৪০০টিরও বেশি হিমবাহসৃষ্ট হ্রদের আকার বাড়ছে! বিপদের আশঙ্কা পেয়ে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় জল কমিশন

People's Reporter: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের হিমবাহ হ্রদ অ্যাটলাস অনুসারে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ৬৮১টি হিমবাহ হ্রদের মধ্যে অন্তত ৪৩২টির জলাধার জুন মাসে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

হিমালয় অঞ্চলে নীরবে জমছে এক নতুন বিপদ। দেশের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে ৪০০-রও বেশি হিমবাহ হ্রদ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সম্প্রতি এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় জল কমিশন (CWC)। সংস্থার জুন ২০২৫-এর মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হ্রদগুলোর উপর কঠোর নজরদারি না চালালে যে কোনও সময় ভয়াবহ বন্যা নেমে আসতে পারে ভাটির জনপদে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের হিমবাহ হ্রদ অ্যাটলাস অনুসারে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত ৬৮১টি হিমবাহ হ্রদের মধ্যে অন্তত ৪৩২টির জলাধার জুন মাসে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশে সর্বাধিক ১৯৭টি হ্রদ, লাদাখে ১২০টি, জম্মু ও কাশ্মীরে ৫৭টি, সিকিমে ৪৭টি, হিমাচল প্রদেশে ৬টি এবং উত্তরাখণ্ডে ৫টি হ্রদকে উচ্চঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ভারতের হিমবাহ হ্রদের মোট বিস্তার ছিল ১,৯১৭ হেক্টর। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৫০৮ হেক্টরে। অর্থাৎ মাত্র এক দশকের মধ্যে প্রায় ৩০.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।

শুধু জুন ২০২৫ মাসেই হিমালয় অঞ্চলের ২,৮৪৩টি হ্রদ ও জলাশয়ের মধ্যে ১,৪৩৫টির আকার বেড়েছে। ১০০৮টি আয়তন হ্রাস পেয়েছে, ১০৮টি আয়তনের কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি এবং ২৯২টি রিমোট সেন্সিং ডেটা থেকে বিশ্লেষণ করা যায়নি। সামগ্রিকভাবে, হিমালয় অঞ্চলে ২০২৫ সালের জুন মাসে ১,৪৩৫টি হিমবাহের হ্রদ প্রসারিত হয়েছে।

বর্তমানে দেশের পাহাড়ি রাজ্যগুলি ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসে জর্জরিত। হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ভূমিধসে অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। পাঞ্জাবে নতুন করে টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত, বন্ধ রাখতে হয়েছে সব স্কুল-কলেজ। জম্মু ও কাশ্মীরে অবিরাম বর্ষণের কারণে সপ্তম দিনেও বৈষ্ণোদেবীর যাত্রা স্থগিত রয়েছে। গত সপ্তাহেই সেখানে ভূমিধসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমবাহ হ্রদের আকস্মিক ভেঙে পড়া বা গ্লেশিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডস (GLOFs) পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়িয়ে সমতল জনপদেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সিডব্লিউসি সুপারিশ করেছে, প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ হ্রদের জন্য বাস্তবসময়ের নজরদারি ব্যবস্থা, স্যাটেলাইটভিত্তিক সতর্কবার্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।

প্রতিবেদন আরও বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শুধু কেন্দ্র ও রাজ্য নয়, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও নিবিড় সমন্বয় প্রয়োজন। কারণ নেপাল, ভুটান ও চীনের ভেতরে থাকা বহু হিমবাহ হ্রদ ভারতের নদীগুলিতে জল সরবরাহ করে এবং ভাটির জনপদ সরাসরি প্রভাবিত হয়।

প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “হিমালয় অঞ্চলে হিমবাহ সংকোচন ও হিমবাহ হ্রদের বিস্তারই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রভাব।” জলবায়ু উষ্ণায়নের ফলে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে বলেই আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in