বাংলাদেশে রবি ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে হামলা! ইউনূস সরকারের সাথে কথা বলার আর্জি জানিয়ে মোদীকে চিঠি মমতার

People's Reporter: চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, "ভারতের গর্ব, সংস্কৃতির জন্য এই ভাঙুচুর ‘দুর্ভাগ্যজনক’। আমাদের সংবেদনশীলতা, সম্পদ, নস্টালজিয়া-য় আঘাত করা হয়েছে।"
বাংলাদেশে রবি ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে হামলা! ইউনূস সরকারের সাথে কথা বলার আর্জি জানিয়ে মোদীকে চিঠি মমতার
ছবি - সংগৃহীত
Published on

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল ভারতের নয়, বাংলাদেশেরও গর্ব। কিন্তু নৈরাজ্যের বাংলাদেশে ন্যূনতম সম্মান পেলেন না কবিগুরু। বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটেয় ভাঙচুর করেছে উন্মত্ত কিছু জনতা। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত রবীন্দ্র যাদুঘর। অশান্তি, ভাঙচুরের জেরে আপাতত রবি ঠাকুরের বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ জনসাধারণের। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন নিয়ে। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের এই ঘটনায় একজোটে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিজেপি-তৃণমূল। এই নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে পার্কিংয়ের সমস্যা নিয়ে এক পর্যটকের সঙ্গে মিউজিয়ামের কর্মীর ঝামেলা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, যাদুঘরের প্রবেশপথেই বাইকের পার্কিং ফি নিয়ে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, ওই পর্যটককে অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয় এবং শারীরিক নিগ্রহও করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিক্ষোভ দেখায়। পরে একদল উন্মত্ত জনতা কাছারিবাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং কাস্টোডিয়ানের অফিস, অডিটোরিয়ামের জানালা, দরজা ভাঙচুর করে। বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রীর ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মিউজিয়ামের ডিরেক্টরকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, "ভারতের গর্ব, সংস্কৃতির জন্য এই ভাঙুচুর ‘দুর্ভাগ্যজনক’। আমাদের সংবেদনশীলতা, সম্পদ, নস্টালজিয়া-য় আঘাত করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কঠোর ভাবে কথা বলার জন্য আমি আপনাকে আর্জি জানাচ্ছি। যাতে এই জঘন্য কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিচার হয়। ইতিমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ না হয়, সে জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবাদ হওয়া উচিত।''

এদিকে বাংলাদেশের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে বিএনপি এবং ছাত্রশিবিরের কর্মীদের এই হামলার জন্য দায়ী করে তিনি লেখেন, "আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পবিত্র ঐতিহ্যকে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে অপবিত্র করা হয়েছে। এই ঘটনা লজ্জাজনক!"

তিনি এই ঘটনাকে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের জন্য "জাগরণের ডাক" বলে অভিহিত করে লেখেন, “যখন চরমপন্থী শক্তিগুলি তাদের অবস্থান দখল করে, তখন তারা কাউকেই রেহাই দেয় না, এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বব্যাপী সম্মানিত ব্যক্তিত্বকেও নয়। কাছারিবাড়িতে আক্রমণ কেবল একটি ভবনের উপর হামলা নয় - এটি আমাদের ভাগ করা ঐতিহ্য, আমাদের পরিচয় এবং আমাদের মূল্যবোধের উপর আক্রমণ"।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এই ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, "নোবেল বিজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িও রেহাই পেলনা বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের শাসনকালে। এই আক্রমণ কেবল একটি ভবনের উপর নয়, এটি বাঙালির পরিচয়ের আত্মা, মুক্ত চিন্তার উত্তরাধিকার এবং শিল্প ও বুদ্ধির প্রতীকের উপর সরাসরি আক্রমণ। একটি প্রশ্ন জোরে জোরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে — ঠাকুর কি এখন বাংলাদেশেও ‘অপরাধী’, কেবল হিন্দু হওয়ার কারণে?”

অন্যদিকে, বাংলাদেশের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তৃণমূলও। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে শাসক দলের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, "বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাসভবনে ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। গুরুদেব বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক এবং সাহিত্য ও মানবতাবাদের বিশ্বব্যাপী প্রতীক। এই ধরনের অসম্মানজনক কাজ প্রতিটি বাঙালির পরিচয় এবং গর্বের প্রতি অবমাননা। আমরা কেন্দ্র সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা বিষয়টি বিবেচনা করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে, যাতে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা যায়"।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের কাছারিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়ি। ১৮৪০ সালে কবিগুরুর পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নেন। সেই সময়ই কাছারিবাড়ি ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের বেশ কিছুটা সময় এই বাড়িতে কাটিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে। পরে তা মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in