ফাইল ছবি সংগৃহীত
ফাইল ছবি সংগৃহীত

দিল্লি দাঙ্গায় পুলিশও জড়িত ছিল - দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে যে হিংসা ছড়িয়েছিল তাতে পুলিশও জড়িত ছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ‍্যামনেস্টি ইন্টারন‍্যাশানাল তাদের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও গত ছ'মাসে তার একটিরও তদন্ত করা হয়নি‌। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ।

এই প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানান - "দিল্লির পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে। মন্ত্রী এবিষয়ে অনেক আগেই এতখানি হাত পাকিয়েছেন যে আদালতের নির্দেশে নিজের রাজ্যে ঢুকতে পারছিলেন না!"

দাঙ্গা নিয়ে করা এক রিপোর্টে অ‍্যামনেস্টি ইন্টারন‍্যাশানাল বলেছে, "২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে যে হিংসা ছড়িয়েছিল দিল্লি পুলিশ কর্মীরা সেই কাজের সহযোগী ছিলেন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও গত ছয় মাসে দিল্লি পুলিশ যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা নিয়ে একটিও তদন্ত করা হয়নি।"

রিপোর্টে দিল্লি পুলিশের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে হিংসার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। কেবল সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে অস্বীকার করেছে তারা। এমনকি সাহায্যের জন্য ডাকা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "আজাদি চেয়েছিলেন, এবার আজাদি নিন।"

দাঙ্গার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেই সমস্ত ভিডিও যাচাই করে এবং প্রায় ৫০ জন দাঙ্গা পীড়িত মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই রিপোর্ট বের করেছে অ‍্যামনেস্টি ইন্টারন‍্যাশানাল।

২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপত্তা উপাদেষ্টা হিংসা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে যাওয়ার পরই দাঙ্গা থেমে যায়, সরকারের পক্ষ থেকে করা এই দাবি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অ‍্যামনেস্টি ইন্টারন‍্যাশানাল। রিপোর্টে বাবু খান নামের স্থানীয় একজনের সাক্ষাৎকার দেওয়া হয়েছে, যিনি বলেছেন অজিত দোভাল চলে যাওয়ার পরের দিনই একদল উত্তেজিত জনতা তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর সন্তানদের ব‍্যাপক মারধর করে। তাঁর দুই ছেলেই মারা যায়।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, হিংসা বাড়ার সাথে সাথে বেসরকারি চিকিৎসকদের ক্লিনিক বন্ধ করতে বাধ‍্য করা হয়েছিল। যার কারণে অধিকাংশ আক্রান্তরা চিকিৎসা পাননি। এই সমস‍্যা আরো চরমে পৌঁছায় যখন দাঙ্গাবাজরা রাস্তা অবরোধ করে অ‍্যাম্বুলেন্স প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। পুলিশ এই সমস্ত কিছু আটকাতে ব‍্যর্থ হয়েছে।

এনজিও তাদের রিপোর্টে আরো বলেছে, পুলিশ কাস্টডিতে থাকাকালীন অনেকেই, বেশিরভাগ মুসলমান, পুলিশের নৃশংস অত‍্যাচারের শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে আথার নামে একজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংগঠনটি। আথার জানিয়েছেন, বাড়ি ফেরার সময় পুলিশ তাঁর পথ আটকে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল সে হিন্দু না মুসলমান। মুসলমান বলায় তাঁকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আরো প্রায় ২৫ জন তাঁর মতো লোক ছিল। আথার জানিয়েছেন, "কাস্টডিতে ৪ দিন ধরে অকথ্য অত‍্যাচার করা হয়েছে আমাদের। অত‍্যাচারের সময় 'আজাদি চাই, এই নে আজাদি' - বলে মেরেছে আমাদের। ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে তোলা হয়েছিল আমাদের। আমি দুসপ্তাহ পরে জামিন পেয়েছি।"

যদিও ১১ মার্চ লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, দিল্লিতে হিংসা থামানোর ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ভারতে অ‍্যামনেস্টি ইন্টারন‍্যাশানালের আইনি এবং নীতিগত বিষয়ের প্রধান মিঃ শর্মা একটি সংবাদমাধ্যমে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তদন্তে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র ধরা পড়েছে। পুলিশ ব‍্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।"

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in