মা-কে তাঁর সন্তান এবং কেরিয়ারের মধ্যে যে কোনও একটিকে বাছতে বলা যাবে না: বোম্বে হাইকোর্ট

পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ওই মহিলা সম্প্রতি তিনি বিদেশে একটি চাকরীর সুযোগ পেয়েছেন। নিজের ৯ বছরের কন্যাসন্তানকে সাথে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। মহিলার স্বামী তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
বোম্বে হাইকোর্ট
বোম্বে হাইকোর্টছবি সৌজন্যে Live Law
Published on

কেরিয়ার নাকি সন্তান! একজন মায়ের কাছে এই প্রশ্ন বড্ড জটিল। এই সঙ্ক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে যুগান্তকারী রায় দিল বোম্বে হাইকোর্ট। একজন মাকে তাঁর সন্তান এবং কেরিয়ারের মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নিতে কখনও বলা যাবে না, এমনটাই মন্তব্য হাইকোর্টের।

মুম্বাইয়ের এক মহিলা পোল্যান্ডের একটি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরীর প্রস্তাব পেয়েছিলেন। নিজের ৯ বছরের কন্যাসন্তানকে সাথে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। মহিলার স্বামী তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। জল গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। বোম্বে হাইকোর্ট ওই মহিলাকে তাঁর নাবালিকা মেয়েকে নিয়েই পোল্যান্ডে চাকরি করতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।

সূত্রের খবর, পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ওই মহিলা ২০১৫ সাল থেকে তাঁর সন্তানকে সাথে নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস করছেন। সম্প্রতি তিনি বিদেশে একটি চাকরীর সুযোগ পেয়েছেন। এরপরই মতানৈক্য দেখা দিয়েছে তাঁর স্বামীর সাথে। স্বামী তাঁর সন্তানকে ছাড়তে চান না, এদিকে মহিলা তাঁর সন্তানকে পোল্যান্ডে নিয়ে যেতে চান। এই ঘটনার পরই মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। বোম্বে হাইকোর্ট পিতাকে নো অবজেকশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের কথায়, মায়েরও সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।

এই মামলায় বোম্বে হাইকোর্টে বলেছে, ‘শিশুকন্যার বয়স যা তাতে তার মায়ের সঙ্গেই থাকাই উচিত। আর সন্তানের জন্য মায়ের চাকরির সুযোগ প্রত্যাখ্যান করাও অনুচিত।' হাইকোর্ট আরও বলেছে, "মায়ের সঙ্গে তাঁর শিশুকন্যা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তিনিই তার অভিভাবক। আজকাল অনেক মহিলাই স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা সন্তান মানুষ করছেন।"

বিচারপতি ভারতী ডাংরে শুনানিতে বলেছেন, "সন্তানের বড় হওয়ার সময় বাবা ও মা উভয়ের উপস্থিতি প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পিতামাতার মধ্যে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে এবং শিশুটি বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই মায়ের সাথে থাকে, তাই এক্ষেত্রে পিতাকে সন্তানের সাথে সময় কাটানোর জন্য একটি সীমিত সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আবেদনকারী অর্থাৎ শিশুটির মা শিশুটির জন্মের পর থেকে অবিচ্ছিন্নভাবে তার সাথে রয়েছেন এবং একজন কর্মজীবী মহিলা হলেও, নিজের কাজ এবং সন্তানের যত্ন নেওয়া দুইই একা হাতে সুপরিকল্পিতভাবে সামলেছেন।”

উল্লেখ্য, বাবার সাথেও বাচ্চা মেয়েটির ভাল সম্পর্ক রয়েছে। বাবার তরফের অ্যাডভোকেট আজিঙ্কা উদানে জানিয়েছেন, মেয়ে বিদেশ চলে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যন্ত্রণা পেতে হবে তাঁর বাবাকে। নিজের মেয়ের সাথে দেখা করারও সুযোগ থাকবে না বাবার। তাই তাঁরা এখন বোম্বে হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার কথা ভাবছেন।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in