
ছাব্বিশে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এটাই শেষ দুর্গাপুজো। ভোটের দিকে নজর রেখে ৮৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে পুজো অনুদান ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক ধাক্কায় ৩০ শতাংশ অনুদান বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ এবার ৪৫ হাজার ক্লাবের জন্য রাজ্যের কোষাগার থেকে অনুদান বাবদ খরচ হবে ৪৯৫ কোটি টাকা, গত বছরের তুলনায় ২০০ কোটি টাকা বেশি। আর এরপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানো নিয়ে জুন মাসেই কোষাগারের ঘাটতির কথা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিয়ে ছ'মাসের সময় চেয়েছিল রাজ্য। তাহলে কীভাবে ক্লাব ও কমিটিগুলোর অনুদান ৩০ শতাংশ বাড়ালো?
২০১৮ সাল থেকে দুর্গাপুজোয় কমিটি ও ক্লাবগুলির জন্য অনুদান চালু করে রাজ্য সরকার। সেবার ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে সেটাকে একধাক্কায় বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ২০২০ সালে বিধানসভা ভোটের আগে সেটা বেড়ে হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। এভাবে বাড়তে বাড়তে ২০২৪ সালে হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। সেসময়ই জানিয়ে দিয়েছিলেন ২০২৫ সালে অনুদান ১ লক্ষ টাকা করা হবে। কিন্তু আরও ১০ হাজার বাড়িয়ে এবার অনুদান ১ লক্ষ ১০ হাজার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা ও রাজ্যের পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে পুজোর সমন্বয় বৈঠকে একথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়। এবছর বিদ্যুৎ বিলের মাত্র ২০ শতাংশ টাকা সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানিকে দেবে পুজো কমিটিগুলি। এবার ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ ছাড়ের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এদিন বৈঠকে এই ছাড়ের জন্য সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর এরপরেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। ২৭ জুনের মধ্যে রাজ্যের ডিএ'র ২৫ শতাংশ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সময়সীমা পার হওয়ার দিনই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন জমা দিয়ে কোষাগারের ঘাটতির কথা জানিয়ে বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য ছ'মাস সময় চায় রাজ্য। সেই মামলার শুনানি চলছে শীর্ষ আদালতে। আইনজীবী মহলের বক্তব্য, শীর্ষ আদালতের শুনানিতে নিশ্চিতভাবে সরকারের ক্লাবকে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠবে।
এনিয়ে সিপিআইএম রাজ্যসভার সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "সরকার যে পুজো কমিটিকে টাকা দিচ্ছে তার উৎস কী? মুখ্যমন্ত্রী তো ধার করে দিচ্ছেন। যাঁরা পুজো করছেন, যাঁরা পুজো করছেন না, সকলের ঘাড়েই ধারের বোঝা চাপছে। সরকারি কর্মচারী আর বিশেষ করে যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, যাঁরা পেনশনের ওপর জীবনযাপন করেন, তাঁদের ভাঁড়ারে টান পড়ে গিয়েছে। তাঁরা ডিএ না পেয়ে কষ্টে আছেন। টাকা নেই বলে তাঁদের ন্যায্য ডিএ সরকার দিচ্ছে না। আসলে সরকার ধর্মীয় নেশায় মানুষকে আটকে রাখতে চাইছে।"
শুধু ডিএ নয়, গত ফেব্রুয়ারিতে বাজেট অধিবেশনে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ফোন দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। এর জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাঁচ মাস হয়ে গেলেও, এখনও পর্যন্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হাতে স্মার্ট ফোনের টাকা তুলে দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। এমনকি ২০২১ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক থেকে এরাজ্যের ৭০ হাজার আশাকর্মী ও প্রায় ১ লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর প্রত্যেকের জন্য ৮ হাজার টাকা করে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। সেই টাকাও এখনও হাতে পাননি অঙ্গনওয়াড়ি থেকে আশা'র কোনও কর্মীই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন