উচ্চমাধ্যমিকের ফল ঘোষণায় একাধিকবার প্রথম স্থান অধিকারিণীর ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ, বিতর্ক শুরু

অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে দুই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির ছাত্রী রুমানা সুলতানা
মায়ের সাথে রুমানা
মায়ের সাথে রুমানা নিজস্ব চিত্র

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের হারে যথেষ্ট এগিয়ে গিয়েছে মেয়েরা। প্রথম তিন বা প্রথম দশ স্থানাধিকারীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছাত্রীদের নাম দেখা যায়। এবার করোনা আবহে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক কোনও পরীক্ষাই হয়নি। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে দুই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির ছাত্রী রুমানা সুলতানা।

মেধা, শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তিনি যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, সে ব্যাপারে কোনও দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু গোল বাঁধল শেষ পর্যন্ত। তা থেকে বিতর্ক তৈরি হল। ফল ঘোষণা করতে গিয়ে সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস একবার নয়, একাধিকবার রুমানার ধর্মীয় পরিচিতির কথা উল্লেখ করেন। বিষয়টা এমন হয় যে, তাঁর মেধা শ্রমের পরিবর্তে ধর্মীয় পরিচয়ই বড়। ধর্ম কি করে মেধার বিচার করতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই।

বিরোধীদের প্রশ্ন, উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতী ছাত্রী হিসেবে রুমানার মেধাই কি যথেষ্ট নয়? তাহলে বারবার তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের কথা কেন উল্লেখ করা হল? ফল ঘোষণার সময় সংসদ সভাপতি বলেন, 'সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে একটা ইতিহাস সংসদে হয়েছে। সেটা একটু বলতে ইচ্ছা করছে। যিনি এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, তিনি একজন মুসলিম কন্যা। মুসলিম, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে। একজন মুসলিম মেয়ে। তিনি এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।'

অধীর চৌধুরীর ফেসবুক পোস্ট
অধীর চৌধুরীর ফেসবুক পোস্ট

তাঁর এই বক্তব্যকে বিঁধেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী থেকে বামেদের কনীনিকা ঘোষ, এমনকী বিজেপিও। ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী ফেসবুকে পোস্ট করেন, 'মুসলিম মেয়ে বলে কি কোনও অঘটন ঘটেছে?' তিনি আরও লেখেন, 'মুসলিম মহিলা প্রথম হয়েছে’ বলে যারা বারবার বলছে, তাদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে! মেধা বুদ্ধি পরিশ্রম করে প্রথম হতে হয়। কাউন্সিলের প্রেসে শ্রুতিকটু শুনতে লাগে যখন বলা হয় ‘প্রথম হয়েছে মুসলমান মেয়ে’! ছাত্রীর নাম দেখে সে কোন ধর্মের বোঝানোর দায়িত্ব না নিলে খুশি হব।' তিনি আরও লেখেন, 'একজন ছাত্রী ফার্স্ট, ছেলেদের থেকে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা ― এটা লক্ষ্যণীয়।'

ফেসবুকে কনীনিকার পোস্ট
ফেসবুকে কনীনিকার পোস্ট

বামেদের তরফে কনীনিকা ঘোষ ফেসবুকে লেখেন, 'বামফ্রন্টের সময় ছাত্রীর ধর্ম আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়নি। শিক্ষা নাকি মানুষকে মানবতা শেখায়, ছিঃ।' বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে পদ্মশ্রী প্রাপক শিক্ষক কাজি মাসুম আখতার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'আজ সভাপতির ঘোষণায় মনে হল, উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছাত্রীটির ধর্ম পরিচয়ই মূল যোগ্যতা! মুসলিমদের বিপুল ভোটে জয়ী সরকারের উক্ত আধিকারিক কি কারও অঙ্গুলিহেলনে মুসলিমদের বিপুল উন্নয়ন বোঝাতে এই বিড়ম্বনা সৃষ্টি করলেন, নাকি মুসলিমদের মর্যাদার দৈন্যদশা বোঝাতে এমনটাই দস্তুর!'

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in