
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার পর গত কাল ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে শিক্ষার্থীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। শিক্ষক-অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরাও দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে পেরে বেশ আনন্দিত।
বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনে সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন এমন দৃশ্যও দেখা গেছে। কোথাও বা শিক্ষার্থীদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করানো হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও এখনও রয়েছে কিছু শঙ্কা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের শিক্ষা-কার্যক্রম পরিদর্শন ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী না এসব দেখভালের জন্য টিম গঠন করে নজরদারি করা হচ্ছে। কোথাও অনিয়ম কিম্বা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনেই রাজধানী ঢাকার আজিমপুরে এক স্কুলের শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার থাকায় উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও কোথাও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না, শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয়েও কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল আশাব্যঞ্জক। মাউশির দৈনিক হিসেব বলছে সারাদেশের সব বিদ্যালয়ে ৮০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রথম দিনেই ক্লাসে উপস্থিত ছিলো। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু প্রতিকূলতার জন্য শিক্ষার্থী উপস্থিত কম ছিল।
অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার জল প্রবেশ করায় এবং এখনও বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে জল থাকায় সেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। একই কারণে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও সিলেটের বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যার কারণে স্কুল খোলা সম্ভব হয়নি।
তবে সারাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার লক্ষ করা গেছে। কারণ করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাল্যবিবাহ, শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝরে পড়া, শিশুশ্রম, হতাশা, মাদকাসক্ততা ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা বাড়ছিল।
গত দেড় বছরে প্রায় দু'শ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্যবিবাহ বেড়েছে ভয়ংকর আকারে। সাতক্ষীরারা এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬৬ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এরকম ঘটনা সারাদেশেই ঘটেছে। যার ফলে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক সবাই উচ্ছ্বসিত।
অন্যদিকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে বৃহত্তর ছাত্র সমাজের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও এখনও তা করা হচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে আবাসিক হল বন্ধ করে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন