Exclusive: ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪-০ বা ৩-১-এ জিততে পারে: গাভাস্কার

পঞ্চাশ বছর আগে, যখন অজিত ওয়াদেকারের নেতৃত্বে ভারত ইংল্যান্ডে খেলতে গেছিল। সেই প্রসঙ্গে ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান, বর্তমানে ধারাভাষ্যকার সানি গাভাস্কারের সাথে কথা বলেছেন সন্দীপ বামজাই।
সুনীল গাভাস্কার
সুনীল গাভাস্কারফাইল ছবি, দ্য কুইন্টের সৌজন্যে

পঞ্চাশ বছর আগে, যখন অজিত ওয়াদেকারের নেতৃত্বে ভারত ইংল্যান্ডে খেলতে গেছিলো এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছিল, সেই সময় তরুণ সুনীল গাভাস্কার, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, একনাথ সোলকার, অশোক মানকর এবং আবিদ আলি বিজয় মার্চেন্টের পরীক্ষা নিরীক্ষার স্তম্ভ ছিলেন।

রে ইলিংওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড তখন ভারসাম্যপূর্ণ দল। যারা অস্ট্রেলিয়াকে ২-০ ম্যাচে হারিয়ে অ্যাশেজ জিতেছিল। জন স্নো-র ফাস্ট বোলিং আক্রমণের সামনে ভারত জয়ের আশা করেনি। জন স্নো একাই ৩১ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিধ্বস্ত করেছিলেন। ওই সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে জিওফ বয়কট এবং জন এডরিচ দুরন্ত ফর্মে ছিলেন।

তবুও, ভারত, প্রথম দুটি টেস্ট ড্র করার পর, ওভালে ভাগবত চন্দ্রশেখরের গুগলি ব্যবহার করে জিতেছিল। অধিনায়ক ওয়াদেকার নিজে গাভাস্কারের সাথে সেই সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করেছিলেন। সেই স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে, ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান, বর্তমানে ধারাভাষ্যকার এসএমজি বা সানি গাভাস্কারের সাথে কথা বলেছেন সন্দীপ বামজাই।

সেই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ:

প্রশ্ন: ১৯৭১ সালের সেই সফরে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই আপনার মত তরুণ, এবং ইংল্যান্ডে আপনার প্রথম খেলতে নামা। সেই সফরে ছিলেন 'কাকা' (অশোক মানকর) সহ অন্যান্যরা। সেই সফরের কিছু স্মৃতি …

উত্তর: আমার প্রথম ইংল্যান্ড সফর ছিল ৫০ বছর আগে এবং আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে এসেছিলাম, তাই আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এই দল ছিল তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার একটি দুর্দান্ত মিশ্রণ এবং এই সফর ছিল এক মজার সফর। যেহেতু কাউন্টি দলের বিপক্ষে প্রচুর ম্যাচ ছিল, তাই আমরা পুরো ইংল্যান্ড এবং সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল, লন্ডন চিড়িয়াখানা, অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও অনেক জায়গা দেখতে পেয়েছিলাম। দিনে এক পাউন্ডের টাইট বাজেটে থাকার কারণে, আমরা সেভাবে খাবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারিনি। তাই ফাস্ট-ফুড আউটলেটগুলোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।

প্রশ্ন: আপনি প্রায়ই বলেন যে আপনার সেরা টেস্ট ইনিংস ইংলিশ সিমারদের বিপক্ষে প্রতিকূল অবস্থায় হাফ সেঞ্চুরি করা। সেই সফরে জন স্নো-এর সাথে মুখোমুখি হবার অভিজ্ঞতা যদি কিছু বলেন ...

উত্তর: হ্যাঁ, সেই হাফ সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটে আমার সেরা প্রচেষ্টা। আমরা প্রথমবার সবুজ উইকেটে খেলছি। ওপরের তলায় আমাদের ড্রেসিং রুম থেকে আমরা আউটফিল্ডের বাকি অংশ এবং পিচকে আলাদা করতে পারিনি। মেঘলা আবহাওয়া বলতে বোঝায় যে ঘাস শুকায়নি এবং সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেও আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করেননি। হালকা বৃষ্টি পিচকে সতেজ করছিল এবং বলও সুইং এবং বাউন্স করছিল। এ কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে এটাই আমার সেরা ইনিংস।

প্রশ্ন: সেই সফরের এমন কোনো অজানা দিক, এমন কিছু যা আপনাকে ইংরেজ দল বা খেলার বিষয়ে আঘাত করেছিল?

উত্তর: আমাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছিল পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং। আমরা ইংলিশ আম্পায়ারদের সেরা হওয়ার গল্প শুনেছি, কিন্তু আমরা তিনটি টেস্ট ম্যাচে যা দেখেছি তাতে আম্পায়ারিং কল সবসময় হোম টিমের পক্ষে গেছিলো। কিন্তু যখন আমরা কাউন্টি দলের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তখন ইংলিশ আম্পায়াররা, যারা সকলেই প্রাক্তন প্রথম শ্রেণীর খেলোয়াড় ছিলেন, খুব ভালো ছিলেন। সবচেয়ে উৎসাহদায়ক ছিল যদি আপনি দিনের খেলার পরে তাদের কাছে কোন পরামর্শের জন্য যেতেন তাহলে আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতেন।

প্রশ্ন: ১৯৭৪ সালের পরের সফরে আমাদের ফলাফল এত খারাপ হয়েছিলো কেন?

উত্তর: ১৯৭৪ সালে, আমরা ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মের প্রথমার্ধে খেলেছিলাম। যখন পিচ এবং বোলাররা ছন্দে ছিল। ফলে আমাদের ব্যাটিং লাইন আপ বিশেষ কিছু করতে পারছিলো না। এছাড়াও তখন আমাদের স্পিনাররা প্রচন্ড ঠান্ডায় বল ধরতে হিমশিম খাচ্ছিল।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বর্তমান পাঁচ টেস্ট সিরিজে এখনকার দল এবং তার সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?

উত্তর: এই বর্তমান দলটি সম্ভবত ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা। শুধুমাত্র ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত দলের একই ধরনের গভীরতা এবং ভারসাম্য ছিল। যদিও এই দল আরও ভাল। কারণ তারা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করেছে এবং ব্যাট এবং বল দুই ক্ষেত্রেই আরো অভিনবত্ব এনেছে।

যদি রোদ ওঠে তাহলে সহজেই সিরিজ জিততে পারবে এবং যদি কিছু মেঘলা দিন থাকে, তাহলে এই দল জিতবে। কিন্তু কোনো টেস্ট হারতেও পারে।

প্রশ্ন: ডব্লিউটিসি ফাইনালে আমরা কী ভুল করেছি - কোন সিম বোলার না খেলিয়ে, নাকি দুই স্পিনার খেলিয়ে অথবা আবহাওয়া বুঝে টিম কম্পোজিশন না করে?

উত্তর: ডব্লিউটিসি ফাইনালের সময় মূল বিষয় ছিল নিউজিল্যান্ড এই দেশে খেলতে অভ্যস্ত, তাই তারা ভারতীয়দের চেয়ে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত, দুই দলের মধ্যে ফারাক খুবই কম ছিল।

প্রশ্ন: ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ইংল্যান্ডের উইকেটে দ্রুত বল খেলতে পারে না কেন? ব্যাটসম্যানরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়?

উত্তর: ইংল্যান্ডে সিমিং বল খেলা কারো পক্ষে সহজ নয়, এমনকি ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের জন্যও। সুতরাং ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দোষ দেওয়া যাবে না। শরীরের কাছাকাছি খেলা এবং যথাসম্ভব দেরি করে বল খেলতে পারলে অবশ্যই স্কোরের পার্থক্য হবে।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের পারফরমেন্স এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের পারফরমেন্স সম্পূর্ণ আলাদা। ২০০৭ সাল থেকে ভারত জেতেনি এবং আমাদের রেকর্ড খুবই খারাপ। ব্যতিক্রম অবশ্যই ১৯৮৬। যেখানে সিম/সুইং বোলিং আক্রমণের সাহায্যে আমরা জিতেছিলাম।

উত্তর: বেন স্টোকস, জোফরা আর্চার ও ক্রিস ওকসের প্রভাব ছাড়া ইংল্যান্ড দল এবং তাদের ব্যাটিং-এ অধিনায়ক জো রুট, জোকস ব্রিটল ছাড়া অনেকটাই কম শক্তিশালী। তাই এবার দান উলটে দেবার এবং জয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে ভারতের।

প্রশ্ন: আপনি কোন ধরনের দল গঠনের পরামর্শ দেবেন?

উত্তর: দলের গঠন সর্বদা পিচ এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে। তাই প্লেয়িং একাদশ কেমন হওয়া উচিত তা বলা মুশকিল। ঋষভ পন্থ খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাটিং করছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে অতিরিক্ত সিমার বা স্পিনার খেলানোর বিকল্প রয়েছে।

প্রশ্ন: এই দলের কি ইংল্যান্ডে ইংল্যান্ডকে হারানোর সম্ভাবনা আছে? আপনি কী মনে করেন ?

উত্তর: এই দল অবশ্যই ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে। আমার ভবিষ্যদ্বাণী হল ৪-০ যদি সূর্যের আলো বেশিরভাগ দিনে থাকে অথবা ৩-১ যদি ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে।

প্রশ্ন: চেতেশ্বর পূজারা এবং অজিঙ্কা রাহানের মতো ব্যাটসম্যানদের জন্য আপনার পরামর্শ, যারা প্রযুক্তিগত নিখুঁত খেলা খেলেও হারিয়ে যায়? রাহানের মতো একজন ব্যাটসম্যান যাকে উইলিয়ামসন বাম্পার দিয়ে আউট করেছে WTC ফাইনালে...

উত্তর: এঁদের ব্যাটিং কোচ আছে, তাই তাদের পরামর্শের প্রয়োজন হলে তাদের কাছে যাওয়া উচিত।

- with inputs from IANS

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in