১৮৯৭, ২০ অগাস্ট। বিজ্ঞানের খাতায়, ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় এক দিন। আজ থেকে ১২৩ বছর আগের এই দিনেই এক ইংরেজ সাহেবের হাত ধরে ঘটেছিলো যুগান্তকারী আবিষ্কার। পরবর্তী সময়ে যার সাক্ষী হয় কলকাতা। যে আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯০২ সালে নোবেল পেলেন সেই সাহেব। কলকাতার ইতিহাসে তো বটেই, ভারতের ইতিহাসেও সাহেবের হাত ধরে প্রথম নোবেল। হলেনই বা তিনি বিদেশের মানুষ। তাঁরই ঘোষণা অনুসারে এই দিনেই বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় ওয়ার্ল্ড মসকুইটো ডে। তিনি স্যার রোনাল্ড রস।
উচ্চশিক্ষা লাভের পর ভারতীয় চিকিৎসা ও গবেষণা সম্পর্কিত ব্যবস্থাতে যোগদান করেছিলেন স্যার রোনাল্ড রস। ১৮৯৪ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য ইংল্যান্ডে গেলে স্যার প্যাট্রিক ম্যাসনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পরে বদলে যায় রোনাল্ড রসের সবকিছুই। ডাঃ ম্যাসন তাঁকে ১৮৮০ সালে আলফান্স লেভারন কর্তৃক আবিষ্কৃত মানবদেহের ব্যাকটেরিয়াগুলির সাথে পরিচয় করান। ভারতে ফিরে এসে ম্যাসনের উৎসাহ এবং পরামর্শ অনুযায়ী গবেষণার কাজ শুরু করলেন রস সাহেব। ১৮৯৭ সালে সেকেন্দ্রাবাদে পয়সার বিনিময়ে হুসেন খান নামক এক রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করেন নমুনা। চলতে থাকে আরও নিবিড় অনুসন্ধান। এরপর কলকাতার পি জি হাসপাতালে বসেই তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার। আবিষ্কার করলেন ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স (একটি প্রোটোজোয়া) কিভাবে মশার শরীর থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং সম্পন্ন করে তার সম্পূর্ণ জীবনচক্র এবং ক্রমাগত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। চিকিৎসকদের মধ্যে বহুদিনের বিশ্বাস ছিলো বিষাক্ত হাওয়া হলো ম্যালেরিয়া রোগের মূল কারণ।
১৮৯৭ সালে সেকেন্দ্রাবাদে পয়সার বিনিময়ে হুসেন খান নামক এক রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করেন নমুনা।
এরপর চলতে থাকে আরও নিবিড় অনুসন্ধান। এরপর কলকাতার পি জি হাসপাতালে বসেই তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার।
১৮৯৭ সালের ২০ শে অগাস্ট তিনি আবিষ্কার করেন যে এনোফিলিস মশার পাকস্থলীর জল কোষে একধরনের দানাদার কালচে রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। তিনি খাঁচায় বন্দী পাখির মাধ্যমে জীবাণুর জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে রোগাক্রান্ত পাখির দেহ থেকে ম্যালেরিয়া সুস্থ পাখির দেহে সংক্রমিত হতে পারে এবং তার জন্য অবশ্যই বাহকের প্রয়োজন। তবে একটি বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হলেন যে ম্যালেরিয়া জল বা বায়ু বাহিত কোনও রোগ নয়। এটা এক সংক্রমণ ব্যাধি যা মশার মাধ্যমেই একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরের সংক্রমিত হয়। এই সংক্রমণ হয় যখন এনোফিলিস মশা কোন ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ায় তখন রোগীর রক্তে মিশে থাকা প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামে প্রোটোজোয়াটি মশার শরীরে প্রবেশ করে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে গ্যামোসাইটে পরিণত হয়ে মশার লালায় প্রবেশ করে। এবার এই মশা কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার শরীরের প্লাসমোডিয়ামের গ্যামোসাইট ঢুকে তাকে ম্যালেরিয়া রোগাক্রান্ত করে তোলে।
ভারতের গর্বের বিষয় হলো রোনাল্ড রসের এই যুগান্তকারী আবিস্কারের সূতিকাগার হলো কলকাতার পিজি হাসপাতাল। পরবর্তী সময়ে তিনি এই ২০ শে অগাস্টকে "ওয়ার্ল্ড মসকুইটো ডে" হিসেবে ঘোষণা করলেন। ১৯২৭ সালে তাঁর কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে পিজি হাসপাতালে এক স্মারক স্তম্ভ স্হাপিত হয়। যার আবরণ উন্মোচন করেছিলেন স্যার রোনাল্ড রস নিজেই। আজও কলকাতার পিজি হাসপাতালে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে সেই স্মারক।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।