নোটবন্দির দু-বছর পূর্তি – সরকার কী বলছে? – মানুষ কী ভাবছে ?

নোটবাতিলের পরে
নোটবাতিলের পরেফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

জাতীয় অর্থনীতিকে কালো টাকার কবল থেকে মুক্ত করতে, দেশের বিকাশে আপামর জনসাধারণের কল্যাণে সরকারের প্রয়াসকে সফল করতে, দেশের বাইরে এবং ভিতরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রুখে দিতে ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা অনুযায়ী ভারতে নোটবন্দি চালু হয়েছিল।

এদেশের আপাত বৈচিত্র্যহীন রাজনৈতিক জীবনে এই বার্তা জনগনের কাছে একই সাথে এক বজ্রনির্ঘোষ এবং রোমাঞ্চকর নির্দেশ ছিল। দেশের স্বার্থে তারা স্বার্থত্যাগ করছেন – এক অভাবনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কষ্ট সহ্য করছেন –সবকিছুই মানুষ মেনে নিয়েছিলেন জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে, সরকারের ঘোষণায় আস্থা রেখে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১,৫০০,০০০ মানুষ নোটবন্দীর ফলে কর্মচ্যুত হয়েছেন কারণ নগদ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল, টাকা তোলার লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিয়ে মারা গিয়েছেন ১০৫ জন।

আর বি আই’র হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশের মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ১৫.৪ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে নোটবন্দীর ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্কে ফেরত হয়েছে ১.৫.৩ লক্ষ কোটি – অর্থাৎ ৯৯.২ শতাংশ। এখন নোটবন্দীর দুবছর পেরিয়ে যাবার পরে মানুষের হাতে ঘুরছে মোট ১৯.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা যা নোটবন্দীর আগে বাজারে চালু টাকার মোট পরিমাণের চেয়েও বেশি।

জাল টাকা এবং কালো টাকা সম্পর্কে সরকারের ঘোষণার চরম ব্যর্থতা এই হিসাবেই প্রমাণিত হয়। এই সময়কালেই দেশের জি ডি পি’র বৃদ্ধির হার ৮% থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ৬.৭ % -এ দাঁড়িয়েছে যার মানে হয় নোটবন্দীর সিদ্ধান্তের ফলে ১ লক্ষ কোটি টাকার জাতীয় উৎপাদন কমে গেছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কোন ফলাফল এখনও দেখা যায়নি।

নোটবন্দীর সিদ্ধান্তের দুবছর পেরিয়ে এসে এখন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সাফাই দিচ্ছেন এই সিধান্তের ফলে সবচেয়ে বড় লাভ এই যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে বিনিয়োগ বেড়েছে! দেশের অর্থনীতি আরও বেশি বিধিবদ্ধ (Formalised) রূপ নিয়েছে – এবং সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল নগদ লেনদেন কমে নগদহীন (Cashless) ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে! হিসাবে প্রমাণিত এই ডিজিটাল ব্যবস্থায় লাভ হয়েছে PayTm সংস্থার, যাতে জনগণের ব্যাপক অংশের টাকা আসলে বিনা সুদে খেটেছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে কাজ হারানো মানুষের কোন রুটি-রুজির আজও কোন নিশ্চয়তা নেই - লাইনে দাঁড়ানোর ফলে মারা গিয়েছেন যারা, তাঁদের পরিবারের কোন ক্ষতিপূরণ আজও নেই – আর্থিক দুর্নীতিতে কোন সুরাহা হয়নি বরং নতুন কেলেংকারিতে (রাফালে বিমান বরাত সংক্রান্ত) প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে গেছে। প্রতিরক্ষায় এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আজও আমাদের জাতীয় আয়ের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়ে চলেছে।

দুবছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে মানুষ জানতে চায় দেশের কথা ভেবে নিজেদের রুটি-রুজি এমনকি প্রাণ হারিয়েও যে যন্ত্রণা তারা সহ্য করেছিলেন তার ফলে দেশ কতটা বিকশিত হল? যে বিকাশের কথা বলে নরেন্দ্র মোদী নোটবন্দীর বিজ্ঞাপনে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেন (যে নোটবন্দীর আসল উদ্দেশ্য ছিল বড়লোকদের ধার করে ফেরত না দেওয়ার ফলে দেশের ব্যাঙ্কগুলির প্রয়োজন ছিল নগদ অর্থের – নাহলে ব্যাঙ্কগুলিকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হত) সেই কালো টাকা কোথায়? নাকি সব কালো আজ সাদা হয়ে গিয়েছে!

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in