Opinion: কিসসা কুর্সি-কা - ভোট নাটক শেষে নতুন নাটকের প্রহর গোনা শুরু?

People's Reporter: কংগ্রেস যে তালে গোলে সরকার গঠনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েননি তা তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয়। কষ্টেসৃষ্টে, জোড়াতাপ্পি দিয়ে সরকার হয়তো খাড়া করা যেত, কিন্তু সে সরকার টিকিয়ে রাখা যেত না।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীগ্রাফিক্স আকাশ

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর এবার সরকার গঠনের পালা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ৩২ আসন কম পেয়েও জোটসঙ্গীদের কাঁধে ভর করে আরও একবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। লাগাতার তিন বার। হ্যাটট্রিক। যদিও গত দু’বারের মত এবার একক শক্তিতে সরকার গঠন নয়। বরং সরকার গড়তে ভরসা করতে হচ্ছে জোট শরিকদের ওপর। সামনে স্বীকার না করলেও এই পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গঠনের আগেই কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে শাসক শিবির।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমীকরণে ২৪০ থেকে ২৭২ পার করতে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম (১৬), নীতিশ কুমারের জেডিইউ (১২) এবং চিরাগ পাশোয়ানের এলজেপি(আরভি) (৫)। এছাড়াও সমর্থন আছে একনাথ শিন্ধের শিবসেনা (৭), অজিত পাওয়ারের এনসিপি (১) সহ এনডিএ জোটভুক্ত আরও কিছু দলের।

এই প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়। রাহুল গান্ধী বা কংগ্রেস যে যেন তেন প্রকারেণ তালে গোলে সরকার গঠনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েননি তা তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতারই পরিচয়। কারণ কষ্টেসৃষ্টে, জোড়াতাপ্পি দিয়ে একটা সরকার হয়তো খাড়া করা যেত, কিন্তু সে সরকার টিকিয়ে রাখা যেত না। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হত কংগ্রেস সহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের ইমেজ। তা আগেভাগেই বুঝে এই মুহূর্তে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত এবং সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিয়েছেন ইন্ডিয়া নেতৃত্ব। যার জন্য তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

মসৃণ সমীকরণে এই মুহূর্তে নতুন সরকারের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে এবং সরকারের কোনও বিপদ নেই। যদিও এই সমর্থনের ভিত এতটাই নড়বড়ে যে তা নিয়ে বিজেপির একদম চিন্তা নেই ভাবলে ভুল হবে। বিশেষ করে মন্ত্রীসভা গঠন বা দপ্তর বন্টনের পরে এই আপাত শান্তি কতটা বজায় থাকবে তা অবশ্যই নজরে রাখার মত বিষয়। কারণ এনডিএ-র নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকে মেনে নেবার আগেই সূত্র অনুসারে প্রত্যেক জোটসঙ্গীই তাদের দাবিদাওয়া পেশ করে বসে আছে। সেখানে ১ আসন পাওয়া একাধিক শরিকের আকাশকুসুম দাবিও যেমন আছে তেমনই এই মুহূর্তে এনডিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম জোটসঙ্গী ১৬ আসন পাওয়া তেলেগু দেশম বা ১২ আসন পাওয়া জেডিইউ-এর দাবিও আছে। জোট রাজনীতির অঙ্গ হিসেবে এবং এনডিএ-র প্রধান শরিক হিসেবে সঙ্গীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ সামাল দিতে হবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকেই। যত দক্ষতার সঙ্গে আসন্ন এই বিবাদ সামাল দেওয়া যাবে ততই সরকারের চলার পথ মসৃণ হবে। যদিও ইতিহাস বলে দপ্তর বন্টনের পরেই বিবাদ আসন্ন।

একথা সত্যি যে, সমস্ত জোটসঙ্গীদের বাস্তব অথবা অবাস্তব দাবি মেনে নেওয়া বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ মন্ত্রীসভার আয়তন নিয়ম মেনেই বজায় রাখতে হবে। নিয়ম অনুসারে যা লোকসভার মোট সদস্যের সর্বাধিক ১৫ শতাংশ হতে পারে। শেষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় ছিলেন ২৯ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৩ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ৪৭ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে সমস্ত জোট শরিকদের এবং নিজেদের দলেরও সব সাংসদকে এই মুহূর্তে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে তুষ্ট করা (পড়ুন মন্ত্রীত্ব দেওয়া) সম্ভব নয়। বাস্তব এটাই। ফলে এনডিএ শিবিরে অসন্তোষ যে আসন্ন তা বলার জন্য খুব বড়ো রাজনৈতিক বিশ্লেষক হবার প্রয়োজন পড়ে না।

অন্যদিকে ছোটো শরিকদের লক্ষ্য থাকবে এই সুযোগে দর কষাকষি করে যতটা লাভ নিজেদের ঝুলিতে ভরে নেওয়া যায়। কারণ আগামী দিনে এই সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনই নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব সংখ্যাগরিষ্ঠতা হীন বড় শরিকের সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে নিজেদের প্রাপ্য যতটা সম্ভব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবে ছোটো শরিকরা। তা সে রাষ্ট্রমন্ত্রীত্বই হোক অথবা কোনও কমিটির চেয়ারম্যান। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জটিল অঙ্ক সামলানোর পর শরিকদের তুষ্ট রাখার এই জটিল পাটিগণিত সামলানোই এখন বিজেপির সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ।

এর বাইরে আরও এক সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যে খেলা দেখা গেছে। রাজনৈতিক মহলে যার নামই হয়ে গেছে ‘অপারেশান লোটাস’। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র সহ একাধিক রাজ্যে এভাবেই নির্বাচিত সরকারের বদল ঘটানো হয়েছে। দল ভাঙা হয়েছে। এমনকি নিজেদের জোটসঙ্গী কিছু দলের সদস্যদেরও দল বদল করিয়ে নিজেদের পক্ষে আনার নজির আছে। বেশ কিছু রাজ্যে আবার এই পদ্ধতিতে সরকারের বদলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে অপারেশান লোটাস।

কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়িত্বের প্রশ্নে আরও একবার এই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যার বড়ো কারণ, যে কোনও মূল্যে আগামী দিনে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে সরকারকে নিরাপদে রাখতে চাইবে বিজেপি। সেক্ষেত্রে অতীত ইতিহাস মাথায় রেখে বিরোধী ইন্ডিয়া মঞ্চ তো বটেই, জোটসঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলিও যে সম্পূর্ণ নিরাপদ তা এখনই বলা যায় কি? সেক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি এখন নতুন আরও একটা কাজ হবে নিজ নিজ সাংসদদের চোখে চোখে রাখার দায়িত্ব পালন করা।

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রীসভা শপথ নেবে আগামী রবিবার, ৯ জুন। তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে এবার যবনিকা পতন এত তাড়াতাড়ি হবে না। বরং এবারের লোকসভা নির্বাচন যতটা ঘটনাবহুল ছিল, ওপিনিয়ন পোল থেকে শুরু করে এক্সিট পোল এবং ভোটগণনার দিন পর্যন্ত যেভাবে প্রতি মুহূর্তে একের পর এক পালাবদল হয়েছে, সমস্ত ভবিষ্যৎবাণী নস্যাৎ করে আমূল বদলে গেছে ফলাফল, সেভাবেই জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে আগামী দিনে আরও অনেক নাটক অপেক্ষা করছে বলেই মনে হয়।

- মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

ছবি প্রতীকী
যে শত্রুকে মোদী ভোলেন না, তাঁর বিরোধীরা ভুলে যান
ছবি প্রতীকী
Lok Sabha Polls 24: গণতন্ত্র কি বাঁচবে? বলে দেবে নির্বাচনের ফল

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in