২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বামেরা একপ্রকার গৌণ হয়ে গিয়েছিল রাজনীতির ময়দানে। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। তৃণমূল ও বিজেপি একা জিততে পারবে না। বামেদের বাদ দিয়েও কেউ সরকার গড়তে পারবে না। সেটা উভয়েই বুঝে গিয়েছে। সরকার বামেরাই গড়বে। শনিবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে এমনই অভিমত ব্যক্ত করলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর এই মতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলে কী হবে এইসব বলা এখনই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। তার মানে হল বিজেপি বুঝে গেছে তারা একা জিততে পারবে না। তৃণমূলও সেকথা বুঝে গিয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই হারবে। জিতবে বাংলার মানুষ। বাংলার সর্বনাশ হচ্ছে।'
এদিনই যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদির দূত’ নামে ট্যাবলো যাত্রার সূচনা করেন। তা নিয়েও কটাক্ষ করে সিপিএম নেতা বলেন, ‘দিদিকে বলো’ ফেল হয়েছে। ‘দিদির গর্ব’ আর একটা ফেল। এখন ‘দিদির দূত’ নাকি ‘দিদির ভূত’ বের হচ্ছে সেটা লোকে পরে বুঝতে পারবে। দিদির আবার দূত কিসের। ২৯৪টাই তো দিদির।'
’মা ক্যান্টিন' প্রসঙ্গে তিনি বামেদের 'শ্রমজীবী ক্যান্টিনের’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘লকডাউনের সময়ে বামেরা যে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ চালু করেছিল তা দেখে মুখ্যমন্ত্রীর দুঃখ হয়েছিল। এবার ‘সাক্ষাৎ সলিলে ডুববে’ বুঝতে পেরে ভোটের দু’মাস আগে ‘মা ক্যান্টিন’ উনি চালু করেছেন।' এর মাধ্যমে সরকারের পয়সা লুট হওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করে সুজনবাবু বলেন, ‘লুটের হিসাব ফিরে এসে আমাদেরই নিতে হবে।’
যাদবপুর আসনে সুজন চক্রবর্তীকে এবার হাওয়া করে দেওয়া হবে বলেছিলেন অভিষেক। সুজনবাবুর কটাক্ষ, ‘বোঝা যাচ্ছে উনি এখন একজন ভালো ম্যাজিশিয়ান হয়ে গিয়েছেন। হাওয়া করতে ওরা সত্যি পারে। বাংলার বহু মানুষকে হাওয়া করে মাটির তলায় পুঁতে দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় অনেককে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে।’ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘বিজেমূল’কে ঠেকাতে মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। বিকল্প হতে পারে না। সুজনবাবু প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলকে সত্যি কি বিজেপি হারাতে চায়! তাঁর অভিযোগ, সত্যি বিজেপি তৃণমূলকে হারাতে চাইলে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শা, দিলীপ ঘোষ, কাউকে লাগত না। চিটফান্ড কাণ্ডে দিল্লি সরকার সিবিআইকে ঠিকঠাক তদন্ত করতে দিলে চিটফান্ড কান্ডের সবথেকে বড় বেনিফিসিয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর বাঁদিকে-ডানদিকের সবাই নবান্নর ১৪ তলা থেকে পালিয়ে যেত। বিজেপি চায়নি তৃণমূল চলে যাক।‘
বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ডবল ডিজিটের উপরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন এই নেতা। আসন সংখ্যায় তৃণমূল একশোর ঘর পেরোতে পারবে না। তার আগেই তৃণমূল বান্ডিল হয়ে যাবে। একইরকম ভাবে বিজেপিও দু’অঙ্কের ডিজিটে বান্ডিল হয়ে যাবে বলে সুজনবাবু মনে করেন।
অবশ্য তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু কটাক্ষ করে বলেন, ‘সুজনবাবু এখন যে জ্যোতিষী গিরিও করছেন তা জানা ছিল না। ২০১১ সালেও ওনাদের জ্যোতিষ বিচার ফেল করেছিল। এবারেও ফেল করবে। কারণ বাংলায় যাহা বাম তাহাই আসলে রাম। বামেদের বহুররূপী সাজাটা বাংলার মানুষ ২০১৯ সালেই ধরে ফেলেছে। তাই এবারের বিধানসভা ভোটের পর বাম ও কংগ্রেসকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।’
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।