আলোর পথযাত্রী এক ইঞ্জিনিয়ার! তেলাঙ্গানায় চক্ষুদানের অঙ্গীকার করল গোটা গ্রাম, আগেই পথ দেখিয়েছে কেরল

People's Reporter: মণ্ডলা রবিন্দর রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার। নিজের মাকে দিয়েই এই মহান অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর মায়ের চক্ষুদান করেছিলেন রবিন্দর।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

জন্মালেই মরিতে হবে, অমর কে কোথা হবে! প্রকৃতির নিয়মে মানবজীবন পার করে দেহ শেষ হবে চিতায় বা কবরে। এইভাবে কি একেবারে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা মানুষের? ছাই হয়ে বা পচে গলে? নাকি ছাই হয়ে যাওয়া নশ্বর দেহ নিজের চোখ দিয়ে কী আলো জ্বেলে যেতে পারে না সন্ধানী চোখে?

এর উত্তর দিল তেলেঙ্গানার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। গোটা গ্রামই অঙ্গদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তেলেঙ্গানার হনুমানকোণ্ডার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম মুচরেলা। বাসিন্দা ৫০০। গোটা গ্রাম মৃত্যুর পর সকলেই চক্ষুদানের অঙ্গীকার নিয়েছেন। আর গ্রামবাসীদের এই পথ দেখিয়েছেন গ্রামেরই এক ইঞ্জিনিয়ার মণ্ডলা রবিন্দর।  

মরণোত্তর অঙ্গদান না দেহদান। অর্থাৎ মৃত্যুর পর ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে মৃতদেহ থেকে সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করতে হয়। মৃতের শরীর থেকে লিভার, চোখের কর্নিয়া, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং কিনডি – মূলত এই পাঁচটি প্রত্যঙ্গ এবং ১৪ টি কলা সংগ্রহ করে অন্য শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়। যদিও দেশে এখনও সেভাবে সচেতনা গড়ে ওঠে নি মানুষের মধ্যে। তবুও কিছু শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা এসেছে। যদিও সেই পরিসংখ্যানটা খুবই নগণ্য।

এই সামান্য কিছু পরিসংখ্যানের মধ্যে মণ্ডলা রবিন্দর। যিনি রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার। নিজের মাকে দিয়েই এই মহান অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর মায়ের চক্ষুদান করেছিলেন রবিন্দর। এক সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, মৃত্যুর পর অঙ্গদান করা উচিত। আমি নিজের অঙ্গদান করার অঙ্গীকার করেছি। ২০১৯ সালে বাবার মৃত্যুর পরেও তাঁর অঙ্গদান করেছি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অন্যদের এই বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়েছি। তাঁদের সচেতন করার কাজ চালিয়ে গিয়েছি। আর তারই সুফল পেলাম। গ্রামবাসীদের সকলেই এখন চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন”।

রবিন্দরের দৃঢ় বিশ্বাস, মুচরেলা গ্রামই গোটা দেশজুড়ে অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আরও উৎসাহ জোগাবে। তিনি নিজেও এই কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে গোটা গ্রামবাসীদের মধ্যে অঙ্গদান নিয়ে সচেতনা বৃদ্ধির কাজটা এতটাও সহজ ছিল না বলেই জানিয়েছেন রবিন্দর। তাঁর কথায়, প্রথমে অঙ্গদানের বিষয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা কিন্তু-কিন্তু ভাব এবং সন্দেহ ছিল। এক দশকেরও বেশি সময় লেগে গেছে এই সন্দেহ কাটাতে।

রবিন্দর জানান, গত কয়েক বছরে ৭০ জন চক্ষুদানের অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তবে গোটা গ্রাম চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য এবং অভূতপূর্ব। রবিন্দরের কথায়, “মানুষের মধ্যে অঙ্গদান নিয়ে যে সচেতনতা বাড়ছে, আমাদের মুচরেলা গ্রামই তার এক দৃষ্টান্ত”।

অন্যদিকে, মুচরেলা গ্রামের পাশাপাশি পড়শি গ্রামের লোকজনও অঙ্গদান নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছেন। তাঁরাও এগিয়ে আসছেন। রবিন্দর জানিয়েছেন, এইভাবেই অঙ্গদান নিয়ে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।

তবে মুচরেলাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৩ সালে অঙ্গদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল কেরালার আলাপ্পুঝার ভেলিয়াম্বর গ্রাম। সেসময় সেই গ্রামের ৩০০ পরিবার অঙ্গদানে অঙ্গীকার দেখিয়েছিলেন।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in