতার আক্রমণের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি তাঁর তীব্র আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন।

সিপিআইএম এবং কংগ্রেস – দুই দলের রাজ্য নেতৃত্বই তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপির পরোক্ষ সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্ব, বিশেষ করে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম) কর্মীদের হয় বিজেপিতে যোগ দিতে অথবা রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন মঞ্চ গড়ে তোলার জন্য তাঁর আহ্বান অব্যাহত রেখেছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া মঞ্চের একটি রূপ দেওয়ার ধারণা শুরু থেকেই অবাস্তব ছিল এবং সেই অবাস্তব পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সিপিআই(এম) ঐতিহ্যগতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী; ফলে কখনই তৃণমূলের সঙ্গে সিপিআইএম বা বামেদের কোনও আসন সমঝোতা হবার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া রাজ্যের সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাগামহীন সন্ত্রাসের পরেই দীর্ঘদিন পরে বাম ভোটব্যাঙ্কের পালে হাওয়া লেগেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাম শিবির তৃণমূল বিরোধিতার সুর আরও চড়াচ্ছে।

কংগ্রেসের ক্ষেত্রে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে আসন ভাগাভাগি চুক্তির অর্থ হবে যে তারা শুধুমাত্র মালদা (দক্ষিণ) এবং বহরমপুরের দুটি আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। কারণ এই দুই কেন্দ্রে কংগ্রেসের সাংসদ আছে।

অন্যদিকে, সিপিআই(এম) এর সাথে আসন ভাগাভাগিতে কংগ্রেস কমপক্ষে সাতটি আসনের ভালো অবস্থানে থাকবে।

তাছাড়াও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য অনুসারে, যেহেতু কংগ্রেস থেকে ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম এবং রাজ্যে সম্প্রতি সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস কর্মীরা শাসকদলের ব্যাপক আক্রমণের শিকার হয়েছে তাই রাজ্যের শাসক দলের সাথে কোনোরকম বোঝাপড়া করতে গেলে দেশের প্রাচীনতম দলের ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রসঙ্গে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গই তৃণমূলের একমাত্র শক্ত ঘাঁটি, তাই তৃণমূল চাইবে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৪০টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। কংগ্রেসকে দুটির বেশি আসন ছাড়তে রাজী হবেনা তৃণমূল, আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে যা কোনোভাবেই কংগ্রেসের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না।

- With inputs from IANS

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in