
"কয়লা খনি চাই না!" দেউচা-পাঁচামী অঞ্চলের পাঁচামীর আদিবাসী মহিলারা আবারও স্পষ্ট করলেন তাদের দাবির কথা। কয়লা খনি নির্মাণের নামে যে জমি অধিগ্রহণের চাপ চলছে, তা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছেন। হরিণশিঙার টেরেসা সরেন জোরালো কণ্ঠে বলেন, “কয়লা খনির নামে আমাদের জীবন নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। শেষ দিন পর্যন্ত বলব, আমরা কয়লা খনি চাই না।”
টেরেসার পাশেই ছিলেন জেটকেপাড়ার সোনদি হাঁসদা। তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের পুরনো জমিতেই থাকতে চাই। টাকা বা চাকরি চাই না। আমাদের জীবন ও সংস্কৃতিই আমাদের চাহিদা।” এদিন ময়নামতি এবং অন্যান্য পাড়া থেকে আসা কয়েক শতাধিক মানুষও এই আহ্বানকে সমর্থন জানায়।
পাঁচামীর বিভিন্ন পাড়া থেকে মহিলাদের দলবদ্ধ হয়ে আসার পেছনে রয়েছে প্রশাসনিক নজরদারি। পুলিশ ‘২৪ ঘণ্টা নজরদারি’ চালাচ্ছে, কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও মানুষ তাদের অবস্থান দৃঢ় রাখছে।
সিউড়িতে অনুষ্ঠিত দেউচা-পাঁচামী খনি বিরোধী গণকনভেনশন-এ আদিবাসী অধিকার মহাসভার পক্ষ থেকে জগন্নাথ টুডু বলেন, “আমাদের প্রকৃত চাহিদা কেউ খোঁজ নেয় না। স্কুল আছে, শিক্ষক নেই; অঙ্গনওয়ারি আছে, শিক্ষার ব্যবস্থা নেই; হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই। রাস্তা ভাঙা, যোগাযোগ সমস্যা, প্রশাসন অবহেলা করছে। অথচ খনি নিয়ে তাড়া চলছে। আমরা কেন বুঝি না?”
কনভেনশনের যুগ্ম আহ্বায়ক সিপিআইএম নেতা গৌতম ঘোষ মন্তব্য করেন, “দেউচা-পাঁচামী প্রকল্প মানবিক নয়। পুলিশ ও দুষ্কৃতী দিয়ে জোরপূর্বক জমি নেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকার এখনও খনি অনুমোদনের জন্য আবেদনও করেনি। এটাই স্পষ্ট করে যে, প্রকল্পের প্রকৃত লক্ষ্য মানুষ নয়, লাভ।”
প্রসেনজিৎ বসু বলেন, “আগের সরকার প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই করে সরে এসেছিল। বর্তমান সরকার কোনো শিল্প স্থাপন না করে শুধুই কয়লা নিয়ে নজর রাখছে। প্রকৃত কাজ হচ্ছে না, বরং পাথর উত্তোলন করে লুটের সম্ভাবনা তৈরি করা হচ্ছে।”
সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, “এটি প্রতারণামূলক প্রকল্প। বনজঙ্গল, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য বিপন্ন হবে। দীর্ঘদিন ধরে যারা পাথরের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন, তাঁদের কর্মসংস্থানও ধ্বংস করা হবে।”
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সিঙ্গুরে শিল্প বাধা দেওয়ার ইতিহাস আমাদের মনে আছে। আদিবাসীদের ওপর আক্রমণ হলে আমরা মাঠে, ঘাটে, আদালতে লড়াই চালাবো।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই খনি প্রকল্পের কারণে প্রায় ২১ হাজার মানুষ উচ্ছেদ হবেন, যার অর্ধেকের কাছাকাছি আদিবাসী সম্প্রদায়ের। পুলিশি হেনস্তা, শাসকের চাপে থাকা এবং মিথ্যা মামলার মধ্যেও সোনদি, ময়নামতি, লক্ষীরাম ও জগন্নাথরা অনড়ভাবে পুনরায় ঘোষণা করেছেন: “কয়লা খনি চাই না।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন