দেহরক্ষীর রহস্যজনক মৃত্যু মামলায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করলো সিআইডি। শনিবার নোটিস পাঠানো হয়েছে তাঁকে। নোটিসে আগামীকাল ভবানীভবনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে।
সিআইডি সূত্রে খবর, দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারীর কী মত, তিনি এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, এগুলো জানতেই তলব করা হয়েছে তাঁকে।
২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে নিজের রিভলবারেই গুলিবিদ্ধ হন শুভেন্দুর তৎকালীন নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত। এর ঠিক পরদিন কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নিরাপত্তারক্ষীর। চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুর দিকে স্বামীর মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে কাঁথি থানায় FIR দায়ের করেন শুভব্রত চক্রবর্তীর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, তাঁর স্বামী ৬-৭ বছর যাবত শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি গার্ড ছিলেন। প্রতিদিনের মত গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনেও (১৩. ১০. ১৮) সকালে স্বামীর সাথে কথা হয় তাঁর। এমনকি বাড়ি আসার জন্য জামা পরছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর কিছুক্ষন পরেই জানতে পারেন তাঁর স্বামী কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই দুই ভাসুর ও অন্যান্য আত্মীয়দের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশমতো চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাঁর স্বামীকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায়নি। ফলে তাঁর স্বামীর চিকিৎসায় দেরি হয় বলে অভিযোগ স্ত্রীর। সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাঁকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
সুপর্ণা চক্রবর্তী তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, "আমার স্বামীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে মনে সন্দেহ ছিল প্রথম থেকে। শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করা সত্ত্বেও আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হলেন। করকুলির ১৫ নম্বর থেকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল ৪ কিমি রাস্তা যেতে এত দেরি কেন? এছাড়া শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটির অ্যাম্বুলেন্স পেতে দেরি কিসের জন্য হলো সেটাও আমার কাছে পরিস্কার নয়।"
৩ বছর পর FIR প্রসঙ্গে সুপর্ণা চক্রবর্তী বলেছিলেন, যখন এই ঘটনা ঘটেছিল তখন শুভেন্দু অধিকারী জেলা এবং রাজ্যস্তরে খুব শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন তাই স্বামীর মৃত্যু নিয়ে মনে সন্দেহ তৈরি হলেও প্রশ্ন করার সাহস পাননি তিনি। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে দলবদল করে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। তাই এখন বিচার পাওয়ার আশায় কাঁথি থানার আইসির কাছে এফআইআর করেছেন তিনি।
সুপর্ণা চক্রবর্তীর অভিযোগের পরই এই ঘটনার তদন্ত সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর একাধিকবার শুভেন্দু অধিকারীর বাসভবনের কাছাকাছি গিয়ে তদন্ত করেছে সিআইডি। এখন এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করেছে সিআইডি।
কয়লা পাচার কান্ডে সস্ত্রীক তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির তলবের কয়েকদিন পরেই শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করেছে রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।