OMR শিট নষ্ট, সই জাল - SSC দুর্নীতিতে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভুয়ো মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওএমআর শিট নষ্ট, তথ্য লোপাট, সই জাল করা হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় ওঠা দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছে হাইকোর্টের গঠিত কমিটি।
অনশন করছেন চাকরি প্রার্থীরা
অনশন করছেন চাকরি প্রার্থীরাফাইল ছবি

গোড়াতেই গলদ বোধহয় একেই বলে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরি প্রার্থীরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেছেন। আদালতে এই সংক্রান্ত বহু মামলা হয়েছে। দুর্নীতির শিকড় যে কতটা গভীরে, তা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু এবার তা আদালতের সামনে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এসএসসিতে ভুয়ো মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওএমআর শিট নষ্ট, তথ্য লোপাট, সই জাল করা হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় ওঠা দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছে হাইকোর্টের গঠিত কমিটি।

স্কুলে গ্ৰুপ-ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। কিন্তু বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ স্থগিত করে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির বাকি সদস্যেরা হলেন আশুতোষ ঘোষ (পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সদস্য), পারমিতা রায় (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি) এবং অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় (হাই কোর্টের আইনজীবী)। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে, শিক্ষা দফতরের এই কর্মীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খুবই অভিজ্ঞ। পাশাপাশি তাদের ভাবমূর্তিও দফতরে যথেষ্ট স্বচ্ছ।

সোমবার ওই কমিটি হাইকোর্টে ৬৯ পাতার যে রিপোর্ট জমা দেয়, তাতে জানানো হয়, ৬০৯ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ধরনের নিয়োগে সম্পূর্ণ প্যানেল বা মেধাতালিকা প্রকাশ করত না এসএসসি। ২০১৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে নম্বর-সহ সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় কমিশন। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট বলছে ওই তালিকা ভুয়ো ছিল। নিজেদের পছন্দ মতো নাম ঢুকিয়ে তালিকা তৈরি করেছিল এসএসসি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে সেই তালিকা সুপারিশ করে এসএসসি। তার ভিত্তিতেই নিয়োগপত্র মেলে।

এদিকে বহু পরীক্ষার্থী আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে আরটিআই করেন। তার প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পরিষ্কার হয়। তাতে ভুলবশত এসএসসি-র অফিস থেকে ভুয়োর পরিবর্তে আসল প্যানেল দিয়ে দেওয়া হয়। আরও একটি বড় ভুল রয়েছে এসএসসির। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বছর এসএসসি সাধারণ স্বাক্ষর তুলে দেয়। চালু করে ডিজিটাল স্বাক্ষর। তার পিছনে পর্ষদের মদতও ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এসএসসি-র পাঁচটি আঞ্চলিক অফিস থেকে কৃতী পরীক্ষার্থীদের নাম সুপারিশ করা হয়। তারপর তাতে সিলমোহর দেয় প্রধান অফিস। কিন্তু এই নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রকৃত প্রাপকরা বঞ্চিত হয়েছেন। আঞ্চলিক অফিস থেকে সঠিক নাম এলেও, মূল অফিসে এসে তা বদলে গিয়েছে। এমনটাই জানতে পেরেছেন কমিটির সদস্যরা। সুপারিশপত্রে আঞ্চলিক অফিসের চেয়ারম্যানদের সই জাল করে এই কাজ করা হয়েছে।

আরও একটি আশঙ্কা করছে তদন্ত কমিটি। তারা মনে করছে, যে ওএমআর শিটে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তার একটা বড় সংখ্যার কোনও অস্তিত্ব নেই। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, নয়তো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নেই কম্পিউটারের নথিও। পরীক্ষাপদ্ধতি স্বচ্ছ করতেই ওএমআর শিটে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ ওই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলে কম্পিউটারের মাধ্যমে তাতে নম্বর দেওয়া হয়। ফলে প্রশ্নপত্রে কারসাজির সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু সেখানে গরমিল ধরা পড়েছে তাদের চোখে।

প্রসঙ্গত, মামলাকারীদের অনেকেই সিবিআইয়ের বদলে এই কমিটির অনুসন্ধানের উপর ভরসা করতে পারেননি। কিন্তু এই কমিটিই প্রথম এই মামলায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম তুলে এনেছে।

অনশন করছেন চাকরি প্রার্থীরা
সরকারের লজ্জাশরম কিছু নেই, দোকান খুলে চাকরি বিক্রি করছে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নিজে জড়িত - সেলিম

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in