
রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল লাদাখ। লাদাখের লেহ শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয়রা। বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের জেরে ইতিমধ্যেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া একথা জানিয়েছে।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে পথে নেমেছেন সেখানকার কয়েকশ বাসিন্দা। উত্তপ্ত জনতা বিজেপির একটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিলে এবং পুলিশের গাড়িতে হামলা চালালে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালাতে হয়েছে তাদের বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় এই অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে অনেক আগে থেকেই আন্দোলন চলছে সেখানে। গত দুই সপ্তাহ ধরে, জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক এই দাবিতে অনশন করছেন। এর আগেও একাধিকবার অনশনে বসেছেন তিনি। তাঁর সাথে বহু আমজনতাও শামিল হয়েছেন। সেই আন্দোলন সহিংসতার রূপ নিল এই প্রথম। ওয়াংচুকের কথায়, “দীর্ঘ দিন ধরে জমতে থাকা আগুনেরই বহিঃপ্রকাশ এই ঘটনা।“ তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও সহিংসতাকে সমর্থন করেন না তিনি।
আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের জনগণের দাবি নিয়ে আলোচনা করার জন্য লেহ অ্যাপেক্স বডির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে বসছে কেন্দ্র।
লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পর থেকে গত তিন বছর ধরে সেখানে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা বারবার তাঁদের জমি, সংস্কৃতি এবং সম্পদ রক্ষার জন্য রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছেন।
২০১৯ সালের আগস্টে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা হয় এবং জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ভাগ করা হয়। সেই সময় যদিও সোনম ওয়াংচুক সহ লেহের অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের অধীনে বাসিন্দাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি হাত মিলিয়ে একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম - Apex Body of Leh and the Kargil Democratic Alliance - গড়ে তোলে। এর প্রতিক্রিয়ায় লাদাখের দাবিগুলি পরীক্ষা করার জন্য কেন্দ্রও একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি গঠন করে। দুই পক্ষ একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি।
গত মার্চ মাসে, লাদাখের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠক শীঘ্রই ভেঙে যায়। স্থানীয় নেতারা দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের মূল দাবিগুলিই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন