
আমার কাছে যা গত তা মূল্যহীন নয়। আমি কেন! আমার মতো অনেকেই আছেন যারা ‘যা গেছে তা গেছে’ গোছের ভাবতে পারেন না। বরং যা গেল, তা কেন গেল? কী-ই বা দিয়ে গেল? আদৌ কোন শিক্ষা দিয়ে গেল কি? –এই ধরনের অনেক কথা ভাবেন। খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন বিনিময়ের প্রাপ্তিযোগ।
কেউ কেউ দেখেছি, যা গেল তাকে ভালোর জন্যেই যাওয়া হিসেবে সহজেই মেনে নেন। এদের বিপরীতে যারা যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারেন না, বা সেটাকে ক্ষতি হিসেবে ধরে নেন, তাঁরাও ঐ “ভালোর জন্যেই যাওয়া”-দের মতো ওপরওলার হাতে সবটা ছেড়ে আপাত বাঁচতে চান। আসলে এরা সকলেই ভিতর থেকে বড় অসহায়।
যাইহোক সেই সব সমাজ-মনোবিদ্যার আলোচনায় আপাতভাবে না গেলেও চলবে। প্রাসঙ্গিক বিষয় হল গণমাধ্যমে গত হওয়া কালের দিনলিপিতে আমরা কী পেলাম?
আপাতভাবে এই প্রশ্নকে সামনে রেখে আলোচনা এগোতে পারে। এখানে গণমাধ্যম হচ্ছে সংগৃহীত সকল ধরনের মাধ্যম, যা প্রযুক্তিগতভাবে গণযোগাযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গতকালের শুরুতে তা ছিল বিষাদপূর্ণ। দীর্ঘ প্রায় ৩৩ বছরের সাংবাদিক জীবনে নানা ঘটনার সাক্ষী থাকা, তুলনামূলকভাবে স্পষ্টবক্তা, অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। বাঁচার আশাভঙ্গজনিত খেদ। দূরদর্শন, বেতার, সংবাদপত্রের ওয়েব পোর্টাল, ইন্টারনেট এবং সেই সঙ্গে প্রাপ্ত ইউটিউব ভিডিও, পডকাস্ট, ট্যুইটার, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম সহ সকল সংযোগ মাধ্যমে বাঙালি তাঁর কথা বলে। ১৭ মে শুরুটা তাই অতিমারির ছায়াকে স্পষ্ট করে। স্বজন হারার শোক নিয়ে বাঙালি ঘুমোতে যায়।
১৭র সকালটা আমার কাছে অন্য রকম। আকাশে কালো মেঘ। ঝড়ের পূর্বাভাস। গরমে স্বস্তির বার্তা। যার ঘরে চাল নেই সেও অন্তত আজ চাল ধোয়া জল পাবে ভেবে মানসিক ভ্রান্তিতে শান্তি। এ যেন দুর্যোগের পক্ষায়ন। যেন তেন প্রকারে বেঁচে থাকার পক্ষে যুক্তির বিন্যাস গঠন। এও বোধ হয় অতিমারির কালশিক্ষা।
সেই সকালের ভরা পেটে বাইরের জগৎটাকে যে মুহূর্তে ঘরে ঢোকালাম, দিন কেটে গেল, ক্ষণ গত হল, তবু কালো মেঘটাকে গর্জন-বর্ষণ সম্ভাবনার দুর্যোগে বোঝা ছাড়া অন্য কিছু মনে হল না। আগামীর দিনগুলো বাঙালির রাজনৈতিক দিনাচারে শুধু কালো অনুভূতিতে সক্রিয় হল। এ-যেন প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলি আগ্রাসন। গণতান্ত্রিক পথে সদ্য নির্বাচিত একটা রাজ্য সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় হানা। অন্যায়, প্রতিহিংসা, বৈষম্যমূলক আচরণ, অসময়ের কাজ, জুলুম, বিক্ষোভ, চাপান-উতোর এবং-ইত্যাদির-যুক্তিতে গণমাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠলেন হামজা-ফোফানাদের বাঙালি অবয়ব। আর এমন পরিস্থিতিতে তো ধরনা অনিবার্য।
তেমনটাই ঘটলো। ধরনায় বসলেন মমতা। এই ধরনা মমতার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় সফল অস্ত্র। এ যেন মানুষের দোরে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাওয়া। সেই কারণেই হয়তো বহু ব্যবহারেও তা আজও জীর্ণ নয়। “সিঙ্গুরের মাচা” তাঁর জীবনে নবান্নের ধাঁচা দখলে সাহায্য জুগিয়েছে। ক্ষমতায় আসীন হয়েও তিনি ধরনা মঞ্চে বসেছেন। বছর দুই আগের এক ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে বসে রবিবাসরীয় কথা বলতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। তাতে বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। শুরু হয় কেন্দ্র-রাজ্য বাহিনীর সংঘাত। সেদিনও যেন কলকাতার হ্যালোজেন উজ্জ্বল রাজপথ, গণমাধ্যমে গাজা ভূখণ্ডের বোমারু অনুভূতিতে জেগে ওঠে।
