
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশের দুই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল গুজরাত মডেল নিয়ে। সেই সময় অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভাগবতী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন। আর অমর্ত্য সেন এর বিরোধিতা করেছিলেন। অমর্ত্য সেনের মত ছিল, সামাজিক খাতে খরচের বরাদ্দ না বাড়ালে কখনই অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়। ভগবতীর দাবি ছিল, সরকারের উচিত নয় সেদিকে নজর দেওয়া। মহামারীর আবহে অক্সিজেন ঘাটতি অমর্ত্য সেনের দাবিকেই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। দু'পক্ষের মধ্যে যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক হয়েছিল সেই সময়।
কিন্তু, অমর্ত্য সেনের একটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছিল না। তাঁর প্রশ্ন ছিল, এমন কোনও দেশ রয়েছে যেখানে সুস্বাস্থ্য ও ভালো শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব হয়েছে? উত্তর ছিল, না। এমন কোনও দেশ নেই যেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব। শিল্পপতিরা কখনই এইসব কাজ করে দেশের উন্নতি সাধন করতে পারেন না। রাজ্য ও সরকারের উচিত প্রাথমিকভাবে এই দায়িত্বগুলো পালন করার।
গুজরাত মডেলে শিল্পপতিদের ভর্তুকি দিয়ে তাদের ব্যবসায় উন্নতি, শ্রমিক সংগঠন থেকে স্বাধীনতা কেড়ে ও শিল্প মেলা আয়োজনের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু অমর্ত্য সেনের মডেলের মতে, সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমেই অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। অর্থনীতিতে তেমন শক্তিশালী না হয়েও এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। এর অন্যতম প্রমাণ হল কিউবা। কোনও তৃতীয় বিশ্বের দেশই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন করতেই পারেনা।
আর সেই কারণেই আজ যখন কোভিড বৈঠকের আলাপচারিতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জনসমক্ষে নিয়ে আসেন, তখন নিয়ম ভাঙার কথা বলে তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয়। বিষয়টি নিয়ম ভাঙার জন্য নয়, আসল ব্যাপার হল, দেশবাসীর সামনে আসল সত্যিটা প্রকাশ হয়ে যাওয়া। এই মুহূর্তে দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সরকারের এভাবে পালিয়ে বেরানো কখনই শোভা পায় না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন