বাঙলার 'অগ্নিকন্যা'

মাস্টারদা সূর্য সেন ও কল্পনা দত্ত
মাস্টারদা সূর্য সেন ও কল্পনা দত্ত ফাইল ছবি
Published on

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলে ডেকেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে যার নাড়ীর যোগ, আজন্ম বামপন্থী সেই কল্পনা দত্ত-র আজ জন্মদিন। আজ থেকে ১০৭ বছর আগে ১৯১৩ সালে চট্টগ্রামের শ্রীপুরে তাঁর জন্ম হয়।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কল্পনা দত্ত। ভারতীয় উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ত্ব।

১৯২৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কোলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কলেজ জীবনেই তিনি নানারকম বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। শহীদ ক্ষুদিরাম ও কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি যোগদান করেন ছাত্রী সংঘে।

১৯৩০ সালে তিনি চট্টগাম ফিরে যান এবং পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে মাস্টারদা সূর্য্য সেনের সাথে পরিচিত হয়ে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগদান করেন। সেইসময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো। কিন্তু মাস্টারদা এই নিয়ম শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দারকে দলে গ্রহণ করেন।

কোলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিস্ফোরক নিয়ে আসেন এছাড়া তিনি গান কটনও তৈরি করেছিলেন। সেই সময় চট্টগাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতৃবৃন্দ – গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল বিচারাধীন বন্দী ছিলেন। তাদের সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নেতৃবৃন্দর পালানোর জন্য তিনি কোর্ট এবং জেল ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।

১৯৩১ সালে সূর্য্য সেন কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাকে চট্টগাম ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। কিন্তু তার এক সপ্তাহ আগেই তিনি গ্রেফতার হন। জামিনে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৯৩৩ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। তিনি তখন পালাতে সক্ষম হলেও পরবর্তী কালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

১৯৩৯ সালে মুক্তিলাভের পর তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ল থেকে স্নাতক হন। এরপর ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে cpi নেতা পি সি যোশির সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তিনি এরপর চট্টগাম ফিরে গিয়ে দলের কৃষক ও মহিলা সংগঠনকে চাঙ্গা করেন।

১৯৪৬ সালে cpi প্রার্থী হয়ে চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতে চলে আসেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারী অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in