দেশের বিদ্যুতায়ন এবং ‘মন কী বাত’

ছবি প্রতীকী সংগৃহীত
ছবি প্রতীকী সংগৃহীত

২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে মূল যে পাঁচ প্রতিশ্রুতি ছিলো তার মধ্যে ছিলো – বেকারি দূরীকরণ, স্বচ্ছ ভারত, রাস্তা, সারা দেশে সকলের জন্য বিদ্যুৎ এবং সন্ত্রাসবাদ দমন।

এনডিএ সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনকালের পর রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে বসলে, অন্য সব বিষয় যদি ছেড়েও দেওয়া হয়, শুধু বিদ্যুতায়নেই তাদের পাশ মার্ক তোলা মুশকিল হয়ে যাবে।

দেশের বিরোধী রাজনৈতিক কোনও দল নয়। দিনকয়েক আগে বিজেপিরই বিক্ষুব্ধ সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা জব্বলপুরে কৃষকদের এক বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন – মন কী বাত নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমিও মনের কথা বলি। ভোটের সময় বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ভোট হয়ে গেলেই সে কথায় গুরুত্ব দেওয়া তো দূরের কথা, প্রতিশ্রুতিটাই সকলে ভুলে যায়। দেশ এখন এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে।

অর্থাৎ বিক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে ভোটে জেতার আগে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, ভোট মিটে যাবার পর সে প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া হয় এবং আঙ্গুল তিনি তুলেছেন তাঁর নিজের দলের দিকেই। বাস্তব কিন্তু বলছে, বিক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদের ক্ষোভ যথাযথ। সত্যিই ‘মন কী বাত’ আর ‘পদ্মাবৎ’ বিতর্ক সামনে এনে পেছনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে আম জনতার মূল সমস্যাগুলোকেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। অন্তত তাঁর অত্যন্ত আস্থাভাজন মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বিদ্যুৎমন্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন সভায় এই কথা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বার বার জানিয়েছিলেন সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন। দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।

বিজেপি ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে মূল যে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দিয়েচিলো তার অন্যতম প্রধান ছিলো – ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এবার বরং দেখে নেওয়া যাক দেশে বিদ্যুতায়ন বিষয়ক প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তব ছবি। বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকাকালীন যে প্রতিশ্রুতির সবগুলোই করেছিলেন পীযূষ গোয়েল।

১৭ জুন, ২০১৬ – বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল পানাজিতে জানিয়েছিলেন ২০১৬-র শেষের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সব গ্রামে বিদ্যুতায়ন করে দেবে। (ইকনমিক টাইমস, ১৮ জুন, ২০১৬)

ওই ১৭ জুনই অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য বলেন, ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে ২০১৯-এর মধ্যে। কারণ এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন। (মানি কন্ট্রোল, ১৭ জুন, ২০১৬)

এরপরের মন্তব্য সাড়ে তিন মাস পর। ৮ অক্টোবর, ২০১৬। ভাদোদরায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, মে ২০১৭-র মধ্যে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে। (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৯ অক্টোবর, ২০১৬)

২০১৭ সালের মে মাসের ২০ তারিখে নয়াদিল্লিতে পীযূষ গোয়েল দেশবাসীকে জানালেন, মে ২০১৮-র মধ্যে দেশের সব বাড়িতে বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে।(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২০ মে, ২০১৭)।

এরও কয়েকমাস পর, ১০ আগস্ট, ২০১৭ শেষবারের মত পীযূষ গোয়েল জানিয়েছিলেন – ২০২২-এর মধ্যে দেশের সব বাড়িতে বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে এবং মে ২০১৮-র মধ্যে দেশের সব গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে। (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আগস্ট ১০, ২০১৭)।

এ তো গেল মন্ত্রীর কথা। এবার দেখা যাক বিদ্যুতায়ন নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রক কী বলছে। মে ২৫, ২০১৭তে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রকের অধীন গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন (গর্ব) জানিয়েছিলো – দেশে ১৩,৫২৩ গ্রামে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ পৌঁছেছে এবং মাত্র ১০৮৯ গ্রামে ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। শতাংশের বিচারে যা মাত্র ৮ শতাংশ।

ওই সংস্থা আরও জানিয়েছিলো ২০১৫ সালে দেশের ১৮,৪৫২ গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছিলো বিদ্যুতায়নের জন্য। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছিলো, দেশের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ গ্রামে কোনও বিদ্যুৎ নেই। বিশেষত, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্যের ৫০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশের ৩০টি রাজ্যের মধ্যে অন্তত ১৪টায় শতকরা ৮০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই।

বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকারের আগে কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারও বিদ্যুতায়নের কাজে হাত দিয়েছিলো। পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৩-১৪-র মধ্যে ইউপিএ সরকার রাজীব গান্ধী গ্রামীন বিদ্যুতায়ন যোজনা (আরজিজিভিওয়াই) প্রকল্পে ১,০৮,২৮০ গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করেছিলো। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১২,০৩০ গ্রাম। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার শেষ তিন বছরে বিদ্যুতায়ন করতে পেরেছে মাত্র ১৪,৫২৮ গ্রামে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ৪,৮৪২ গ্রাম। যা পূর্বতন ইউপিএ সরকারের থেকে অর্ধেকেরও কম।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in