
বৃহস্পতিবার আমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকলো দেশবাসী। যেখানে বিমানকর্মী-সহ মৃত্যু হয়েছে ২৪১ জনের। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন একজন যাত্রী। এই মৃতের তালিকায় রয়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। লন্ডনে মেয়ের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে গুজরাট পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১:৩৯ মিনিটে রানওয়ে ২৩ থেকে উড়ান শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফ্লাইট AI-171 আহমেদাবাদের মেঘানীনগর আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে। বোয়িং ৭৮৭ মডেলের VT-ANB রেজিস্ট্রেশনধারী এই যাত্রীবাহী বিমানে মোট ২৩০ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানে ছিলেন ১০ জন ক্রু সদস্য এবং দু’জন পাইলটও। এছাড়া ওই বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান যাত্রী ছিলেন।
শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে বিমান দুর্ঘটনায় জীবিত ওই একজন যাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দুর্ঘটনার পরেই পর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি পরিচালনায় কেন্দ্র সরকারের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
এর আগেও ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনের।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল দৌলত সিং, লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিং, এভিএম ইডব্লিউ পিন্টো (১৯৬৩) -
১৯৬৩ সালের ২৩ নভেম্বর পুঞ্চ বিমান দুর্ঘটনায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল দৌলত সিং, লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিং এবং এয়ার ভাইস মার্শাল ইডব্লিউ পিন্টো সহ ছয়জন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তার মৃত্যু হয়। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাটি পরিদর্শন ফ্লাইটের সময় ঘটে।
হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা (১৯৬৬) -
১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার ১০১ বিমানে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন ভারতের পারমাণবিক পদার্থবিদ হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা। জেনেভা বিমান নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে ভুল যোগাযোগের কারণে বিমানটি সুইস আল্পসের মন্ট ব্ল্যাঙ্কে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
সুরেন্দ্র মোহন কুমারমঙ্গলম (১৯৭৩) -
১৯৭৩ সালের ৩১ মে দিল্লিতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৪৪০ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ সুরেন্দ্র মোহন কুমারমঙ্গলম মারা যান। পার্কার পেন এবং শ্রবণযন্ত্রের সাহায্যে তাঁকে চেনা গিয়েছিল।
সঞ্জয় গান্ধী (১৯৮০) -
ভারতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র তথা কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী ১৯৮০ সালে ২৩ জুন মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। সফদরজং বিমানবন্দরের কাছে দিল্লি ফ্লাইং ক্লাবের একটি বিমানে আকাশে স্টান্ট করার চেষ্টা করার সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
মাধবরাও সিন্ধিয়া (২০০১) -
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়া ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কানপুরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১০ আসনের ওই বেসরকারি বিমানটি উত্তর প্রদেশের মণিপুরীর কাছে খারাপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে। যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
জিএমসি বালাযোগী (২০০২) -
লোকসভার ১২তম স্পিকার ছিলেন জিএমসি বালাযোগী। ২০০২ সালের ৩ মার্চ অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলায় বেল ২০৬ হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। হেলিকপ্টারে তিনি ছিলেন এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
কে এস সৌম্য ওরফে সৌন্দর্য (২০০৪) -
দক্ষিণী অভিনেত্রী সৌন্দর্য ২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। 'সূর্যবংশম' খ্যাত অভিনেত্রী ভাইয়ের সাথে বেঙ্গালুরু থেকে করিমনগর যাচ্ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় তেলেগু, কন্নড়, তামিল, মালায়ালাম চলচ্চিত্রজগতে নেমে আসে শোকের ছায়া।
ওপি জিন্দাল এবং সুরেন্দ্র সিং (২০০৫) -
২০০৫ সালের মার্চ মাসে শিল্পপতি তথা হরিয়ানার বিদ্যুৎমন্ত্রী ওপি জিন্দাল এবং কৃষিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিং একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাদের কিং কোবরা হেলিকপ্টারটি দিল্লি থেকে চণ্ডীগড় যাওয়ার পথে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি (২০০৯) -
২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ঘন নাল্লামালা জঙ্গলে তাঁর বেল ৪৩০ হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ হয়। পরে জানা যায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। হেলিকপ্টারে থাকা রেড্ডি সহ পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
দর্জি খান্ডু (২০১১) -
অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দর্জি খান্ডুর ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। স্থল নিয়ন্ত্রণের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পাঁচদিন পর তাওয়াংয়ে ধ্বংসাবশেষটি পাওয়া যায়।
সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত (২০২১) -
ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান। ঘটনাটি ঘটে তামিলনাড়ুর কুনুরের কাছে। প্রতিরক্ষা প্রধান, তাঁর স্ত্রী এবং আরও ১১ জনকে নিয়ে সুলুর থেকে ওয়েলিংটন যাচ্ছিল বিমানটি।
বিজয় রূপানি (২০২৫) -
২০২৫ সালের ১২ জুন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি আহমেদাবাদে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। বিমানে থাকা আরও ২৪০ জনও প্রাণ হারান এই দুর্ঘটনায়। বিমানটি লোকালয়ে ভেঙে পড়ায় বহু স্থানীয় মানুষেরও মৃত্যু হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন