I-N-D-I-A: তিন রাজ্যে পরাজয়ের পর ইন্ডিয়া মঞ্চে কংগ্রেসের আধিপত্য বজায় থাকবে তো?

People's Reporter: সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে ইতিমধ্যেই সুর কেটেছে। মধ্যপ্রদেশে ২৩০টি আসনের মধ্যে মাত্র ছটি চেয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু কংগ্রেস তা দিতে অস্বীকার করে।
মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধী
মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধীফাইল ছবি
Published on

হিন্দি বলয় যে আপাতত বিজেপিতেই মজে, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে বিজেপিই রাজত্ব করবে, রবিবার প্রকাশিত চার রাজ্যের ফলাফলে তা স্পষ্ট। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিসগড় – তিন রাজ্যেই সরকার গড়তে চলেছে গেরুয়া শিবির। কংগ্রেসের মান রক্ষা হয়েছে একমাত্র তেলেঙ্গানায়। যদিও এই নির্বাচনী ফলাফলের সঙ্গেই প্রশ্ন উঠে গেছে হিন্দি বলয় থেকে কার্যত মুছে গিয়ে শুধুমাত্র দক্ষিণের এক রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে ইন্ডিয়া মঞ্চে কংগ্রেস নেতৃত্ব কতটা নিরঙ্কুশ তা নিয়েও?

রাজস্থান এবং ছত্তিসগড়ে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ ফল করতে পারেনি কংগ্রেস। অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশে আরও আসন বাড়িয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। কেবলমাত্র দক্ষিণের রাজ্য তেলেঙ্গানায় আঞ্চলিক দল বিআরএস-কে হারাতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। এই পরাজয়ের ময়নাতদন্ত যতই হোক না কেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই ফলাফলের প্রভাব পড়তে বাধ্য বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না।

কিছুদিন আগেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে এক ছাতার নীচে এসে ‘ইন্ডিয়া’ নামক মঞ্চ তৈরি করেছে ২৬টি বিরোধী দল। এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনটি বৈঠক করেছে এই মঞ্চ। বৈঠকগুলিতে অন্যান্য দলগুলি যখন লোকসভা নির্বাচনের জন্য আসন ভাগাভাগির উপর জোর দিচ্ছিল, তখন মঞ্চের প্রধান মুখ হিসেবে কংগ্রেস এই দাবির পক্ষে ছিল না। কংগ্রেসের মত ছিল, এখনই এই নিয়ে আলোচনা করার সময় হয়নি।

কংগ্রেসের এই অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিরোধী শিবিরের অন্যতম আহ্বায়ক জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমার। গত মাসে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছিলেন, “আমরা সকলে মিলে সহমত হয়েই কংগ্রেসকে ইন্ডিয়া জোটের গাড়িতে চালকের আসনে বসিয়েছিলাম। আমরা ক্রমাগত কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলে আমাদের আসল লক্ষ্য জোটের গঠন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তারা বারবারই ওই বিষয় এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই তাঁদের দিক থেকে জোট এখনও সেভাবে তৈরি নয়। আমার মতে, তারা পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বেশি চিন্তিত।”

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন ভাগাভাগির জন্য চার রাজ্যে ফল ঘোষণার অপেক্ষা করছিল কংগ্রেস। চার রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ভাল লড়াই দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বড়রকম দর কষাকষির পরিকল্পনা ছিল দলটির।

কিন্তু চার রাজ্যের মধ্যে তিন রাজ্যেই ব্যাপক ভরাডুবির জেরে এই মুহূর্তে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল কংগ্রেস। রবিবারই ফল প্রকাশের দিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইন্ডিয়া শিবিরের পরবর্তী বৈঠকের দিন তড়িঘড়ি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে হবে সেই বৈঠক। এই বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হলেও, সবথেকে বড় দল এবং প্রধান বিরোধী হিসেবে মুখ্য দর কষাকষির জায়গা কংগ্রেস কতটা ধরে রাখতে পারবে সেটাই এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।     

চার রাজ্যের ফলাফলের জেরে হিন্দি বলয়ে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে মঞ্চের অন্দরে। মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে ইতিমধ্যেই সুর কেটেছে। ২৩০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬টি আসন চেয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু কংগ্রেস তা দিতে অস্বীকার করে। কার্যত মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা কমলনাথ সমাজবাদী পার্টির সেই আবেদনে কোনও গুরুত্বই দেননি। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব তখনই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই ‘অপমানের’ জবাব তিনি দেবেন। এরপরেই ৬৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে কংগ্রেসের ভোটে অনেকটাই থাবা বসিয়েছেন অখিলেশ। নির্বাচনী ফলাফল অনুসারে উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া মধ্যপ্রদেশের একাধিক আসনে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী দেওয়া।

শুধু সমাজবাদী পার্টিই নয়, চারটি রাজ্যেই সিপিআইএম, জেডি(ইউ), আম আ্দমি পার্টির মতো একাধিক ইন্ডিয়া শরিক আলাদা আলাদা ভাবে কোনও সমঝোতা ছাড়াই লড়েছে। যার প্রভাব অবশ্যই পড়েছে নির্বাচনী ফলাফলে। নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের হারের পিছনে জোট শরিকদের জায়গা না দেওয়াও অন্যতম একটি কারণ। যদিও তেলেঙ্গানায় সিপিআই-কে একটি আসন ছেড়েছিল কংগ্রেস এবং সেই আসনে জয়ী হয়েছে সিপিআই।

এই প্রসঙ্গে সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা জানিয়েছেন, “এটি সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দলের জন্য একটি শিক্ষা। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ঐক্য অপরিহার্য। আমাদের অবশ্যই উন্নয়ন থেকে সঠিক শিক্ষা নিতে হবে।“

ইন্ডিয়া মঞ্চের ভবিষ্যৎ কী হবে তা জানা যাবে আগামী দিনেই। এই ফলাফলের পর কিছু ছোটো দল ইন্ডিয়া মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেও খুব আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ বিজেপির কাছে এই বিপুল পরাজয়ের পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ইন্ডিয়া মঞ্চে আসন বন্টন অথবা অন্যান্য বিষয়ে কংগ্রেসের একাধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য এবং সেক্ষেত্রে সংঘাত অনিবার্য। ইন্ডিয়া মঞ্চে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অন্য কোনও দল মুখ খুলবে না এরকম কোনও নিশ্চয়তা নেই।

আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী মঞ্চ যদি আরও শতধাবিভক্ত হয়ে পড়ে তাতে লাভ বিজেপির। কারণ বিজেপির মত সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে ছত্রভঙ্গ বিরোধীরা আগামী লোকসভা নির্বাচনে খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না। বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি যত বাড়বে ততই তার সুফল পাবে বিজেপি।

মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধী
Rajasthan: বসুন্ধরা, দিয়া কুমারী, শেখাওয়াত, ভাসছে একাধিক নাম - রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে?
মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধী
MP Polls: ইন্ডিয়া মঞ্চকে অস্বীকার, অতিরিক্ত কমলনাথ নির্ভরতায় ভরাডুবি কংগ্রেসের - মত রাজনৈতিক মহলের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in