CPB: ৭৫ বছরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি: রাজনৈতিক গন্তব্য প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্ন

প্রতিষ্ঠা থেকে কমিউনিস্ট পার্টি পাকিস্তান আমলে বা বাংলাদেশ আমলে কখনো এককভাবে বা জোটগতভাবে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও পাকিস্তানের এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছে।
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকায় সিপিবি-র মিছিল
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকায় সিপিবি-র মিছিলছবি - সিপিবি ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

 গত ৬ মার্চ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বয়স হিসেবে ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে সিপিবি দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন। বাংলাদেশের জন্মের পেছনে ও জন্মের পরে দেশটির রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে, জনগণের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সিপিবির লাল পতাকা সবার আগে ছিল, এখনো আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কমিউনিস্ট পার্টি পাকিস্তান আমলে বা বাংলাদেশ আমলে কখনো এককভাবে বা জোটগতভাবে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও পাকিস্তানের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে নীতি নির্ধারণী ভূমিকাও পালন করেছে।

পাকিস্তান আমলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে ১১ দফা ভিত্তিক গণঅভ্যুত্থান এসব কিছুই ছিল কমিউনিস্ট পার্টির রূপরেখায় এবং তাদের ছাত্র গণসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের সংগঠিত আন্দোলন। বলতে গেলে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আাদয়ের কোনো আন্দোলনই কমিউনিস্ট পার্টি বাদে হয়নি। তবে সামনের দিনে হবে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে।

এমন সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দল কমিউনিস্ট পার্টি যখন তার ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করলো তখন বাংলাদেশ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সামাজিকভাবে গভীর সংকটের সম্মুখীন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো রাজনৈতিক সংকট। গণতান্ত্রিক যে রাজনীতি তা কার্যত এই মূহুর্তে বাংলাদেশে অনুপস্থিত।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইকনমিস্ট-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক, ফ্রিডম হাউসের বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক মতে বাংলাদেশ পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ তো নয়ই, বরং ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশও নয়। দেশটি ‘হাইব্রিড রেজিম’ ভুক্ত দেশের তালিকায় রয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত-বিচার বিভাগ, সংবাদমাধ্যম, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয়করণ হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম স্বাধীন নয়। তথা কাগজে-কলমে গণতান্ত্রিক দেশ হলেও কার্যত গণতন্ত্র এখানে প্রাতিষ্ঠানিক ফরমেশনে বা রাজনৈতিকভাবে আর চর্চা হচ্ছে না। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে সিপিবিও আন্দোলন করছে। দলটি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন বলে আখ্যা দিচ্ছে।

কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, সিপিবি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন বললেও দিন শেষে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। হতে পারে তারা কোনো ভূমিকা পালন করছে না। এমনকি ভবিষ্যতে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে বলেও কোনো সম্ভবনা অন্তত দেখাতে পারছে না। বলতে গেলে ৭৫ বছর বয়সে এসে সিপিবি এক বুড়ো হাতিতে পরিণত হয়েছে। দলটি এগিয়ে চলছে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক গন্তব্যের দিকে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে যেখানে বামপন্থী দলগুলোকে একত্রিত করে সিপিবির নেতৃত্বে বাম শক্তির উত্থান ছিল সময়ের দাবি সেখানে বতর্মান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনৈতিক বাইনারিতে সিপিবিসহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনীতির মাঠে জনগণের মাঝে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। বর্তমানে সিপিবিসহ অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জুবুথুবু কাঠামোগতভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারলেও অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। স্রোত-প্রবাহহীন এক বদ্ধ খালে পরিণত হয়েছে। নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে বের হতে পারছে না।

বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি চলছে তার সমাধানকল্পে সিপিবিসহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলো সেখানে জনগণের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা তুলে ধরতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক সংকটের সময়ে সিপিবি বা বামপন্থী দলগুলোর কাছে তেমন রূপরেখা কাম্য ছিল। সিপিবি সেই আশা পূরণ করতে পারেনি। বরং হয়েছে উল্টো। সিপিবি যে ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সরকার ও সাংবিধানিক সংস্কারের কথা বলে এসেছে ঠিক তেমনটা না হলেও তার কাছাকাছি একটি রূপরেখা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। রাজনৈতিক মেরিটের জায়গায় সিপিবি যেখানে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারতো সেখানে তারা পিছিয়ে গিয়েছে বলতেই হয়। এই বলাটা ভুলও নয়। ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেবলই দলীয় রুটিন ওয়ার্কের বাইরে দেশের মানুষের কাছে তেমন কোনো আবেদন রাখে না।

ইতিহাসের সাক্ষ্য হচ্ছে, যখনই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাসের সূচনার মুর্হূত এসেছে তখন সিপিবি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পরে বিভক্ত হয়েছে আর নয়তো ভুল রাজনৈতিক লাইন নিয়েছে।

গত শতকে ষাটের দশকে যখন বাংলাদেশে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন ১৯৬৫ সালে চীন-রাশিয়ার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সিপিবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। সিপিবির এই ভাঙনের শিকার হয় তার বিভিন্ন গণসংগঠনগুলোও। সে সময় সিপিবির ভাঙনের শিকার হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল নেতৃত্বের জায়গা থেকে ছিটকে যায় অত্যন্ত সুসংগঠিত এই ছাত্র সংগঠনটি। একইভাবে ১৯৯১ সালেও যখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারার নতুন বন্দোবস্তু হচ্ছিল তখন আরেকবার ভাঙনের শিকার হয় সিপিবি। সেই জের পরে তার অন্যান্য গণসংগঠনেও। সে সময় ছাত্র ইউনিয়নও আরেকবার ভাঙনের শিকার হয়।

এখন যখন বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি গভীর সংকটে তখন সিপিবি ম্রিয়মাণ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সিপিবির দ্বাদশ জাতীয় কংগ্রেস ঘিরে দলটিতে আবারও ভাঙনের গুঞ্জন উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভাঙন এড়াতে পারলেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। সিপিবির অভ্যন্তরীণ কোন্দল শেষ পর্যন্ত ভাঙন পর্যন্ত না গড়ালেও দলটির ছাত্র গণসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, গার্মেন্টর্স শ্রমিকদের সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ (টিইউসি) অন্যান্য গণসংগঠনেও কোন্দল ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত তার ৭১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখী। বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়নের কোনো কেন্দ্রীয় কমিটির অস্তিত্ব নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে, সিপিবির অভ্যন্তরে দুই অংশের প্রভাবে ছাত্র ইউনিয়নও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এই বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলের পর। সেই কাউন্সিলের পর ছাত্র ইউনিয়নের দুটি কমিটি হয়। ৭১ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ভাগ হয়ে যায় ছাত্র ইউনিয়ন। দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর বিভক্ত থাকার পর সিপিবির নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছাত্র ইউনিয়নকে একত্রিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।

গত ১৯ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের বিবাদমান দুই অংশকে একত্রিত করে ৪১তম জাতীয় কাউন্সিল শুরু হয়। কিন্তু দুই অংশের দ্বন্দ্বের নিরসন না হওয়ায় নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন না করেই ৪১তম জাতীয় কাউন্সিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। ফলে ছাত্র ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সিপিবির যে প্রচেষ্টা তা এক রকম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

একইভাবে সিপিবি রাজনৈতিক সংকটের মুর্হূতে ভুল রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণ করেছে। যদিও পরবর্তীতে সিপিবির নেতৃত্ব সেই ভুল সিদ্ধান্তের কথা স্বীকারও করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিপিবির নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের সাথে ঐক্য করে। তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। মাঠে তেমন কোনো বিরোধী দল ছিল না। মওলানা ভাসানী ছিল সুপরিচিত ও মোটামুটি জনসম্পৃক্ত একমাত্র বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ততদিনে কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়ে ম্রিয়মান হয়ে গেছে। অনেকেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব সরকারের সামনে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল ছিল না। সে সময় সিপিবি সরকার দলের সাথে ঐক্য না করে মাঠে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পরতো। তাতে যেমন সরকার রাজনৈতিকভাবে দক্ষ বিরোধী দল পেত এবং তা সদ্য স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করত। কিন্তু সে সময় সিপিবির নেতৃত্ব সেই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ফলে যারা মুজিব সরকারকে পছন্দ করতো না বা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করতো না কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, স্বাধীন দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তখন তারা এক রকম রাজনৈতিক গন্তব্যহীন হয়ে পরে।

তখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ভেঙে একটি অংশ বের হয়ে গিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। জাসদ ছিল ছাত্রলীগের সমাজতন্ত্রপন্থী অংশের দল। সদ্য ছাত্র রাজনীতি শেষ করে আসা চোখে-মুখে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে গঠিত তরুণ রাজনৈতিক নেতাদের দল জাসদ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাবে ও হটকারী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাপক জন সম্পৃক্ততা লাভের পরও সরকার বিরোধী রাজনীতিতে বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া তখন মুজিব সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে জাসদ এক রকম নিষিদ্ধ দলের মতো হয়ে যায়। দলটি আন্ডারগ্রাউন্ড দলে পরিণত হয়। এরপর আর দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ভাঙনে ভাঙনে এখন আসল জাসদ খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

সিপিবির নেতৃত্বের ভুল রাজনৈতিক লাইনের ফলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের কার্যকর কোনো বিরোধী দল গড়ে উঠেনি। কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশও হয়নি। বরং যে সকল তরুণ ছাত্র-যুবা সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিল তারা মাঠে তেমন কোনো সমাজতান্ত্রিক দলের উপস্থিতি না পেয়ে জাসদে ভীড় জমায়। কিন্তু জাসদ নেতৃত্ব সেই তরুণ ছাত্র-যুবাদের আকাঙ্খা পুরনো ব্যর্থ হয়। সদ্য স্বাধীন দেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা তরুণদের মাঝে হতাশা-ব্যর্থতা ভর করে।

একইভাবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আওয়ামী লীগসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ (বাকশাল) গঠন করে তখন সিপিবিও সেই বাকশালে নিজেদের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে অংশগ্রহণ করে। যদিও বর্তমান সিপিবির নেতৃত্ব দাবি করে তারা প্রকাশ্যে দল বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও গোপনে দলের অস্তিত্ব রেখেছিল। তবে সেই সময়ে বাকশাল যে ভুল পদক্ষেপ ছিল সেটাও তারা স্বীকার করেন।

একইভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সিপিবির নেতৃত্ব সঠিক রাজনৈতিক লাইন নিয়ে জনগণের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারছে না। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির যে দ্বি-দলীয় রাজনীতি তার বাইরে সিপিবি নিজের কোনো অবস্থান জনগণের মাঝে জানান দিতে পারছে না। ৭৫ বছরে তাহলে সিপিবি কী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন নয়? আগামী দিনে সিপিবির রাজনৈতিক গন্তব্য কী সেটাও তার কর্মীদের সামনে স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ৭/৮ মাস। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে দলীয় সরকারের অধিনেই নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানে আছে। তাদের দেশী-বিদেশি মিত্রদের সাথে সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সংগঠন গুছানো সহ দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে ভোটও চাইছে।

অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবে না বলছে। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করার কথাও বলছে দলটি। সমমনস্ক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করছে। ফলে প্রধান দুই দল এবং তাদের জোট সঙ্গী ও সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে।

সেই মুহূর্তে সিপিবি বা বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে সারাদেশের মানুষ তো দূরে থাক তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনও পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে তাদের অবস্থান কী হবে, তারা কী করতে চায়, নির্বাচন ঘিরে কী তাদের কর্মসূচি সেটাও স্পষ্ট করেনি। ফলে এই প্রশ্ন ওঠা খুবই প্রাসঙ্গিক যে, ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিপিবি দেশের মানুষের কাছে ও তার দলী নেতাকর্মীদের কাছে আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে সুস্পষ্ট কী রাজনৈতিক লাইন তুলে ধরেছে? ৭৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটি কি বুড়ো হাতিতে পরিণত হয়েছে? মৃত্যু তথা বিলুপ্তি ছাড়া সিপিবির রাজনৈতিক গন্তব্য কী?

- লেখক বাংলাদেশ-এর সাংবাদিক, মতামত লেখকের নিজস্ব

আরও পড়ুন

গত ১২ জানুয়ারি ঢাকায় সিপিবি-র মিছিল
Joshimath: যোশীমঠ তলিয়ে যাচ্ছে কেন?
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকায় সিপিবি-র মিছিল
CHAT GPT: চ্যাট জিপিটি : আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজ্যান্স এর নতুন বরদান...নাকি অভিশাপ ?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in