Opposition Meet: কংগ্রেসের উদ্যোগে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চ - যে প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না...

কিছু প্রশ্নকে কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা মঞ্চে আম আদমি পার্টি এবং তৃণমূলের অবস্থান কী হবে?
বেঙ্গালুরুতে ১৮ জুলাই বিরোধীদের বৈঠক
বেঙ্গালুরুতে ১৮ জুলাই বিরোধীদের বৈঠকছবি আইএনসি ট্যুইটার হ্যান্ডেলের সৌজন্যে

লড়াইটা শেষ পর্যন্ত ২৬ বনাম ৩৮-এর থাকবে নাকি সমীকরণ আরও বদলে অন্য কিছু হবে তা এখনই বলার সময় আসেনি। তবে এটা ঠিক, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধীদের এই সমঝোতা প্রচেষ্টা শাসক বিজেপি তথা এনডিএ-র মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে। তা না হলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মায় ছোটো বড়ো সব বিজেপি নেতা বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে আসরে নামতেন না। এই সরল সত্যিটুকু প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার।

প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে ট্যুইটারে ব্যাঙ্গাত্মক ট্যুইটের ঝড় তোলা বিজেপি, রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ বলে সম্বোধন করতে অভ্যস্ত বিজেপি যে ওই যাত্রার পরে বেশ কিছুটা চিন্তায় পড়েছে তা ওইসময়ের সংবাদমাধ্যম একটু ঘাঁটলেই বেশ বোঝা যাবে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার কংগ্রেসের জোট প্রচেষ্টা বিজেপির কপালে ভাঁজ ফেলেছে তা নিশ্চিত। কারণ বিরোধীদের শতধাবিভক্ত করতে না পারলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কিছুটা মুশকিলেরই। যা বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভালোভাবেই জানেন।

‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘I-N-D-I-A’ নাম নিয়ে মঙ্গলবারই যাত্রা শুরু করেছে ২৬ বিরোধী দলের সমঝোতা। বেঙ্গালুরুতে বিরোধী সমঝোতা প্রচেষ্টার দ্বিতীয় বৈঠক শেষে একথা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। বিজেপি বিরোধিতায় বিরোধীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ‘ইন্ডিয়া’ নাম দেওয়া আগামীদিনে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বিজেপির জাতীয়তাবাদী শ্লোগানের পাল্টা এই ‘ইন্ডিয়া’-র ধাক্কা বিজেপিকে সামলাতে হবেই।

মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে রাহুল গান্ধী বলেন, এই লড়াই বিজেপির বিচারধারা এবং ভাবনার বিরুদ্ধে। বিজেপি দেশের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে। আমরা দেশের কণ্ঠকে মুক্ত করতে চাইছি। এই লড়াই বিজেপির সঙ্গে ইন্ডিয়ার লড়াই।

সমঝোতা আলোচনা এবং কিছু প্রশ্ন:

প্রস্তাবিত সমঝোতা আলোচনার শুরুতেই অবশ্য বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসে গেছে। প্রস্তাবিত এই কারণেই যে এখনও পর্যন্ত নাম ছাড়া কোনও বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ঠিক হয়নি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি। তবুও কিছু প্রশ্নকে কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত এই সমঝোতা মঞ্চে আম আদমি পার্টি এবং তৃণমূলের অবস্থান কী হবে?

প্রথমত, জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল একাধিকবার বিজেপির সঙ্গে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে এবং ভেঙেছে। বিজেপি জোটে থাকাকালীন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক তৃণমূল সাংসদ মন্ত্রীও হয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের সমঝোতা মঞ্চে তৃণমূলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। বিজেপি বিরোধী অবস্থানে তৃণমূলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। একসময় ‘বিজেপিকে ফ্রন্টে রেখে লড়াই করবো’ বলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে বিরোধী মঞ্চে থাকলেও আগামীদিনেও এই বিরোধী মঞ্চে থাকবেন তো?

দ্বিতীয়ত, ধরে নেওয়া যাক, এই সমঝোতা আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকলো? সেক্ষেত্রে রাজ্যের ৪২টি আসনের ক্ষেত্রে আসন সমঝোতা কীভাবে হবে? কংগ্রেসকে আদৌ কতগুলো আসন ছাড়তে সম্মত হবে তৃণমূল? যেহেতু এই রাজ্যের বাইরে কোনও রাজ্যেই তৃণমূলের কোনও অস্তিত্ব কার্যত নেই তাই তৃণমূলের চেষ্টা থাকবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যত বেশি সম্ভব আসন ঝুলিতে ভরা। কাজেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে যা শর্ত রাখা হবে সেই শর্ত মানবে তো প্রদেশ কংগ্রেস? সিপিআইএম সহ বাম দলগুলো যেহেতু কোনোভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে কোনোরকম সমঝোতার রাস্তায় হাঁটবে না এবং সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি গত সোমবারই সেই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে এই বিরোধী মঞ্চ থাকলেও এই রাজ্যের ক্ষেত্রে তা রাজনৈতিক কারণেই সর্বাঙ্গীণভাবে সম্ভব নয়।

তৃতীয়ত, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে যেভাবে পুরো ভোট পর্ব সম্পন্ন হয়েছে তাতে তৃণমূলের পক্ষে রাজ্যের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়া কঠিন। তবুও তৃণমূল চেষ্টা করবে যে কোনও মূল্যে ভোটে জিতে আসন সংখ্যা বাড়াতে। অন্যদিকে বিজেপিও নির্বাচন লড়বে গত লোকসভা নির্বাচনের থেকে আসন সংখ্যা যাতে না কমে সেই লক্ষ্যে। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা, তাতে ত্রিমুখী লড়াই অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াইতে কারা লাভবান হবে তা বলবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু বিজেপি মুখে যাই বলুক, এখনও বামেদের থেকে বিজেপির কাছে তৃণমূল অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। সেই ক্ষেত্রে কোনও গোপন আঁতাত করে নির্বাচন লড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোন কোন ইস্যুতে সেই গোপন আঁতাত হতে পারে তা আরও কিছুদিন না গেলে স্পষ্ট হবে না।

চতুর্থত, রাজ্যের শাসকদল এবং লোকসভায় বাইশ আসন থাকার কারণে তৃণমূলের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা আছে। বিজেপি বিরোধী সমঝোতা রাজনীতিতে যে কারণে কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের ইচ্ছেতে এই মুহূর্তে তৃণমূলকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে সুবিধা বামেদের নেই। কারণ এই রাজ্য থেকে কোনও বাম সাংসদ নেই। ফলত দর কষাকষির জায়গায় বামেদের কিছুটা হলেও পিছিয়ে থেকেই পথ চলতে হচ্ছে। এই বাস্তব পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। তৃণমূল যাচ্ছে বলে বামেরা এই বৈঠক বয়কট করলে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী রাজনীতির সুর প্রথমেই কেটে যেত। দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠতো বামেদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে। আসন সংখ্যার নিরিখে বামেদের শক্তি ক্ষয় হলেও দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে বামেদের অবস্থান এখনও গুরুত্বপূর্ণ। সেইদিক থেকে বামেদের ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। এক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বোধহয় বাস্তব পরিস্থিতি।

এবং বামেদের অবস্থান:

এরপর বিরোধী সমঝোতা রাজনীতির আঙিনায় যা নির্যাস পড়ে থাকে তা হল বামেদের অবস্থান। বামেরা কোনদিকে যাবে, বা কোনদিকে যাওয়া উচিত তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। যেহেতু ওপেন ওয়াল, তাই প্রত্যেকেই অতি সহজে নিজেদের ভাবনা চিন্তার কথা ব্যক্ত করতে পারেন। তা ঠিক হোক অথবা ভুল। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া একটা সাধারণ সমঝোতা প্রচেষ্টার, যা এখনও কোনও স্পষ্ট রূপ পাওয়ার আগেই যেভাবে আগেই আতঙ্কের প্রহর গুণতে শুরু করেছে তাও ভীষণ চোখে লাগছে।

এই আতঙ্ক কী শুধুমাত্র পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাগামহীন জালিয়াতির পরেও বাম কংগ্রেস আইএসএফ-এর ভোট বাড়ার কারণে? নাকি এর পেছনে আছে আরও বড়ো কোনও কারণ? যে মেইনস্ট্রীম মিডিয়া আজ বামেদের সমঝোতা বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করছে তারাই তো আগ বাড়িয়ে বলতো বামেরা নিজেদের ইগো বজায় রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে সুবিধা করে দিল। সমঝোতা বৈঠকে ঠিক কোন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুললে, কোন ছবিটা ছাপলে, কীভাবে বা কী বলে প্রচার করতে রাজনীতিকদের সুবিধা হবে সেটা মেইনস্ট্রীমের করে খাওয়া মাথারা ভালোই জানেন এবং সেটা তারা গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার করেও যাচ্ছেন।  

বিজেপি বিরোধিতায় বামেদের অবস্থান নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠা সম্ভব নয় সেকথা আগেই বলেছি। ঠিক সেভাবেই কেরালায় কংগ্রেস বিরোধিতা অথবা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরোধিতা নিয়েও কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়। সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে বাম কংগ্রেস আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা তৃণমূলের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বিজেপিকে সেই আক্রমণের মুখে পড়তে হয়নি। জাতীয় স্তরে রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে একই বৈঠকে ইয়েচুরি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকলেই এই সমীকরণ বদলে যায় না।

আরও পড়ুন

বেঙ্গালুরুতে ১৮ জুলাই বিরোধীদের বৈঠক
কোনও জোটেই নেই বিএসপি, একাই লড়ার বার্তা দিলেন মায়াবতী
বেঙ্গালুরুতে ১৮ জুলাই বিরোধীদের বৈঠক
বিরোধী মহাজোটের দ্বিতীয় বৈঠক, সোনিয়া-ইয়েচুরি-শরদ-নীতিশের গোলটেবিলে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in