Jyoti Basu: আমি জ্যোতি বসুকে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম

বাবার মুখে শুনতাম যে আমার কাকা ক্যান্সারের ওপর পোস্ট-ডক্টরেট করতে জাপান যেতে পেরেছিলেন জ্যোতি বসুর কারণে।
জ্যোতি বসু
জ্যোতি বসুছবি সংগৃহীত

২০০৪ সালে সেই সুযোগ আমার হয়েছিল। দিনটা ছিল জুনের এক মঙ্গলবার। কল্যাণীতে এন্ড্রেউল কোম্পানির গেস্ট হাউসে আমি প্রথম তাঁকে সামনে থেকে দেখি। কমরেড সুবোধ গাঙ্গুলীর সঙ্গে সেখানে যাওয়ার আমার সুযোগ হয়েছিল। ছাপা লুঙ্গি ও সাদা ফতুয়া পরিহিত এক প্রাজ্ঞ বাঙালিকে আমি সেদিন দেখি। তখন আমি “সাম্প্রতিক নদীয়া”র সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি।

পরের দিন, অর্থাৎ ৩০ শে জুন ছিল “হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্র”র ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপনের অনুষ্ঠান। সেখানে আমাদের ভাবনার প্রকাশপত্রটিকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আমার। সেই কাজে আমি তাকে ছুঁয়েছিলাম। জনগণের নেতা স্বীকৃতিতে তাঁকে আমি ছুঁয়েছিলাম। বাম শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান কান্ডারী হিসেবে তাঁকে আমি ছুঁতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু এমন আকাঙ্ক্ষা আমার মনে তৈরি হয়েছিল কেন?

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমাদের বাড়িতে, বিশেষ করে বাবার মুখে, শুনতাম যে আমার কাকা ক্যান্সারের ওপর পোস্ট-ডক্টরেট করতে জাপান যেতে পেরেছিলেন জ্যোতি বসুর কারণে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার তখন এই নামটাকে আমাদের মনে রাখতে হতো। মনে রাখাটা একটা দরকারি কাজ ছিল। ঠিক যেমন করে আমাদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম মুখস্ত করতে হতো, ঠিক সেই লাইনে অন্তত নিজের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চলে আসতেন। কিন্তু বছর দুই পরপর প্রধানমন্ত্রীর নাম বদলে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর নাম কিন্তু একই থাকতো। মোরার্জী দেশাই থেকে চরণ সিং হয়ে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন, আমাদের পাঠ্য তালিকায় নাম তুলে ফেললেন, কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসু অপরিবর্তিত থাকছেন। ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কাছে কম ঝামেলার, এবং জ্যোতি বসু হলেন সেই ঝামেলা কমানোর হিরো। শুধু কম ঝামেলায় আনন্দের বোধে নয়, জ্যোতির অপরাজেয় ক্যারিশ্মা আমাদের গ্রাম জীবনের শৈশবে বিস্ময়ের বিষয়ও ছিল।

ছুঁয়ে দেখার তাড়নাটা সেখান থেকেই হয়তো জন্মেছিল। জেনেছিলাম ১৯৭৭ সালের একুশে জুন রাজ্যপাল অ্যান্থনি ল্যানস্লট ডায়াস -এর কাছে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার জ্যোতি বসু শপথ নেন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সাহায্যে গণতন্ত্রের পরিসরকে প্রসারিত করেন। জনসাধারণ এবং বিভিন্ন গণসংগঠনের পরামর্শ নিয়ে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার চলতে শুরু করে।

এর ফলে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও যে সকল পরিবর্তন ঘটে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানের পদটি আর স্থায়ীভাবে দখলে রাখা সম্ভব হয় না। প্রতি দুই বছর অন্তর সেটা অধ্যাপকদের মধ্যে দায়িত্ব হিসেবে বদলে যাওয়ার নিয়ম হয়। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের এই ফলাফল নাকি আমার সেই কাকার ক্ষেত্রে মঙ্গলময় হয়ে উঠেছিল। উলুখাগড়ার গলায় চেপে ধরা ফাঁস তাতেই নাকি আলগা হয়েছিল, যা তাকে উচ্চ গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।

 নীতিনির্ভর রাজনীতির সেই সুফলের কথা বাবা আমাদের বলতেন। কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু, হরেকৃষ্ণ কোঙার, রতনলাল ব্রাহ্মণ, মুজফ্ফর আহমেদ, ভবানী সেন সহ  অনেকের কথায় আমাদের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের কাজ বাড়িতে সম্পাদিত হতো। বর্ধমান জেলার সেই প্রত্যন্ত গ্রামে তখন বিদ্যুৎ এলেও আমাদের পাড়াতে তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। হ্যারিকেনের আলো  জ্বালিয়ে সন্ধ্যায় আমরা পড়তে বসতাম, সেই আলোয় এক বর্ষার রাতে নবরত্নের মধ্যে আমি জ্যোতি বসুর ছবি দেখেছিলাম। বাবার মতোই ধুতি পরা লড়াকু চরিত্রের একজন সাধারণ মানুষ।

আজ ৮ই জুলাই পশ্চিমবঙ্গে এক দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে। দিন ঘোষণার মুহূর্ত থেকে একের পর এক মানুষ লাশ হয়েছেন। রক্তে ভেজা রাজনীতিতে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরির বিনিময়ে এক শ্রমিক এখন বোমা বাধার কাজ করেন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মিছিলে এখনো গুলি চলে। সেই আতঙ্কের মাঝেই নির্বাচন কমিশন গ্রাম লুটেরাদের পক্ষ নেয়। সেই অভিযোগের মাঝেই দৃশ্যমান সংস্কৃতিতে গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস ওঠে। আর ঠিক তখনই  গ্রাম বাঁচানোর প্রতিরোধে কমরেড জ্যোতি বসুর ১১০ তম জন্মদিনটি “গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই” হিসেবে উৎসর্গিত হয়। ১৯১৪ সালের আজকের দিনে আমহার্ষ্ট স্ট্রীট আর হ্যারিসন রোডের [মহাত্মা গান্ধী রোড] মোড়ে ৪৩ / ১ নম্বর বাড়িতে জ্যোতি বসুর জন্ম হয়।

মা, হেমলতা বসু। বাবা নিশিকান্ত বসু পেশায় ছিলেন আমেরিকা ফেরত একজন ডাক্তার। জ্যোতিরিন্দ্র হলেন তাদের তৃতীয় ও শেষ সন্তান। জ্যোতিরিন্দ্রের জন্মের সময় তাঁদের বড় ছেলে সৌরীন্দ্রকিরণের বয়স ১০, এবং একমাত্র মেয়ে সুধার বয়স সাত বছর। নামকরণের সময় প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা মেনেই রথীন্দ্র / জ্যোতিরিন্দ্রের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রের প্রদীপই জ্বলে থাকার সামর্থে জয়ী হয়। স্থায়ী হয় জ্যোতিরিন্দ্র, ডাক নাম হয় ‘গনা’। কিন্তু সেই ভালো নাম মাত্র কয়েক বছরের পরেই পাল্টে যায়। ১৯২০ সালে ‘লোরেটো কিন্ডার গার্টেন স্কুলে’ ভর্তি হওয়ার সময় বাড়ির সকলের আদরের গণার ভালো নামটি থেকে “রিন্দ্র” বাদ দেওয়া হয়। ফলে জ্যোতিরিন্দ্র বসু হন জ্যোতি বসু।

গনা বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ আওড়ায়। সুধা জানে “ওরা কাজ করে” কবিতাটি গনার সব থেকে প্রিয়।

জ্যোতি বসুর এমন ছেলেবেলার গল্প আমি সুরভী বন্দোপাধ্যায় রচিত “জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী”তে পড়েছি। বইটি হার্পার কলিংস্ থেকে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়। জ্যোতি বসু নিজে বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন। বইটি সুখপাঠ্য। তথ্যসমৃদ্ধ। গনার ‘বকুল’ হয়ে ‘জ্যোতি বাবু’ হওয়ার পথে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই বইটি প্রকাশিত হয়েছে।

লন্ডনের দিনগুলির কথাও এখানে সুন্দর করে বলা আছে। ১৯৩৫র অক্টোবর মাস। তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন। তার আগে ১৯৩০ সালে, শহীদ মিনার ময়দানে, সুভাষ বসুর আহ্বানে, গান্ধীর সত্যাগ্রহে তিনি হাজির ছিলেন। হরেকৃষ্ণ কোঙারকে তিনি সেখান থেকেই চিনতেন। তবে বসুর রাজনীতির হাতেখড়ি ইংল্যান্ডে। ভারতে তখন কমিউনিস্ট পার্টিকে ব্রিটিশরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দেশে ফিরে এসেছেন হীরেন মুখার্জি, ডক্টর জেড এ আহমেদ, নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার, সাজ্জাদ জাহির প্রমুখ কমিউনিস্ট সংগঠক। লন্ডনে জ্যোতি বসুর সঙ্গে কৃষ্ণ মেননের যোগাযোগ হয়। মেননের সংসর্গে শুধু ব্রিটিশ লেবার পার্টির নয়, কমিউনিস্ট পার্টি অফ গ্রেট ব্রিটেন বা সিপিজিবির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ হয়। হ্যারি পালিট, ব্রেন ব্যাডলে, ক্লিমেন্স দত্ত, রজনী পাম দত্ত, হ্যারল্ড ল্যাস্কি, কে টি চন্ডী, মোহিত ব্যানার্জি, প্রমুখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকাতে সেটা তাঁর কমিউনিস্ট চেতনা বিকাশে সাহায্য করে। তিনি নিজেই এই প্রসঙ্গে অনেক কথা লিখেছেন।

জ্যোতি বসুর নিজস্ব রচনার অনেকটাই ধরা আছে তার নির্বাচিত রচনা সংগ্রহে। তিনি লিখছেন, “বিলেত থেকে ১৯৪০ সালে দেশে ফিরে আসার আগেই ঠিক করেছিলাম সর্বক্ষণের কর্মী হবো কমিউনিস্ট পার্টির। দেশে ফেরার পর পার্টি আমাকে প্রথমে কাজ করতে বলে শ্রমিক সংগঠনে। পার্টির প্রয়োজনেই আমায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে হয়েছিল। রেলওয়ে শ্রমিকদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন কবিরকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম।” বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে জনগণের স্বার্থে, খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে, তাদের সংগ্রামের স্বার্থে, তিনি কাজ করেছেন। হ্যাঁ, তিনি কাজ করেছেন। তাঁর কাজকে আমরা ছুঁতে পারি, অন্তত সমালোচনায় ছোঁয়ার আগে।

তিনি জনগণের কাছে বারে বারে ফিরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তাই তাঁকে ছুঁতে চাইলে তাঁর কাজের পথ ধরে হেঁটে যাওয়াতে কোনো অন্যায় থাকে না, বরং আবেগ থাকে। কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেও তিনি ওকালতি করেন না। স্নেহাংশুকান্ত আচার্য,  ভূপেশ গুপ্ত, হীরেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পুরনো সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়ে গড়ে ওঠে কলকাতার এই রাজনৈতিক জীবনে। এই প্রসঙ্গে জ্যোতি বসুর লেখা “কমরেড হীরেন মুখোপাধ্যায় : এ মার্কসিস্ট ইন্টেলেকচুয়াল” শীর্ষক নিবন্ধটিকে পড়া যেতে পারে। ২০০৪ সালে “সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট” এর ৩২ নম্বর খন্ডের ৯ ও ১০ যৌথসংখ্যায় সেটি প্রকাশিত হয়।

