১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, বেলা ১.০৫, ১৯২৯। দীর্ঘ ৬৩ দিন অনশনের পর যে মানুষটির জীবনদীপ আজ থেকে ৯১ বছর আগে নিভে গেছিলো তিনি বিপ্লবী যতীন্দ্র নাথ দাস। মাত্র ২৪ বছরের জীবন হলেও সে জীবন ছিলো অন্য ধাতুতে গড়া। যার মূলমন্ত্রই ছিলো ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই। দেশের স্বাধীনতা।
১৯০৪-এর ২৭ অক্টোবর এই কলকাতার বুকেই জন্ম বীর বিপ্লবী যতীন্দ্র নাথ দাসের। ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর বঙ্কিমবিহারী দাস এবং সুহাসিনী দেবীর সন্তান যতীন্দ্রনাথ নাম লেখান কংগ্রেসে। সরাসরি যোগ দেন অসহযোগ আন্দোলনে।
জীবনে প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯২১। এরপরের গ্রেপ্তারি ১৯২৩। ততদিনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যালের। অসহযোগ আন্দোলনের পথ থেকে তিনি ক্রমশ সরে আসছেন সশস্ত্র বিপ্লবের পথে। ১৯২৪-এ ফের গ্রেপ্তারি। এবার তাঁকে পাঠানো হল ময়মনসিংহের জেলে। সেখানে রাজবন্দীদের ওপর জেলকর্মীদের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করে শুরু করেন অনশন। ২০ দিন অনশনের পর জেল কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চান।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ড থেমে ছিলো না যতীন্দ্রনাথের। যোগাযোগ হয়েছে ভগত সিং-এর সঙ্গেও। ১৯২০র ১৪ জুন কলকাতার ডোভার রোডের বাড়ি থেকে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় আবারও গ্রেপ্তার হন যতীন দাস। পুলিশ অফিসার স্যান্ডারস হত্যা এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরও কয়েকজন বিপ্লবী। এবার তাঁকে পাঠানো হয় লাহোর জেলে। এই জেলে থাকাকালীন রাজনৈতিক বন্দীর মর্যাদা এবং অন্যান্য মানবিক সুযোগ সুবিধার দাবীতে ১৩ জুলাই থেকে অনশন শুরু করেন। বারবার তাঁর অনশন ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। অনশনরত অবস্থাতেই ১৯২৯-এর ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো বাংলা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ থামিয়ে দিয়েছিলেন নাটকের মহড়া। গর্জে উঠেছিলো কাজী নজরুলের কলম। শেষকৃত্যের জন্য কলকাতায় দেহ পৌঁছানোর পর নেতাজী সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল যায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই কলকাতার যতীন দাস পার্ক, যতীন দাস মেট্রো স্টেশন।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।