
বুধবার অর্থাৎ ৯ জুলাই শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বনধের বিরোধিতা করলো নবান্ন। সোমবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হলো, ওই দিন সমস্ত সরকারি ও সরকার অনুমোদিত অফিস খোলা থাকবে। সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বুধবার অফিসে অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কর্মজীবন থেকেও ওই দিনটি বাদ পড়বে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। এমনকি বেতনও কাটা যাবে ওই কর্মীর। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে রাজ্য।
কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম কোড বাতিল, সরকারের জন-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ৯ জুলাই বনধের ডাক দিয়েছে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি সহ ১০ টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন ও ফেডারেশন। নবান্নের পক্ষ থেকে সেই বনধের বিরোধিতা করে সোমবার নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওইদিন কোনো সরকারি কর্মী ক্যাজুয়াল লিভ নিতে পারবে না। এমনকি অর্ধদিবসও ছুটি নেওয়া যাবে না। নির্দেশিকা অনুযায়ী, বুধবার কোনোও কর্মী অফিসে না গেলে, তাঁর বেতন কাটা যাবে। এমনকি ওই দিনটি ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কর্মজীবন থেকে বাদ দেওয়া হবে।
নবান্নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনুপস্থিতির কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ পাঠানো হবে। উত্তর যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে ছুটি মঞ্জুর করা হবে। অন্যথায় ওই দিনের বেতন কাটা যাবে এবং দিনটি কর্মজীবন থেকে বাদ পড়তে পারে। কারণ দর্শানোর নোটিশে জবাব না দিলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।
তবে বুধবার কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে নবান্ন। যেমন - পরিবারের কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে, কেউ মারা গেলে, মঙ্গলবারের আগে গুরুতর অসুস্থতার কারণে কেউ ছুটিতে থাকলে - এই সমস্ত ক্ষেত্রে ছুটি গ্রাহ্য করা হবে। এছাড়া মঙ্গলবারের আগে থেকে যাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, চিকিৎসা সংক্রান্ত ছুটি, ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ এবং ‘আর্নড লিভ’ নেওয়া রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি থাকছে না।
প্রসঙ্গত, পুরনো ২৯টি শ্রম আইন বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাতিল অথবা পরিমার্জন করে কেন্দ্র চারটি ভাগে বিভক্ত করে নতুন শ্রম কোড চালুর কথা আগেই জানিয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির আশঙ্কা, নতুন শ্রম কোডের ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। মূলত তার প্রতিবাদেই বুধবার বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বেসরকারিকরণের বিরোধিতা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, চুক্তিভিত্তিক কাজের প্রথা বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ-সহ বেশ কিছু দাবিও তোলা হয়েছে।
বনধের বিরোধিতা করে নবান্নের বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে সিপিআইএমের রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, “রাজ্য সরকার এর আগেও এই ধরনের হুলিয়া জারি করেছে। কিন্তু যেভাবে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের অধিকার বারবার হরণ করছে, সেই অধিকার আদায়ের দাবিতে সরকারি কর্মীরা এই নির্দেশিকা উপেক্ষা করেই বন্ধে শামিল হবেন।”
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডলের দাবি, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী বা অধিগৃহীত সংস্থার কর্মচারীরা সরকারকে নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাই নবান্নের এই নির্দেশ কোর্টের নির্দেশকে শুধু অমান্য করছে না, এটা বেআইনিও।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁদের মেরুদন্ড সোজা, তাঁরা নবান্নের এই নির্দেশকে পরোয়া না করেই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা কোনও ফতোয়াকে মানি না। আমরা কেন্দ্র ও রাজ্যের স্বৈরাচারী নীতির প্রতিবাদ করে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করছি।’’
তবে তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রকাশ নায়েক বলেন, “যাঁরা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্কৃতির বিরোধী, তাঁরাই রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করবেন। আমরা এই নির্দেশিকাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছি। আগামী ৯ জুলাই যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তা ব্যর্থ করে রাজ্যের সব সরকারি কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলব। আমাদের সব সদস্য ওই দিন কাজে যোগ দিয়ে সব সরকারি অফিস সচল রাখবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন