AIKS: ‘সব গ্রামে কৃষক সভা, সব কৃষক কৃষক সভায়’ - প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্মেলনে উঠলো স্লোগান

সম্মেলনে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিপ্লব মজুমদার। অমল হালদার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। ১১৪ জনের রাজ্য কাউন্সিল, ৫৬ জনের রাজ্য কমিটি এবং ২৩ জনের সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন হান্নান মোল্লা
সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন হান্নান মোল্লাছবি শংকর মুখার্জি
Published on

হারানো জমি ফিরে পেতে ‘সব গ্রামে কৃষক সভা, সব কৃষক কৃষক সভায়’-র স্লোগান দিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভা। গ্রামাঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলায় এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তনে গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ বিশেষকরে গরিব-মাঝারি কৃষক, খেতমজুর এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সংগঠিত করার দিকে তারা নজর দেবে। রাজ্য ৩৭ তম সম্মেলনেই এইসব ঠিক করেছে প্রাদেশিক কৃষক সভা।

২২ থেকে ২৪ অক্টোবর হাওড়ার শরৎ সদনে হয় এই সম্মেলন। প্রসঙ্গত, সারা ভারত কৃষক সভার এ রাজ্যের শাখা হলো পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভা। হরিয়ানার হিসারে এআইকেএস'র শেষ সর্বভারতীয় সম্মেলনে এই স্লোগান উঠেছিল। এবার রাজ্য সম্মেলনেও গ্রামাঞ্চলে জমি পুনরুদ্ধারে সেই স্লোগানকেই হাতিয়ার করল প্রাদেশিক কৃষক সভা।

দিল্লিতে গত এগারো মাস ধরে চলছে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন। সেই কৃষক আন্দোলনের মধ্যেই এই সম্মেলন। যদিও সেই আন্দোলনের আঁচ সেভাবে এরাজ্যে পড়েনি। ওই আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি এরাজ্যে পালিত হয় ঠিকই, কিন্তু সেসবই সংহতিমূলক কর্মসূচি। এই আন্দোলনকে গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনে কাজে লাগাতে চায় কৃষক সভা। সেই লক্ষ্যেই ওই সংহতিমূলক কর্মসূচিকে সংঘর্ষমূলক কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

তৃণমূল দল মুখে দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে। কিন্তু বাস্তবে যখন রাজ্যে ওই সংহতিমূলক কর্মসূচিগুলি এরাজ্যে পালিত হয়, তখন তৃণমূল সরকারের পুলিশ তার ওপর দমনপীড়ন চালায়, আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে। আইনি ঝামেলায় ফেলে। তৃণমূলের এই দ্বৈত চরিত্র তুলে ধরতেই আন্দোলন কর্মসূচিগুলিকে সংঘর্ষমূলক স্তরে উন্নীত করতে চায় তারা।

সম্মেলনে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিপ্লব মজুমদার। অমল হালদার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। ১১৪ জনের রাজ্য কাউন্সিল, ৫৬ জনের রাজ্য কমিটি এবং ২৩ জনের সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে।

রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠায় গত শতকের ষাটের-সত্তরের দশকের কৃষক সভার জমির আন্দোলনের বিরাট প্রভাব ছিল। আর বামফ্রন্টও সরকারে এসে ভূমিসংস্কার আইন কার্যকর করা, পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠা, গ্রামোন্নয়নের কাজে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়। লক্ষ লক্ষ ভূমিহীন কৃষক জমি পায়, বর্গা রেকর্ড হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়,আয় বাড়ে কৃষকের, গ্রামের চেহারা পাল্টায়। এর পলিটিক্যাল ডিভিডেন্ড বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করেছে।

বামফ্রন্টও সরকারে এসে ভূমিসংস্কার আইন কার্যকর করা, পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠা, গ্রামোন্নয়নের কাজে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়। লক্ষ লক্ষ ভূমিহীন কৃষক জমি পায়, বর্গা রেকর্ড হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়,আয় বাড়ে কৃষকের, গ্রামের চেহারা পাল্টায়।

২০০৬ সালের পর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে মমতা ব্যানার্জির শিল্পবিরোধী নেতিবাচক জমির আন্দোলন সেইখানেই আঘাত করে। পরিণতিতে পতন ঘটে বামফ্রন্ট সরকারের। কোটির বেশি সদস্য সংখ্যা, প্রায় সব গ্রামে গ্রাম কমিটি থাকা সত্ত্বেও মমতার আন্দোলনে গ্রামের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিল, বামফ্রন্টের থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণেই যে এসব মোকাবিলা করা যায়নি তা অনেক আগেই মূল্যায়ন করেছে কৃষক সভা।

রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর গঙ্গা দামোদর রূপনারায়ণ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বামফ্রন্টের পক্ষে জনসমর্থন হ্রাস পেতে পেতে একেবারে তলানিতে এসেছে। রাজ্য বিধানসভায় স্বাধীনতার পর এই প্রথম বামপন্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অমল হালদার সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্যের কৃষি-কৃষক যে সংকট মুক্ত–তা একেবারেই নয়। সারাদেশের মতো এখানেও কৃষকরা ফসলের দাম পায় না। সরকারি শস্য ক্রয়ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। যতটুকু আছে সেখানেও ফড়ে-দালালদের একচেটিয়া দাপট। এদের মাথায় শাসকদলের হাত রয়েছে – তাই এতো দাপট।

তিনি আরও বলেন, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে মাইক্রো ফিনান্স কোম্পানিগুলির চড়া সুদে গরিব কৃষি পরিবারগুলি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। সরকার একেবারেই নিশ্চুপ। বিএলআর দপ্তরগুলি দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাদের সাহায্যে গরিব কৃষকদের জমি লুট চলছে। এবছর বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ বৃষ্টিতেই বানভাসি হওয়াটাই এখন পশ্চিমবঙ্গে দস্তুর। সেচ খালগুলির দীর্ঘদিনধরে কোনো সংস্কার হয়নি। এবারে আট-দশটা জেলায় বন্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সরকার উৎসবে যতোটা মেতেছে, তাদের নজর ততোটাই কম থেকেছে বন্যা দুর্গত মানুষের ত্রাণ-উদ্ধারে। এই সব ইস্যু নিয়েই আগামীদিনে আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অমল হালদার।

অমল হালদার বলেন, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে মাইক্রো ফিনান্স কোম্পানিগুলির চড়া সুদে গরিব কৃষি পরিবারগুলি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। সরকার একেবারেই নিশ্চুপ। বিএলআর দপ্তরগুলি দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

গত ২০ মাস ধরে মহামারীতে আক্রান্ত রাজ্য ও দেশ। এই পরিস্থিতিতেও রাজ্যে সদস্য সংগ্রহ প্রায় ধরে রাখতে পেরেছে কৃষক সভা। অমল হালদার জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ সালে এরাজ্যে সদস্য সংগৃহীত হয়েছিল ৪১ লক্ষ ৫৪ হাজার। কোভিডের বছর ২০২০-২১-শেতে হয় প্রায় ৪০ লক্ষ ৬৯ হাজার। এবছর এই সংখ্যা অতিক্রম করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজ্যের অন্য জেলার মতো হাওড়া জেলার কয়েকটি ব্লক বন্যায় কবলিত। তা সত্ত্বেও সম্মেলনের আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্মেলনের জন্য গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সম্মেলনের জন্য তারা ২৮ হাজারেরও বেশি গ্রামীণ পরিবারের কাছে গেছে সম্মেলনের বার্তা নিয়ে এবং তারা অর্থ সাহায্যও করেছেন।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in