নোটবাতিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি - কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় ট্যুইটারে ঝড়

ফাইল ছবি সংগৃহীত
ফাইল ছবি সংগৃহীত

নভেম্বর ৮, ২০১৬ থেকে নভেম্বর ৮, ২০১৯। ঠিক ৩ বছর সময় পার করেছে ভারতের নোটবাতিল পর্ব। ১০০০ টাকার এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা ডিমনিটাইজেশন। কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবাতিল ঘোষণার সময় দেশের বাজারে চালু নোটের ৮৬ শতাংশই বাতিল হয়ে গেছিলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন নোটবাতিলের ফলে কালো টাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ আসবে, জাল টাকা বন্ধ হবে এবং সন্ত্রাসবাদীদের কাজকর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসবে।

যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন ঘোষণা এবং বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। দেশে বিগত তিন বছরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেছে এরকম দাবি সরকারের অতি বড় সমর্থকও করবেন না। কালো টাকা বা জাল টাকার প্রসঙ্গেও একই ধরণের কথা বলা যায়। কালো টাকা প্রসঙ্গে নোটবাতিলের সময় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কিছুদিন পরেই নস্যাৎ করে দিয়েছিল খোদ আরবিআই।

এদিন সকাল থেকেই ট্যুইটার মনে করিয়ে দিয়েছে নোটবাতিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। এখনও পর্যন্ত ট্যুইটারে ১ নম্বরে ট্রেন্ড করছে হ্যাসট্যাগ #DemonetisationDisaster । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই হ্যাসট্যাগে ট্যুইট হয়েছে ৬৫.৯ হাজার। এছাড়াও #NotebandiSeMandiTak হ্যাসট্যাগে ট্যুইট হয়েছে ২৭ হাজার। #BlackDay প্রভৃতি হ্যাসট্যাগ-এও বহু সংখ্যক ট্যুইট হয়েছে। #आओ_मोदी_चौराहे_पर হ্যাসট্যাগে ট্যুইট হয়েছে ২৬.২ হাজার।

এদিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ট্যুইট বার্তায় বলা হয়েছে নোটবাতিলের সবথেকে বড় মূল্য চুকিয়েছে দেশের মানুষ। ১০৫ জন সরকারের এই অপরিণত সিদ্ধান্তে প্রাণ হারিয়েছে। আজ এবং প্রতিদিন আমরা সেই পরিবারের পাশে আছি।

“Pink, green, orange, purple, brown all colours money are there but where is that Black money “#JustAsking #DeMonetisationDisaster #Demonetisation pic.twitter.com/SXl0WIUcql— Chandrasekar N (@pingchandru) November 8, 2019

চন্দ্রশেখর এন নামক নেটিজেন বিভিন্ন রঙের নতুন নোটের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন – গোলাপী, সবুজ, কমলা, বেগুনী, বাদামী সব রঙেরই টাকা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কালো টাকা কই?

জনৈক সঙ্ঘমিত্রা তাঁর ট্যুইটে বলেছেন – নোটবাতিলের নামে কালো টাকার নামে মিথ্যে বলে, ছোটো শিল্প শেষ করে প্রায় ৩৫০০ জীবন (হাসপাতাল ধরে) নষ্ট করে ভারতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য সরকারের উচিত ক্ষমা চাওয়া।

নোটবাতিলের পরে বিগত তিন বছরে দেশের অর্থনীতির পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কর্মসংস্থান। লেবার ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৬ থেকে ২০১৮-র মধ্যে কাজ হারিয়েছেন ৫০ লক্ষ মানুষ। দেশে বেকারির হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক।

নোটবাতিলের ফলে ব্যাপক ধাক্কা এসেছে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে। পরিসংখ্যান অনুসারে বিগত তিন বছরে শুধুমাত্র গুরগাঁওতেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কমেছে ৭৬.৮ শতাংশ। ২০১১-১২ সালে যেখানে ৮২ জন ডেভালপার এই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন সেখানে ২০১৭-১৮ তে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ১৯। নয়দাতে এই হার ৭৩.২ শতাংশ। সেখানে ডেভালপারের সংখ্যা ৪১ থেকে হয়েছে ১১। সারা দেশে নোটবাতিলের পরে ডেভালপারের সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশ।

ডিমনিটাইজেশন সম্পর্কে করা সাম্প্রতিক এক অনলাইন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ৬৬ শতাংশ মনে করেন নোটবাতিল ভারতের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষতি করেছে। অন্যদিকে ২৮ শতাংশ মনে করেন নোটবাতিল থেকে দেশের অর্থনীতি ও কর্ম সংস্থানের কোনো ক্ষতি হয়নি।

ওই সমীক্ষা থেকে আরও জানা গেছে ৩৩ শতাংশ মনে করেন নোটবাতিলের ফলে দেশের অর্থনীতির অধোগতি শুরু হয়েছে। যে সময় নোটবাতিল ঘোষিত হয়েছিলো তখন ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতি হচ্ছিলো।

নোটবাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরী কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবতিলের পদক্ষেপকে আক্রমণ করেন।

গতবছর ৮ নভেম্বর এক ট্যুইট বার্তায় ইয়েচুরী বলেছিলেন – মোদী এবং তাঁর বাহিনী দাবী করেছিলো নোটবাতিল কালো টাকা বন্ধ করবে। দুর্নীতি বন্ধ করবে। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হবে এবং শুধুমাত্র ডিজিটাল লেনদেন হবে। দু বছর পরে মোদী নীরব। আসল সত্যি হল, তিনি এককভাবে অর্থনীতি, জীবন ও জীবিকাকে ধ্বংস করেছেন।

অন্য একটি ট্যুইটে তিনি বলেছিলেন – মোদী ভুলে গেছেন তিনি কী বলেছিলেন। তিনি ভারত এবং ভারতবাসীকে যা করেছেন এটা তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

আরও একটি ট্যুইটে ওইদিন তিনি জানিয়েছিলেন – এঁরা ভুলিয়ে দিতে চাইছেন যে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সমস্ত ভারতবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। ঠিক পাঁচ বছর আগে তিনি একথা বলেছিলেন। যারা ব্যাঙ্ক লুট করেছে এবং যাঁদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে একমাত্র তারাই ১৫ লাখ করে টাকা পেয়েছে।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in