সেই অভিজ্ঞতায় কালকের ঘটনা একটি ক্রমে অনুরূপ হয়। সে দিন যেমন ধর্মতলার ধরনা মঞ্চে মমতা বসিয়েছিলেন রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক, গতকালও নিজাম প্যালেস থেকে টেলিযোগে হল রাজ্য মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক। গণমাধ্যমে তখন ফেডারেল কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। ৩৫৬ প্রয়োগের সম্ভাবনা বাতিলের আহ্বান। রাজ্যপালের পদত্যাগ দাবি। কেন মুকুল-শুভেন্দু ছাড় পাবে তার তার্কিক পরিমার্জন। ঘুষ নিয়ে থ্যাঙ্ক ইউ বলার জন্য তথাদাদার সৌগত আপাত ছাড়ে আছেন জানা গেল কারুর কথায়। ম্যাথুর টাকার হদিশ জানতে চাইলেন অনেকে। কেউ এতেও শূন্য আসন বামকে দায়ী করলেন। এরই মাঝে বিকাশ রঞ্জনকে একজন ছিঃ জানালো।
রাজীব কুমারের বাড়ি সিবিআই গিয়েছিল সারদা কেলেঙ্কারির তথ্য আড়াল করার অভিযোগে। আর আজ মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রীসভার দুই সহকর্মী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখার্জি-র সঙ্গে দলের বিধায়ক মদন মিত্র ও সাধের কাননের গ্রেপ্তারী হল ঘুষ নেওয়ার অপরাধে। তবুও রাজ্যের কোভিড মোকাবিলার সমস্যার কথা ভেবে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। এই সময়ে এমন কাজ গর্হিত বলে কেউ একজন খবরের মাঝে বাইট দিলেন। তাদের মতে মমতা হাঁটলে যেহেতু তাঁর মাথাটাও হাঁটে, সেহেতু সেটাকে রাজ্যের অতিমারি নিয়ন্ত্রণে হাঁটানোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেটা করাই ভালো। কিন্তু কেন্দ্রের মোদী-শাহ জুটি অহেতুক এই বিপদের সময় সেটাকে দুর্নীতি দমন আইনে ধৃত মন্ত্রী ও এমএলএ-দের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখছে। এটা শুধু অন্যায়ই নয়, মানবতা বিরোধী কাজ। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, এতদিন সিবিআই কী করছিল?
অনেকেই শোভনের পাশে প্রথমে রত্নাকে দেখে চব্বিশ ফন্টের অনেক হেডলাইন হাঁকালেন। পরে তাঁদের অনেকেই বৈশাখীর কান্নাভেজা চোখ ও একজন পুরুষকে ধরতে মহিলার বেডরুমে চারজন অজানা-অচেনা পুরুষ ঢুকে আসার লজ্জাশরমহীন রোমহর্ষক ছবির বর্ণনা দিলেন। কেউ একজন বৈশাখীর একা থাকার টিপ্পনীও কাটলেন তার ফেসবুকের দেওয়ালে। টানা ৬ ঘণ্টা নিজাম প্যালেসে কাটিয়ে গোধূলি লগ্নে রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর নবান্নে যান মমতা ব্যানার্জি। সেখানে বসেই জানতে পারেন, দলের নেতাদের অন্তর্বর্তী জামিনের খবর। টেলিমিডিয়ার প্রচার যে তুঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়া হল, দিনের শেষে তার সরল বিজ্ঞাপনী অর্থ দাঁড়ালো: “চোরদের সঙ্গে আছি, চোরদের সঙ্গে থাকুন।” এই গৃহবন্দি অবস্থায় চারিদিকে সাধু, সাধু রব শুনলাম। সেই সুরে মিশে গেল এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন-স্বর। টায়ার জ্বলল, লকডাউনেও রাস্তা অবরোধের ছবি এলো গণমাধ্যমের পর্দায়। চোদ্দ তলার পদোন্নতি হল পনেরো তলায়। বাঙালির গণমাধ্যমে প্রকাশ পেল, “চোর ধরো, জেলে ভরো”- ঠিক কথা নয়। নিছক ব্রাত্য স্লোগান। শূন্যদের প্রলাপ।
এই ভাবনায় কিছু বাঙালি হতবাক। “মাস্ক পরো অথবা জেলে যাও” বলা বাঙালি কীভাবে জেল থেকে চোর, গুন্ডা, বদ মানুষের দোষের বিচার না করেই ছাড়িয়ে আনার সঙ্গে থাকে! -সেটা তারা বুঝে উঠতে পারে না। কে যে কখন কার সাংবিধানিক পদের কেমন অবমাননা করছেন, তা বুঝতে অসুবিধা হলেই ভিন্ন ব্যক্তির সমরূপী নির্বুদ্ধিতা আমাদের অবাক করে। ভিন্ন যুক্তিজাল সেই সব কাজকে বৈধ ব্যাখ্যায় হাজির করে। শিক্ষিত বাঙালি “বিনে পয়সার” অধিকারকে পুনর্বণ্টনের দার্শনিক তত্ত্ব হিসেবে খাড়া করে। তাঁরাও ভুলে যান যে সম্পদের পুনর্বণ্টনের কথাটা অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সমাজবিজ্ঞানী কার্ল পোলানি অনেক আগেই বলেছেন। বাংলায় যেটা হচ্ছে সেটাকে সম্পদের পুনর্বণ্টনের ধারণায় ব্যাখ্যা করে মেলালে “মেলাবেন তিনি মেলাবেন” হয়ে যায়। এই মিলিয়ে দেওয়া জোরপূর্বক। পরিকল্পনার উপস্থিতি সেই মিলনের নৃতাত্ত্বিক বিপত্তি। নৈতিকতার ভুলুন্ঠিত অবস্থান সামাজিক অবক্ষয়ের দ্যোতক হয় তখন। সেটা প্রগতির দিশা নয়। কালযাপন।
তাই গতকালের গণমাধ্যমে মেলে না নিজাম প্যালেসের পনেরো তলার সিবিআই দপ্তর থেকে নবান্নের চোদ্দ তলার সঙ্গে টেলিবৈঠকী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তর ফলপ্রসূ ইঙ্গিত। বোঝা যায় না যে ভ্যাকসিনের গ্লোবাল টেন্ডার নিয়ে এদিন মন্ত্রীসভার বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা! জানা যায় না, ওষুধ আর অক্সিজেনের কালোবাজারি প্রসঙ্গে সরকারের তৎপরতার কথা। করোনার বেলাগাম সংক্রমণের মুখে চিকিৎসা ক্ষেত্রকে কীভাবে আরও স্বাস্থ্যমুখী করা হবে সেই কথাও জানা যায় না। বরং পোড়া দেশের হতাশা ছড়ানো শোষকদের হাত শক্ত করতে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার বদলে বেসরকারি নির্ভরতার কথাই শোনা যায়। এটা হল মুনাফায় ছাড় দিয়ে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা।
তেমন চেষ্টা সমকালের গণমাধ্যমের মধ্যেও দেখা যায়। যে মিডিয়া দুঃসময়ের দোহাই সরিয়ে রেখে রত্নাকে বৈশাখীর হাজিরা সম্পর্কে প্রশ্ন করে, সেই মিডিয়াই দুঃসময়ের দোহাই সামনে রেখে হাকিম কন্যার কাছে জানতে চায় না যে “অন ক্যামেরা বাবাকে দর্পের সঙ্গে ঘুষ নিতে দেখার পর তার প্রথম অনুভূতি কেমন ছিল?”
তবু অসহায় মানুষ ভবিষ্যৎ জানতে চায়। মাত্র দুটো আসন পেয়েও ক্ষমতা দখলের জন্য যে দল সকল হাতিয়ার প্রয়োগ করতে মরিয়া হয়, তারা ৭৭ পেয়ে কী করবে?
প্রতিনিয়ত একটা করে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ নাটকের অঙ্ক লাইভ দেখেই তবে কি আমাদের ক্ষান্ত থাকতে হবে? আমরা সেগুলোও জানি না। জানতে চাইলেও কেউ উত্তর দেবার জন্য বসে নেই। ঠিক যেমন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বসে নেই। তিনি জানেন যে তাঁকে নিয়ে ৪৪ জনের মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। ৪৭.৯ শতাংশ ভোট, যে ২১৩ জনকে জিতিয়েছে তাঁদের অনেকেরই অনেক প্রত্যাশা। আত্মসুখের অনেক স্বপ্ন। সেটা না মিটলেই হতাশা। ক্ষোভ। সেই আঁচে পুড়তে পারে দল। ভাঙতে পারে সরকার। এখনও পর্যন্ত ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ১০ জন। একইসঙ্গে আছেন ৯ জন প্রতিমন্ত্রী। বাকী ১৬৯-র কী হবে?
