
‘চিট ফান্ডের লুটের মতোই সন্দেশখালি ঘটনা ভুলিয়ে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী’। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেশখালি যাওয়া নিয়ে এমনই অভিযোগ তুললেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
চলতি বছরের শুরুতে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, জমি জবর দখল-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন গ্রামের মহিলারা। দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি। এরপর লোকসভা নির্বাচনের আগে বসিরহাটে প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে জিতে তবেই সন্দেশখালি যাবেন তিনি। সেই মতো সোমবার সন্দেশখালিতে সরকারি পরিষেবা অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে উড়ে সন্দেশখালি পৌঁছান। সেখানে গিয়ে সন্দেশখালির মানুষের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একাধিক প্রতিশ্রুতির কথা বলেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে টাকার খেলা চলছে। মিথ্যে বেশিদিন চলে না। আমি চাই যা হয়েছে, হয়েছে, আমার মনে নেই, ভুলে গেছি’।
সন্দেশখালির মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান মহম্মদ সেলিম। তাঁর দাবি, ‘সন্দেশখালিতে জমি লুট থেকে মহিলাদের ওপরে অত্যাচারের যাবতীয় অপরাধ ভুলিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা’। এরপরেই চিট ফান্ড লুটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সেলিম। তাঁর মন্তব্য, ‘চিট ফান্ডে সর্বস্বান্ত মানুষকেও উনি লুটের অপরাধ ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উনি রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষে বসে আছেন অথচ একের পর এক অপরাধ, বিশেষত মহিলা, গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধে ব্যবস্থা না নিয়ে ভুলে যেতে বলছেন।'
সেলিম এদিন আরও বলেন, ‘যারা লুটেরা, অপরাধী, নির্যাতনকারী তাদের অপরাধ জগৎ চালাতে দিচ্ছেন। আর ভোট লুটের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন। তারপর সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে মিথ্যাচার করে, উপঢৌকন দেওয়ার ভান করে ‘যা হয়েছে, তা হয়েছে’ বলে চাপা দিচ্ছেন’।
উল্লেখ্য, চিট ফান্ড কাণ্ডের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘দরকার পড়লে সরকারি তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যা গেছে, তা গেছে’।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এদিন বিজেপিকেও নিশানা করেছেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ, ‘সন্দেশখালির মানুষ লুট ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরই সহযোগী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এনে সন্দেশখালি নিয়ে সাজানো ভিডিও প্রচার করে জমিদখলের প্রকৃত অপরাধ থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল। হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি করতে অপপ্রচার করেছিল। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে প্রস্তুত সন্দেশখালির মানুষ সেই সুযোগ আর দেবে না’।
সেলিমের পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সন্দেশখালি সফরকে নিশানা করেছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘সরকারি টাকায় সফর করে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা প্রচার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বোগাস প্রতিশ্রুতি দিয়েই থাকেন, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। দেড় বছরে ওই এলাকায় আবাসের দেড় লক্ষ ঘর করবেন বলছেন। তাহলে এতদিন করেননি কেন? চোদ্দ বছরে না করে এখন অঙ্ক কষে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দেড় বছরের কথা বলছেন?’
এছাড়া, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সন্দেশখালি সফরকে কটাক্ষ করে সুজন বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর পরেই শুভেন্দু অধিকারী যাবেন বলছেন, কিন্তু সেটা তো নির্দিষ্ট অঙ্ক কষে, মানুষের পাশে থাকার জন্য নয়। রেখা পাত্রকে নিয়ে অনেকরকম প্রচার করেছিলেন, কিন্তু মাঝের এতদিন ধরে সন্দেশখালিতে যাননি কেন?’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন