
গত এক বছরে ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্য বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। ওয়াশিংটন ভিত্তিক এক সমীক্ষা সংস্থার পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে ২০২৩-এর অনুপাতে ২০২৪ সালে ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্য (Hate Speech) বেড়েছে ৭৪ শতাংশ।
সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ সালে ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ৬৬৮ টি ঘৃণাসূচক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে এই ধরণের ১১৬৫টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় মিছিল, প্রতিবাদ মিছিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচন ছিল। যা ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে ৭ দফায় অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়েই এই ধরণের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বিশেষ করে ১৬ মার্চ থেকে ১ জুনের মধ্যে এই ধরণের ঘৃণাসূচক বক্তব্য সবথেকে বেশি দেওয়া হয়েছে।
যদিও সমীক্ষা সংস্থার এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন-এর ভারতীয় দূতাবাস থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সংস্থা ভারতের বিরুদ্ধে একপেশে মতামত পেশ করে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছেন ঘৃণাসূচক ভাষণের ৮০ শতাংশই করা হয়েছে বিজেপি শাসিত অথবা বিজেপি সহযোগীদের শাসিত রাজ্যে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ (২৪২), মহারাষ্ট্র (২১০) এবং মধ্যপ্রদেশে (৯৮) সবথেকে বেশি ঘৃণাসূচক বক্তব্য রাখা হয়েছে। যা ২০২৪ সালে দেওয়া মোট ঘৃণাসূচক বক্তব্যের ৪৭ শতাংশ।
সমীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে তিনি মুসলিমদের "অনুপ্রবেশকারী" হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস জয়ী হলে জাতির সমস্ত সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করে দেবে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রসংঘের ঘৃণাসূচক বক্তব্যের সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে। যে সংজ্ঞা অনুসারে, ধর্ম, জাতিগত অবস্থান, জাতীয়তা, জাতি বা লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বা বৈষম্যমূলক ভাষা প্রয়োগ।
রিপোর্ট অনুসারে প্রায় ৪৫০টি ঘৃণাসূচক বক্তব্য রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যার মধ্যে কমপক্ষে ৬৩ বার এই ধরণের বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে নির্বাচনের সময় বিজেপির সিনিয়র নেতৃত্ব ২৬৬টি "সংখ্যালঘু-বিরোধী ঘৃণাসূচক বক্তৃতা" একই সাথে ইউটিউব, ফেসবুক এবং এক্স-এ দল এবং দলীয় নেতাদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ অর্গানাইজড হেট (CSOH) এর অংশ, যা একটি অলাভজনক সংস্থা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন