
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ‘ভুতুড়ে’ ভোটার নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শুক্রবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট জমা দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই আবহে শুক্রবারই ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সমাজমাধ্যমে বার্তা দেয় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। অর্থাৎ বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন এখনও এক বছর বাকি থাকলেও তার আগেই ভুয়ো ভোটার নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার নেতাজী ইন্ডোরে মমতা বলেছিলেন, ভোটার তালিকায় বেড়েছে ভুতুড়ে ভোটার। বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি ভিনরাজ্য থেকে ভোটার নিয়ে আসার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই মুহুর্তে একমাত্র ‘ভূত’ তাড়ানোই কাজ। এমনকি ভোটার তালিকায় গরমিলের কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছু নামও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। নিজের দলকে এনিয়ে সতর্ক হতে বলেন তিনি। তালিকা নজরদারির জন্য কোর কমিটিও ঘোষণা করে দেন।
এরপরেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা ময়দানে নামে বিজেপি। রাজ্যের বিধায়ক এবং দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অফিসে যান শুভেন্দু অধিকারী। কমিশনের কাছে মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করা-সহ তৃণমূলের বিরুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের একটি অংশের ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বুথের তালিকা জমা দেন তিনি। বিজেপির দাবি, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহুর্তে ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষের বেশি ‘ভুয়ো' নাম রয়েছে। কমিশন যেন অবিলম্বে এই সব নাম বাদ দেয়। পাশাপাশি আবেদন জানানো হয়, কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।
শুক্রবার শুভেন্দু ছাড়াও বিজেপির সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন – অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ, মিহির গোস্বামী, অসীম সরকার-সহ বিজেপির পরিষদীয় দলের অনেকেই। দলের তরফে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শিশির বাজোরিয়াও ছিলেন প্রতিনিধি দলে। দিবেন্দ্যু দাসের কাছে তাঁরা অভিযোগ পত্র জমা দেন।
এরপরে শুক্রবারই মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর থেকে সমাজমাধ্যমে পোষ্ট করা হয়। এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, “জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী, ভোটারদের নিবন্ধন বিধি ১৯৬০ এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ম্যানুয়াল অনুসারে বিএলও, এইআরও, ইআরও এবং সিইও-রা যে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা নিযুক্ত বুথ স্তরের এজেন্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য কাজ করেন। কোনও নির্দিষ্ট দাবি বা আপত্তি থাকলে পশ্চিমবঙ্গে ৮০,৬৩৩ জন বিএলও,৩,০৪৯ জন এইআরও, ২৯৪ জন ইআরও-র মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্ব প্রথম জানাতে হবে”।
কমিশনের যুক্তি, কার্ড দেওয়ার পদ্ধতিতে বিএলও-রাও থাকেন। ভুয়ো ভোটারের ক্ষেত্রে তা হলে তাদের নজর এড়িয়ে এসব কীভাবে হচ্ছে? অর্থাৎ এই নিয়ে রাজ্যকেই ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়া হল কমিশনের তরফ থেকে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এপর্যন্ত এক লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। মৃত্যুজনিত কারণ ছাড়াও যে সমস্ত ভোটাররা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন অথবা যাঁদের দুটো ভোটার কার্ড রয়েছে, এমন ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন