Bangladesh: চট্টগ্রামে রপ্তানি কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন: নিহত অর্ধশত, আহত ৪ শতাধিক

বাংলাদেশে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিট) প্রায় অর্ধশত প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ভয়াবহ আগুন
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ভয়াবহ আগুন ছবি - জি কে সাদিক

বাংলাদেশে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিট) প্রায় অর্ধশত প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ৪ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ছয়জন কর্মী রয়েছেন জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

গতকাল শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ রপ্তানির জন্য মজুত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আগুন লাগার পর থেকে একের পর এক রাসায়নিক পদার্থ থাকা কনটেইনারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন জানান, কনটেইনারগুলো কেমিক্যালে পূর্ণ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লাগছে। আর এ কারণেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কন্টেইনার ডিপোটিতে আগুন লাগে। ডিপোটিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কন্টেইনার ছিল। রাত বাড়ার সাথে সাথে এ আগুনের ঘটনার ভয়াবহতা বাড়ে। তবে এখন আগুনের মাত্রা কমে আসলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তিনি আজ দুপুর ১২টার দিকে সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

উদ্ধারকাজে দমকল বাহিনি ও সেনাবাহিনি
উদ্ধারকাজে দমকল বাহিনি ও সেনাবাহিনিছবি - জি কে সাদিক

উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর বিশেষ দল

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল যোগ দিয়েছে তাদের সাথে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার এবং নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে কাজ করছে এ দলটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সাথে মিলিটারি পুলিশও সহায়তা করছে। এছাড়া গতকাল রাত থেকে বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল ও সিএমএইচ-এ স্থানান্তরে সেনাবাহিনী অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা করছে। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৪ জন সদস্যসহ চট্টগ্রাম সিএমএইচে ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিপুল রাসায়নিক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও ডিপোর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।

বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ঘটনাস্থলে আসা লোকজন চোখ খুলতে পারছেন না। বেশির ভাগ সদস্যের চোখ লাল হয়ে গেছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের।

বাসাবাড়ির টেলিভিশন-ফ্রিজ নষ্ট

গতকাল সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে যে ডিপোতে আগুন লেগেছে তা মূল শহরের বাইরে। তবে আশপাশে জনবসতি হয়েছে। বড় ভবন কম। নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। গতকাল বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে অনেকের ঘরের জানালার কাঁচ, দরজা ভেঙে গেছে। বেশির ভাগ বাসার টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট হয়ে গেছে। ডিপোর আশপাশে টিনের ছাউনির ঘর বেশি। দুপুর ১টা নাগাদ সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা কালো ও বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ঘরে টিকতে পারছেন না। অনেককেই মুখে কাপড় বেঁধে বসে থাকতে দেখা গেছে।

মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে যায়নি

আজ দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি। মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, তা জানতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ কারণে তারা উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কনটেইনার ডিপোটির মালিকপক্ষের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। জল দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

বাংলাদেশের আগুন উদ্ধারকারী দল
বাংলাদেশের আগুন উদ্ধারকারী দল ছবি - জি কে সাদিক

ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে রোগী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩ জন ভর্তি আছেন। আরও দুজনকে ভর্তি করার জন্য আনা হচ্ছে।

আজ ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, তারা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। আগামীকাল সোমবার সকালে তাঁর নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রাম যাবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে আপাতত কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোক বার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতা কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তদন্ত চান সংসদ সদস্য

সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে রাসায়নিক ডিপো করা হয়েছে, তা তদন্ত করা উচিত। আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে দিদারুল আলম এসব কথা বলেন।

এত বড় দুর্ঘটনা আর ঘটেনি

আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২৪ বছর আগে চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপো শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রামে এ শিল্পের যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম কোনো কনটেইনার ডিপোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ূম খান আজ সংবাদমাধ্যমে বলেন, এই শিল্পের যাত্রা শুরুর ২৪ বছরে এত বড় দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। এর আগে ডিপোতে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে খুব দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল।

নিহতের পরিবার পাবে ২ লাখ টাকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোয় আগুনে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা কের দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

আজ রোববার (০৫ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ ও আহতদের (প্রত্যেক) চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in