এই বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশান্তকিশোর এই বিষয়ে তাঁকে কিছু বলেছেন কিনা, সেই বিষয়ে গতকালের গণমাধ্যম কিছু না জানালেও, কালকের খবর এটা বলে যে বিধান পরিষদ গঠনের প্রতিশ্রুতি গত ২০১১ সালেও দিয়েছিল এই সরকার। এবারের নির্বাচনে সেটা ছিল তৃণমূলের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে জরুরি ভিত্তিতে গতকালের মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিধান পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোভিডের থেকেও বিধান পরিষদ গঠন যে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। যদিও মন্ত্রীসভার এই সিদ্ধান্তকে এরপর আইন করে অনুমোদন করাতে হবে বিধানসভায়। সেটা আবার রাজ্যপালের সম্মতির পর যাবে দেশের সংসদে। সেখানে সম্মতি পেলে তবে সেটা কার্যকরী রূপ নেবে। সে অনেক ঝক্কির বিষয়। প্রক্রিয়া রান করাও। মুলো ঝোলাও আগে।
এই ভাবনা থেকেই মমতা নিজেও সেই কাজটাকে গুরুত্ব দেন। তিনি জানেন, তিনি যদি একবার কিছু ভাবেন, তবে তা তিনি করে দেখান। কারখানার বদলে সরষে চাষ, তবুও মানুষ তাকেই চান। তার ভাবনাই হল শাসন প্রণালী। সেই কারণেই গতবার দলের অনেক বিধায়কদের মন্ত্রী করতে না পেরে পরিষদীয় সচিবের পদ সৃষ্টি করে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। জনপ্রতিনিধিত্বের নামে সেই অপব্যয় সহ গোটা ব্যবস্থাকেই আদালত পরে সংবিধান বিরোধী বলে রায় দিলে এই পরিষদীয় সচিব পদের অবলুপ্তি ঘটে। এবারে তেমন কিছু হতেই হবে। এইবার যে সেটার বেশী প্রয়োজন।
ঐ কাজেও যে সেই একই পন্থা। সে হল পাইয়ে দেওয়ার অধিকার চেতনা। এও এক ধরনের মিথ্যা-সচেতনতা। এই মিথ্যা-চেতনা বিকৃত বাস্তবতায় পূর্বে মতাদর্শের কথা বলতো, কিন্তু আজ পরিচিতির পরাকাষ্ঠায় নতুন সামাজিক আন্দোলনের কথা বলে। অর্থনীতিনির্ভর শ্রেণী এখানে সামাজিক অবস্থান সাপেক্ষে পরিচিতি-সত্তার অভ্যন্তরে বিলীন হয়ে যায়। রাজনৈতিক ভাষ্যে ও মস্তিষ্কপ্রক্ষালনে সেই কাজটা সহজেই লোকাল-স্তরে করে তোলা সম্ভব হয়। এখানেই মমতার সাফল্য। আর সেটা যে এবারের নির্বাচনে, সকল গণমাধ্যমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়, সকল রাজনৈতিক কর্মসূচীতে করে তোলা সম্ভব হয়েছিল, তা নির্বাচনের ফলাফলে প্রমাণিত। হয়তো সেই কারণেই এতো বিপুল জয়ের মধ্যেও নন্দীগ্রামে মমতার হেরে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনার কথা আগে থেকেই বলা সম্ভব হয়েছিল।
সমকালের গণমাধ্যমে এই দুর্যোগ বিশ্লেষিত হয় না। খেউর করে বাঙালি। আর তাই গতকালের ঘটনা - সকালে গ্রেপ্তার, দুপুরে ধরনা, সন্ধ্যায় জামিন, আবার রাতে হাইকোর্ট হয়ে জেল হেপাজতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই সীমা রাখাটা হয়তো ঠিক হয় না। বিধান পরিষদের মতো কিছুতে যদি ৬৯ জনকেও জায়গা দেওয়া হয়, তবুও সেই সীমার বাইরে পড়ে থাকে শত-ফুল। আর তাঁরা বিকশিত হওয়ার সুযোগ না পেলে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগে ফুটে উঠতে পারেন। কোভিড অতিমারির সঙ্গে এই রাজনৈতিক অসুস্থতা ক্রমশ প্রকট হবে। গরম হবে সামাজিক প্রতিবেশ। বেঁচে থাকার ইস্যুগুলো সেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দুর্বলতায় প্রকাশ পাবে। নিঃশব্দে শুরু হবে ভেল্কির দিন।
এবারের বিরোধী আসন সেই সাংবিধানিক নৈরাজ্যকেই নিশ্চিত করতে চায়। দোসর আছেন রাজ্যপাল।
লেখক ফারাক্কা এস এন এইচ কলেজের অধ্যাপক
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন