
দীপাবলির রাতে 'ডাইনি' অপবাদে আদিবাসী গৃহবধূকে খুন। অভিযোগ উঠল নিহতের দেওর-ভাসুর এবং তাঁদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পাড়া থানার চাপুরি গ্রামে। মৃতার নাম পদবি টুডু (৩৭)। মৃতার স্বামী নিজেরই চার ভাই এবং তাঁদের স্ত্রীদের দিকে আঙুল তুলেছেন।
সোমবার রাত আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতার স্বামী সুভাষ টুডু জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাজারে গিয়েছিলেন পুজোর সামগ্রী কেনাকাটা করতে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই পদবি টুডুকে 'ডাইনি' অপবাদ দিয়ে নানাভাবে হেনস্থা করছিল তাঁরই পরিবারের লোকজন। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে পদবির দিকেই আঙুল তোলা হত। তাঁর অভিযোগ, তার চার ভাই এবং তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে।
মৃতার স্বামী জানিয়েছেন, সোমবার রাতে 'ডাইনি' বলে তাঁর স্ত্রীকে ঘর থেকে সবার চোখের সামনেই টেনে নিয়ে যায় তাঁর ভাইরা এবং তাদের স্ত্রীরা। মৃতার কিশোরী মেয়ে উষারানি টুডু কাঁদতে কাঁদতে জানায়, “ওরা বলছিল মা নাকি ওদের ঘরের ছেলেমেয়েকে খেয়েছে। তারপর কোদাল দিয়ে মাথায় আঘাত করে।”
পরিবারের আরেক সদস্য কুসুম মুর্মু বলেন, “আমি কোলে বাচ্চা নিয়ে আটকাতে গেছিলাম, কিন্তু আমায় ঠেলে ফেলে দেয়। চারদিক থেকে ঘিরে ওরা পদবিকে মেরে ফেলে।”
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গৃহবধূর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে মৃতার ভাসুর হিটলার টুডু এবং তার স্ত্রী জলেশ্বরী টুডু, দেওর শুকলাল টুডু ও বাবলু টুডু, ভাইপো রাজেশ টুডু এবং তার স্ত্রী মদনি টুডু। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতদের রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক ডঃ নয়ন মুখার্জি বলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ওই গ্রামে গিয়ে তাঁরা কুসংস্কারবিরোধী প্রচার চালাবেন। পাশাপাশি, অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, সভ্য সমাজে এহেন অপরাধমূলক ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন