১৯৯৫ থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে একাধিক আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ে (Climate Disaster) মৃত্যু হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষের। দীর্ঘ এই সময়ে ছোটো বড়ো মিলিয়ে ভারত প্রায় ৪৩০টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে ভারতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই তথ্য সামনে এনেছে দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্স ২০২৬ (The Climate Risk Index (CRI) 2026)। এই সমীক্ষা চালিয়েছে জার্মানওয়াচ (Germanwatch) নামক সংস্থা।
কী জানাচ্ছে দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্স ২০২৬?
দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্স ২০২৬ জানাচ্ছে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়সীমা ধরে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে ১৯৯৮-এর গুজরাটের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৯-এর ওড়িশা অতি ঘূর্ণিঝড়, ২০১৩ তে উত্তরাখন্ডের বন্যা, ২০১৯-এর একাধিক বন্যা, ২০১৪-র হুদহুদ এবং ২০২০-র আমফান-এর কথা। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ প্রভৃতির কথা।
ভারতে গত ৩ দশকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত তিন দশকে ভারত ছোটো বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৪৩০টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এবং যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এই ধরণের ঘটনায় গত তিন দশকে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ প্রভাবিত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষের।
সমীক্ষা রিপোর্টে ভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভারতের পরিস্থিতি যথেষ্ট গুরুতর এবং ভারত লাগাতার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। ভারতের বিশাল জনসংখ্যা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন ক্রমশ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। রিপোর্ট অনুসারে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই ভারতে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে বহু জায়গায় আকস্মিক বন্যা হয় এবং যার ফলে ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা ও গুজরাটে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
ভারত ছাড়াও এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা। যেখানে বলা হয়েছে ১৯৯৫ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে পৃথিবী জুড়ে ৯,৭০০টি বড়ো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে এবং যার ফলে বিশ্ব জুড়ে ৮ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত তিন দশকে এই ধরণের ঘটনাগুলিতে প্রভাবিত হয়েছে প্রায় ৫৭০ কোটি মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ ৪.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার।
গত তিন দশকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে ডোমিনিকা, মায়ানমার, হন্ডুরাস, লিবিয়া, হাইতি, গ্রেনাডা, ফিলিপিন্স, নিকারাগুয়া, ভারত এবং বাহামা।
জার্মানওয়াচ জানিয়েছে, জলবিদ্যা, আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত ঘটনাগুলি পরীক্ষা করে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। সাত ধরণের বিপদ থেকে প্রাণহানি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরপর দেশগুলির র্যাঙ্কিংয়ের জন্য সমস্ত ক্ষেত্রের প্রাপ্ত মান মিলিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।
কোন ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবথেকে বেশি ক্ষতি
সমীক্ষা অনুসারে, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়, তাপপ্রবাহ এবং খরার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ (৩৩%) এবং ঘূর্ণিঝড় বা ঝড় (৩৩%) সবথেকে বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এরপরেই সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যার (৪৮%) কারণে। পৃথিবী জুড়ে সবথেকে বেশি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (৫৮%) ঝড় এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। যে ক্ষতির পরিমাণ ২.৬৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দারিদ্র্য কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
সমীক্ষা রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ভারত সহ বহু উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই ধরণের ঘন ঘন দুর্যোগ “অতি স্বাভাবিক” (New Normal) ঘটনা হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন এবং এখন থেকেই এর জন্য তহবিল গড়ে তোলা দরকার। বারবার ক্ষতির মুখে পড়ার কারণে জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার উপর চাপ তৈরি হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে বহু মানুষই দারিদ্র্যের গভীরে চলে যাচ্ছেন।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন