মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হিংসা প্ররোচনার কথা বলছেন, মানুষের কাজের কথা বলছেন না - মহম্মদ সেলিম

সরকারের যা করার কথা ছিলো সরকার সেটা করেনি। নির্বাচনে আমরা কর্মসংস্থানের কথা বলছি। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী নানারকম উস্কানি, হিংসা প্ররোচনার কথা বলছেন অথচ মানুষের কাজের কথা একবারের জন্যেও বলছেন না।
সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম
সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম নিজস্ব চিত্র

করোনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলো তখনও একদিনে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার সংক্রমণ হয়নি। অন্যদিকে গত দু সপ্তাহে আমাদের দেশে বেকারি বেড়েছে ৬.৮ % থেকে ৮.৬%। কখনও এত দ্রুত বেকারি বাড়েনি। বহু মানুষ কাজ হারানোর ভয়ে ভীত। সরকারের যেটা করার কথা ছিলো সরকার সেটা করেনি। এখনও করছে না। এই কারণেই নির্বাচনে আমরা কর্মসংস্থানের কথা বলছি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী নানারকমের উস্কানি, হিংসা প্ররোচনার কথা বলছেন। কিন্তু মানুষের কাজের কথা একবারের জন্যেও বলছেন না। বুধবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দলীয় দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

দেশের উদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন - আমাদের দেশের এবং রাজ্যের সরকার ১৫ মাস সময় পেয়েছিলেন। আমরা থালি তালি বাজানোর সময় থেকে বারবার বলেছিলাম টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এগোতে হবে। আজ গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ – সব জায়গাতেই হাসপাতালে জীবন্ত মানুষ জায়গা পাচ্ছেন না। আর শ্মশানে, কবরস্থানে মৃতদেহের ভিড়।

তিনি আরও বলেন - কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমরা যখন মানুষের কাজের কথা বলেছিলাম তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন – শ্মশান আর কবরস্থানের কথা বলতে। আজ গোটা দেশে শ্মশান আর কবরস্থানের কথা বলা হচ্ছে। গুজরাট মডেলের কথা বলেছিলেন। সত্য গোপন করেছিলেন। পি এম কেয়ারস ফান্ড নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নকল ভেন্টিলেটর মেশিন উদ্বোধন করে বিখ্যাত হয়েছেন, টেস্ট কিট আর চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে, সেখানে সুরাটের মত শহরে, অন্য শহরে লাগাতার চুল্লি জ্বলার ফলে মৃতদেহ রাখার যে লোহার ট্রে তা গলে গেছে। সৎকারের সংখ্যা চারগুণ বেশি বেড়েছে। সরকার সত্য গোপন করছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারকে নতুন শ্মশান বাড়াতে হচ্ছে। আর গুজরাটে সরকারি হাসপাতালে যজ্ঞ হচ্ছে। পাঁপড় ভেজে খাবার কথা, গোবরে স্নান করার কথা, গোমূত্র পান করার কথা, রামদেবের কোরোনিল, আয়ুষ মন্ত্রকের কথা তো আমরা অনেক শুনেছি। এ তো আমরা অনেক শুনেছি।

করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন - মানুষের ভিড় কিন্তু ভ্যাক্সিন নেই। ভ্যাক্সিন নিয়ে রাজনীতি করেছে। অথচ ভ্যাক্সিনের সাপ্লাই, বিতরণ নিয়েও সরকার অন্যায় করছে। ভ্যাক্সিন নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করছে। ভ্যাক্সিন নিয়ে শুধু নয়, গোটা কোভিড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এই রাজ্য, দেশে যা বলা হয়েছে সেটা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। ঘটা করে বিজ্ঞাপন হয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন নেই। রাজ্যে নাকি আগামী দুদিন পরেই ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন - আমরা পরবর্তী পর্যায়ের প্রচারে বড় ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো। বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দেব। আমরা মানুষের হক নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবো। রেশন, খাদ্য নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা গত একবছর ধরে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছি। সরকার এই ব্যাপারে উদাসীন থাকলেও মানুষ উদাসীন থাকতে পারেনা।

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন - নির্বাচন কমিশন নানান ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। যেমন ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের বাড়ি থেকে ভোট দেবার ব্যবস্থা করা। আগামী চার পর্বে তালিকা নির্ভুল করে যারা অসহায়, বয়স্ক তাঁরা যাতে নিজের বাড়িতে ভোট দিতে পারেন তারজন্য নির্ভুল তালিকা তৈরি করা দরকার। এর আগের পর্যায়গুলোতে অনেকেই বাদ পড়ে গেছেন।

কমিশনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন - তবে নির্বাচন কমিশনের একচোখোমি, সরকার মুখাপেক্ষী থাকা খুব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল ফোর্সের গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেলেন। আমরা তদন্তের কথা বললাম। এখনও সেই তদন্ত হয়নি। অথচ বিজেপি নেতারা কোথায় গুলি করতে হবে বলে দিচ্ছেন। কতগুলো শীতলখুচি ঘটবে সেটা বলে দিচ্ছেন। শুধু কমিশনের নোটিশ দিলে হবে না। যারা মানুষের লাশ ফেলতে চাইছে, খুন করার প্ররোচনা দিচ্ছে, গুলি চালানোর কথা বলছে, এবং অনেকেই ভাব দেখাচ্ছেন এমন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নন, যারাই গলায় ফেট্টি বেঁধে নিয়েছেন তারাই সব এক একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে গেছেন পাড়া পাড়ায়। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম) নেতা বলেন - মৃত্যু নিয়ে লাশ নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাঁদের পরিসমাপ্তি সেখানেই হয়। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবেন, তার বাঁচার রসদ - সেই ব্যাপারে যারা একটা কথাও উচ্চারণ করছেন না তাঁরা লাশ দেখিয়ে সমবেদনা চাইছেন। মানুষ জানে বিজেপি তৃণমূলের এই প্রতিযোগিতামূলক হিংসার রাজনীতির কথা।

তিনি আরও বলেন - প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী – তিনজনের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করা উচিৎ। যেদিন ভোট সেদিন প্রধানমন্ত্রী এখানে চলে আসছেন। আমরা কমিশনে এর বিরুদ্ধে বলেছি। যেটা করা হয়েছে সেটাকে নিষেধাজ্ঞা বলে না। সত্য উদ্ভাসিত হচ্ছে। মিথ্যার ফানুস ফাটছে। করোনা নিয়ে যা বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের বিষয়ে, শিল্পের বিষয়ে যা যা বলেছেন সেই ঢাক ফাটছে।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in