“জ্যোতি বসুর নির্বাচিত রচনা সংগ্রহ” শিরোনামে “ন্যাশনাল বুক এজেন্সি”র পক্ষ থেকে ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ৫ খন্ডে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। প্রকাশনা সম্পাদক হলেন অঞ্জন বেরা, এবং সভাপতি ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। পাঁচ খন্ডে প্রায় ১৫০০ পাতার কাছাকাছি এই কাজ জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব রচনাগুলিকেও বাংলা ভাষায় সামনে নিয়ে এসেছে। রেল শ্রমিকদের আন্দোলন, তেলেঙ্গানা থেকে তেভাগার কৃষক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই, রাজ্য পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিতর্ক, চীন-ভারত সংঘর্ষ, বন্দী মুক্তির আন্দোলন, ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন, ইত্যাদি প্রসঙ্গে তাঁর ভাষণ ও রচনা এই গ্রন্থের পাঁচ খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। সময়ের অলিন্দে হেঁটে চলে তাঁকে ছোঁয়ার সুযোগ করে দেয় এই সংকলন। তাঁর “বকুল” পরিচয়েরও সন্ধান দেয় এই সংকলিত খন্ডগুলির অনেক অংশ।

বিয়াল্লিশ থেকে ছেচল্লিশ পর্যন্ত বাংলার খাদ্যাভাব, মন্বন্তরের সাক্ষী জ্যোতি বসুর “বকুল” পরিচিতি তাঁর তাত্ত্বিক পরিচয়ের সমার্থক হয়ে ওঠে। সমালোচকদের অভিমত অনুসারে জ্যোতি বসুর এই “বকুল” পরিচয় ছুঁতে পারলে তাঁর তাত্ত্বিক পরিচয় অনুধাবন করা সম্ভব। ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট রাজনীতির ব্যবহারিক দিকটি এই বকুল পরিচয়েই প্রথম সন্ধান পাওয়া যায়। বসু নিজেই মানতেন যে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক কাজে যুক্ত করতে হবে। একজন কমিউনিস্ট নেতার সেটাই প্রথম কাজ। ১৯২৮ সালে বোম্বাইয়ের সুতোকল শ্রমিকদের ধর্মঘটে বি টি রণদিভে সেই তরুণ বয়সেই যে প্রমাণ রেখেছিলেন, যা বসুর কাছে ছিল তত্ত্বের প্রয়োগ ক্ষেত্রের একটি উদাহরণ। তিনি সেটা মানতেন এবং জোর গলায় বলতেন।

বসুর লেখায় সেই তত্ত্বকথার নানা প্রমাণ আছে। যেমন ১৯৫০ সালের ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটির পত্রের জবাবে সমীক্ষা আকারে তিনি একটি বিবৃতি লেখেন। মস্কো আর্কাইভ ঘেঁটে সেই চিঠি আজ উদ্ধার হয়েছে। রাজ্যেশ্বর রাও পরিচালিত কমিটির তুলে ধরা মৌলিক লাইনের সঙ্গে ঐক্যমত্য হয়েও “বকুল” নামের জ্যোতি বসু সেখানে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রশ্ন তুলে ধরেছিলেন। এই ডকুমেন্টটি সেই পরিচয়কে শুধু স্পষ্ট করে না, একটা অভিমুখকে নির্দেশ করে। বাসু আচার্যের ভাষান্তর ও সম্পাদনায় আখর থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত “বসু – রণদিভে : দুটি বিস্মৃতপ্রায় দলিল” শীর্ষক পুস্তিকাটি দেখা যেতে পারে। সেখানে সেই সম্পর্কে বিশদে লেখা আছে। তত্ত্বকথায় বসুকে ছোঁয়ার এটি একটি ছোট্ট মাইল ফলক।

১৯৬৪র মতাদর্শগত পার্থক্যে তিনি ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)র পক্ষে। দক্ষিণ কলকাতার ত্যাগরাজ হলে অনুষ্ঠিত সপ্তম কংগ্রেসের সভাপতি মন্ডলীতে তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। এই কংগ্রেস থেকেই তিনি সিপিআই(এম) -এর কেন্দ্রীয় কমিটি তথা পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র “পিপলস ডেমোক্রেসি” আত্মপ্রকাশ করলে তিনি হন সেই পত্রিকার সম্পাদক। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক স্মৃতিতে তিনি স্মরণীয়।

সেই মতাদর্শে তিনি আজীবন অটল থেকেছেন। ২০১০ সালের ১৭ ই জানুয়ারি মারা যাবার আট বছর আগে ২০০২ সালের ১৮ই মে লোকসভার প্রথম স্পিকার শ্রী মবলঙ্কর নামাঙ্কিত বক্তৃতামালায় “ভারতীয় গণতন্ত্রে বামপন্থীদের অভিজ্ঞতা” শীর্ষক বক্তব্যে তিনি প্রথমেই স্পষ্ট করছেন, “এমন কথা বলতে পারি না যে আমি সমস্ত বামপন্থীদের হয়ে ভাষণ দিচ্ছি। কারণ স্বাধীনোত্তর কালে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে কাজকর্মের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বামপন্থী শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আমার বক্তব্য বহুলাংশেই ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির ও পার্টি ভাগ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৬৪ সাল থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী)-র মতামত তুলে ধরবে।” নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি কর্মীদের মন ছুঁয়ে যান, বিশেষ করে যারা তাঁর মতো মতাদর্শগত সংগ্রামে সেনার ভূমিকায় ঋজু থাকতে চায়। সেই কাজে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি থেকে প্রকাশিত “ডকুমেন্টস অব দ্যা কমিউনিস্ট মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া” বইটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের কাজ করে। ২৬ খণ্ডে প্রকাশিত এই বই ১৯১৭ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত বছর ধরে ধরে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের তথ্যভিত্তিক আলোচনা করে। নির্মিত ইতিহাসের বয়ান গঠনের কাজে মুখ্য সম্পাদক হলেন জ্যোতি বসু। সম্পাদক মণ্ডলীতে ছিলেন শৈলেন দাসগুপ্ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস, শান্তি শেখর বসু।      

১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে তাঁকে বহুবার জেলে যেতে হয়েছে। গণেশ ঘোষ, সুবোধ ব্যানার্জি মুজফ্ফর আহমেদ, প্রমুখের কথা তিনি “যতদূর মনে পড়ে” গ্রন্থে বলেছেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পশ্চিম বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চলার মাঝে ১৯৭১ সালের ৩ মাস সময়কে বাদ দিলে এবং তারপর ১৯৭২ সালের ২০শে মার্চ সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের শাসন শুরু হলে, জ্যোতি বসু তাকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দেন। “ওয়াল্ড প্রেস”কে আহ্বান জানিয়ে ১৯৭২ সালের ২৩ শে মার্চ তিনি সম্পাদককে “অন ফ্যাসিস্ট টেরার ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল”  শীর্ষক লিখিত বার্তা দেন। একেবারে পয়েন্ট করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধাচরণ করেন। আজকের ভারতে যে অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি আছে আর হিন্দুত্ববাদের এজেন্ট হিসেবে (অন্তত দিলীপ ঘোষের কথা মেনে) পশ্চিমবঙ্গ যে দুর্নীতির পাকে প্রশাসনিকভাবে হিংসায় রাজ্য ডুবে যাচ্ছে সেটাও একপ্রকার  ফ্যাসিবাদী শাসন। ১১০ তম জন্মদিনে সর্বাত্মক হিংসায় ভরা পঞ্চায়েত লুঠের রাজনীতিকে দেখে জ্যোতি বসু সেই কথাই বলতে শেখান।

বামপন্থী ঐক্য গড়ে তোলায় বসুর অবদান স্মরণীয়। ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তফ্রন্টের দুই সরকারেই তিনি ছিলেন নির্বাচিত বিধায়ক এবং উপমুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ২৩ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে চলা বামফ্রন্ট সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছিল ভূমি সংস্কারের কাজ। চালু হয়েছিল ভূমিহীন খেতমজুরদের মধ্যে খাস জমির বিলি বন্টনের আইন। লাগু হয়েছিল ভাগচাষির অধিকার নির্মাণের কর্মসূচি। সেই অধিকারের স্বার্থেই প্রচলিত ছিল অপারেশন বর্গা। গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজে এবং ভূমির সুষম বন্টনের কর্মসূচিতে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগ সফল হয়েছিল। ফিরে এসেছিল শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার। ১৯৫৪ সাল থেকেই শিক্ষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। জ্যোতি বসু নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সেই লড়াই আন্দোলনে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করেছেন। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা ক্রমে পরিবর্তন ঘটানোর কাজটা তাই দ্রুত সম্পাদিত হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, ভারতীয় সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতি অনুযায়ী ১৯৫৮ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, অর্থাৎ গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের কার্যক্রম, আরম্ভ হওয়ার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং যা ঘোষণা পরবর্তী দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নিষ্প্রাণ ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়েছিল, সেটাও প্রাণ ফিরে পায়। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে ১৯৭৩ সালের আইন মেনে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার নির্বাচনও নগরাঞ্চলে দুর্নীতি মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনে। মনোনীত হওয়ার বদলে নির্বাচন গুরুত্ব পায়। এর মধ্যে পার্টির সিদ্ধান্তেই ১৯৯৬ সালে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম বিবেচিত হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই ব্যতিক্রমী নেতাকে ছুঁতে হলে সেই লাল ইতিহাসের পথ ধরে হাঁটতে হবে। এই পথে হাঁটতে আর এক মাইল ফলকের চিহ্ন দেখা যায়। সেটি হল “পিউপিলস পাওয়ার ইন প্র্যাকটিস : ২০ ইয়ার্স অব লেফট ফ্রন্ট ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল” শীর্ষক গ্রন্থটি। জ্যোতি বসু হলেন এই গ্রন্থের মুখ্য সম্পাদক। সম্পাদকমন্ডলীতে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস, মিহির ভট্টাচার্য। ১৯৯৭ সালে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি থেকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

প্রাথমিক শিক্ষায় ইংরেজিকে দুর্বল করা, কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতিকে শ্লথ করে দেওয়া, শ্রমিকের অধিকারে অতিসক্রিয়তা দেখানোর ফলে শিল্পায়নের বাধা হয়ে ধর্মঘটকে দাঁড় করানোর করুণ কৃতিত্বেও সমালোচকগণ জ্যোতি বসুকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন। মিডিয়াকে তিনি অসম্পূর্ণ বাক্যে উত্তর দিতেন, এমন অপবাদও তাঁর নামে আছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের পরিসরে সি পি আই (এমএল) অবস্থানে দাঁড়িয়ে অনুপ সাদি জ্যোতি বসুর পুলিশ মন্ত্রীত্বের সময়, ১৯৬৭ সালের ২৫ মের  ঘটনা উল্লেখ করেন। জ্যোতি বসুর হাতে কৃষকের রক্ত লেগে থাকার দাবি তিনি তোলেন। আরো এক ধাপ এগিয়ে “দিল্লি স্কুল অফ ইকোনোমিক্স” -এর প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অশোক রুদ্র জ্যোতি বসুকে কৃষির বিকাশবিরোধী পুরুষ আখ্যা দেন। রুদ্রের ধারণায় জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে চলা বামফ্রন্ট সরকার বাংলার কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রের প্রচলনে কোনরকম উৎসাহ যোগায়নি। ১৯৮৫ সালে “ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি” পত্রিকার কুড়ি খন্ডের ৩০ নম্বর সংখ্যায় “জ্যোতি বসু অ্যান্ড মাল্টিন্যাশনালস” শীর্ষক দেড় পাতার নিবন্ধে অশোক রুদ্র সেই কথাই বলেছেন।

প্রযুক্তি, যন্ত্র, শ্রম, একচেটিয়া পুঁজি সম্পর্কিত রুদ্রের এই ধারণা জন স্টুয়ার্ট মিলসের অর্থনীতি সম্পর্কিত তত্ত্বে জারিত। “ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ লেবার ইকোনমিক্স”-এর ৪৭ তম বার্ষিক সভায় জ্যোতি বসুকে উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভি ভি গিরিকে স্মরণ করে সেই ভাষণে বসু “সায়েন্টিফিক অনেষ্টি এন্ড দ্য ওয়ার্কিং ক্লাস” শীর্ষক বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “যন্ত্রপাতির প্রবর্তন শ্রমের কোনো অবস্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে না, যে সম্পর্কে ডেভিড রিকাডো প্রস্তাবনা গঠন করেছিলেন। রিকার্ডো নিজে অবশ্যই এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেছিলেন, কিন্তু এই পরিবর্তনটি কেবলমাত্র স্বীকৃত যে যন্ত্রের প্রবর্তন স্বল্পমেয়াদে কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষতিকারক ছিল; দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থনীতিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্ম দিয়েছে, এবং তাই কর্মসংস্থানেরও উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে কর্মচ্যুতদের পুনরায় কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। রিকার্ডো আবার, যেমন মার্কস বারবার উল্লেখ করেছেন, ছিলেন একজন বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ, কিন্তু এই তত্ত্বটিতে একটু ভুল আছে, যার তীব্র সমালোচনা মার্কস করেছিলেন। ত্রুটিটি ছিল এই সত্য যে তিনি কেবলমাত্র একটি শট যন্ত্রের প্রবর্তনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং তাও এমন এক পরিস্থিতিতে যেখানে শ্রমিকের কর্মচ্যুতি অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদার স্তরে কোনও প্রভাব ফেলেনি।” ফলে মার্কসের এই সমালোচনার যথার্থতা এখানে কেবল স্পষ্টই নয়, বরং “কর্মহীন প্রবৃদ্ধি” ধারণাটি আজকে বিস্তৃতি লাভ করে প্রতিক্ষণে প্রমাণ রাখছে। একচেটিয়া মুনাফা লোভী পুঁজির কাছে অটোমেশনের সেই বিপদ সম্পর্কে মার্কস আগেই সতর্ক করেছিলেন। রিকার্ডোর ধারণা কর্মচ্যুতির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জ্যোতি বসু সেই কথাই বলছেন। তিনি মানতেন “পুঁজির সঞ্চয়ন, যদিও মূলত এটির পরিমাণগত সম্প্রসারণ হিসেবে প্রদর্শিত হয়, তার গঠনের একটি প্রগতিশীল গুণগত পরিবর্তনের অধীনে, তার ধ্রুবকের ক্রমাগত বৃদ্ধির অধীনে, এবং এর পরিবর্তনশীল উপাদানের ব্যয়ে প্রভাবিত হয়, যেমনটি আমরা দেখেছি।”

মানুষের ইতিহাস রচনার সক্ষমতা অনুধাবনের মার্কসীয় উত্তরাধিকারে জ্যোতি বসু সিদ্ধ। সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইতিহাসকে নির্মাণ করার কাজে সময় জ্ঞান তখনই অর্জিত হয় যখন প্রচলিতকে ভাঙার ক্ষমতা সেই মানুষ অর্জন করেন। শাসকের সেই গুরুচন্ডালী প্রেম কথায় বাঙালির বামপন্থী হয়ে ওঠার আধুনিক সংস্কৃতিকে দেখছেন কলিম খান। জ্যোতি থেকে জ্যোতিবাবু কিংবা নেতা জ্যোতি বসুর সামাজিক ভূমিকা বিচারে রহস্য দুর্বলতার ব্যাখ্যাতে কলিম খান লিখছেন, “জ্যোতিবাবু একজন সার্থক নেতা।” ২০০০ সালে হাওয়া উনপঞ্চাশ প্রকাশনী থেকে “ফ্রম এনলাইটেনমেন্ট টু ইমোশনাল বন্ডেজ : জ্যোতি থেকে মমতায়” শীর্ষক গ্রন্থে তিনি স্বীকার করছেন যে জ্যোতি বসু সময়ের দাবি মেনে নির্মাণের তত্ত্ব এবং প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই  একজন পথপ্রদর্শক।

মানুষের ওপর ভরসা রেখে তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার যে আহ্বান জ্যোতি বসু বারে বারে করেছেন কর্মীদের সেই পথনির্দেশিকা মেনেই চলতে হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সকল ধরনের আগ্রাসনের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে তখনই যখন সিদ্ধান্তটা সমাজ থেকেই উঠে আসবে। সামর্থ্য বৃদ্ধিতে মানব মুক্তির মহান ঐতিহ্যে ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশে জ্যোতি বসু তাঁর অবদানেই স্মরণাকাশে ছুঁয়ে থাকেন। তাঁর দূরদর্শিতা তাঁকে শুধু জন্মদিনে নয়, শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামে, শোষিতের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, যন্ত্রণার উপশমে হাজির করে। আধিপত্যের বিরুদ্ধে মানবিক পরিচয়ে কমিউনিস্টরাই চিহ্ন রাখে। বাবরি ধ্বংসের পরে এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। গুজরাটে আক্রান্ত মানুষ এই রাজ্যকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাই মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায় বিজেপি নেতা প্রবেশ শুক্লা যখন একজন আদিবাসীর মুখে প্রস্রাব করে দেন, তখন প্রতিবাদ না করাটাই অন্যায় হয়ে দাঁড়ায়। বিজেপিকে বর্বর আখ্যা জ্যোতি বসুই দিয়েছিলেন।

রাজ্যের কমিউনিস্ট আন্দোলনের চড়াই উৎরাইয়ের সঙ্গে দেশের বামপন্থী আন্দোলনের জোয়ার ভাটার সম্পর্ক ব্যাখ্যার পরিসরে জ্যোতি বসু হয়ে ওঠেন অন্যতম এক কেন্দ্রীয় চরিত্র। একজন দক্ষ সংগঠক। একজন দক্ষ প্রশসক। এবং সর্বোপরি একজন কমিউনিস্ট পথপ্রদর্শক, যাকে ছুঁতে মানুষের মন চায়। ইতিহাস তাঁকে কীভাবে মনে রাখবে সেই প্রসঙ্গে তাঁর নিষ্পৃহ থাকাটাই স্বাভাবিক। সর্বভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস প্রশ্নে নীতি গঠনের কাজে তাঁর অবদান ইতিহাসে উল্লেখ্য। ভারতের কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে বহির বিশ্বে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেয় তাঁর কাজ। দারিদ্র হ্রাসের উন্নয়ন নীতি, ভূমি সংস্কার, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনমুখি শিক্ষা পরিকল্পনা, নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প, ইত্যাদি হল তেমনই গুটিকয় উদাহরণ। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারায় কমরেড জ্যোতি বসু শুধু এক ঐতিহাসিক চরিত্র নন, তিনি হলেন এক চলমান ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, যাকে পরবর্তী প্রজন্ম ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলতে চায়। কঠিন লাল পথে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম পথপ্রদর্শক। 

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in