কালীপুজো এবং দীপাবলীর আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। আসছে ছট পুজোও। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার ২ ঘন্টার জন্য পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট হল না পরিবেশবান্ধব বাজি বানানোর জন্য যে ধরনের হাতে কলমে শিক্ষা এবং তার স্বীকৃতি প্রয়োজন হয় তা বাজি ব্যবসায়ীরা পাবেন কিভাবে। তাই তাঁরাও যে পরিবেশবান্ধব বাজি বানাচ্ছেন তা জনসমক্ষে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি সুইচ-অন ফাউন্ডেশন ও বেঙ্গল ক্লিন এয়ার নেটওয়ার্ক নামে পরিবেশকর্মীদের দু'টি সংস্থা একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল, সেখানে যে তথ্য উঠে এসেছে তা খুব আশাপ্রদ নয়। পরিবেশ সংস্থা দু'টির তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া এবং কলকাতার চিনাবাজারের মতো দু'টি জায়গার বাজি বিক্রেতা, নুঙ্গির বাজি প্রস্তুতকারক এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় হাজারখানেক বাজি ব্যবহারকারীর মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছিল তাঁরা। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৫ শতাংশ মানুষ গ্রিন-ক্র্যাকার-সহ সবরকম বাজি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ৩০ শতাংশ মানুষ কোনও মতামত জানাননি।
যেহেতু সমীক্ষার সময় সবরকম বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তাই বাজি পোড়ানো হলেও পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে। তাতে ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেছেন, বাজি পোড়ানো নিয়ে সরকার কোনও বিধি তৈরি করলে ভালো হয়। যে বাজি পোড়ালে শব্দ ও ধোঁয়া অনেক কম হয়, তা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই পরিবেশ দূষণ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে প্রশাসন সহ অন্যান্য মহল। অনেক আগেই বাজি পোড়ানোর সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। দেওয়ালিতে রাত ৮টা থেকে ১০টা এবং ক্রিসমাস ইভ ও নিউ ইয়ারে রাত পৌনে বারোটা থেকে সাড়ে বারোটা। আতসবাজি থেকে দূষণের পরিমাণ কমানোর জন্য পরিবেশবান্ধব বাজিগুলিতে বর্তমানে ব্যবহৃত রাসায়নিকের ধরণ এবং পরিমাণে কিছুটা বদল এনেছে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিট্যুট (NEERI)। এই নতুন ধরনের বাজি কিভাবে প্রস্তুত করা হবে তার জন্যে নাগপুরের NEERI-র থেকে ট্রেনিং নিতে হবে অনুমোদিত বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে। এই ট্রেনিং শেষে দু'পক্ষের চুক্তির ভিত্তিতে বাজি প্রস্তুত করার অনুমোদন মিলবে NEERI-র থেকে, যা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু এ বছর নুঙ্গী বাজি ব্যবসায়ীদের অনুমোদন নবীকরণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। তাই তাঁরা কোনো প্রকার ট্রেনিং নিতে পারেননি। ফলে বাধ্য হচ্ছে শিবাকাশিতে তৈরি বাজি বিক্রি করতে। আর এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই আজ নুঙ্গী বাজি বাজারে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছিল প্রদেশ আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শুকদেব নস্কর ছাড়াও INTTUC-র সভাপতি শক্তিপদ মন্ডল, প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য্য, কৃষ্ণেন্দু রায়, মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার রাজিব ঘোষ সহ আরও বিশিষ্টজনেরা। প্রত্যেকেই তাঁদের ভাষণে আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের সাহায্যার্থের পক্ষে সওয়াল করেছেন। বাজি তৈরি যাতে আরো সরলীকরণ করা যায় এবং ব্যবসায়ীদের অনুমোদন নতুন করে নবীকরণ করা হয় তার পক্ষেও সওয়াল করেন।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।