‘রাজনীতিতে তিনধরণের মানুষ, লোভী-ভোগী-ত্যাগী, লোভীদের ত্যাগ করুন’: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপি পরিবর্তন যাত্রার রথকে নিশানা করে মমতা বলেন, 'রথে বিরিয়ানি-মাংস-পোলাও-কাবাব থেকে শুরু করে সাজ-বিশ্রাম-গানা সব রয়েছে। যেমন ১০ স্টার হোটেলে পাওয়া যায়।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি ট্যুইটার থেকে সংগৃহীত

বিধানসভা নির্বাচন প্রায় দোরগোড়ায়। তার আগে নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দলই। নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের জনসভায় দলবদলু থেকে কেন্দ্রীয় সরকার, বিঁধলেন সবাইকেই। কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা বক্তব্যকে। একইসঙ্গে বললেন, 'যদি কেউ ভাবে আমি বড় নেতা, সেটা ভুল।' তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। যদি কেউ ভাবে আমি বড় নেতা, সেটা ভুল। তৃণমূল কংগ্রেস কারও কাছে মাথানত করে টিকিট দেয় না।’

দলবদলুদের তোপ দেগে বলেন, ‘কিছু ভুঁইফোড়কে কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম, আখের গুছিয়েছে পালিয়েছে। ইঁদুর থেকে বাঘ হয়ে ঋষিকেই খেতে আসছে। রাজনীতিতে তিনধরণের মানুষ, লোভী-ভোগী-ত্যাগী। যাঁরা লোভী তাঁদের ত্যাগ করুন।’

কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বিজেপির অনেক টাকা আছে, তাই খুব অহঙ্কার। টাকার থেকে মানুষের দাম অনেক বেশি। টাকা দিয়ে চরিত্র গঠন হয় না। বিজেপি ভাবছে যেমন করে হোক ক্ষমতা দখল করতে হবে। অত সস্তা নয়, এটা দিল্লির লাড্ডু নয়।’ তিনি মনে করেন, ‘দেশের নেতা মহাত্মা গাঁধী, নেতাজির মতো হওয়া উচিত। নেতা আবার মিথ্যে কথা বলবে কেন? বিজেপি দিনকে রাত, রাতকে দিন করে দেয়।’

ধর্ম ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য, ‘আমি ধর্মকে ভালবাসি, মুখে বললেই হয় না। যাঁরা মানুষ খুন করে, তাঁদের মুখে ধর্মের কথা মানায়?’ এই ইস্যুতে বিজেপি পরিবর্তন যাত্রার রথকে নিশানা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি দেবতারা রথ চড়ে। এখন দৈত্যরা হোটেলের মতো রথ তৈরি করে যাত্রা করছে। বিজেপির আমার উপর খুব রাগ। ওরা চায় আমায় সরিয়ে দিল্লি থেকে বাংলা চালাতে। কিন্তু এতো সস্তা নয়, আমরা মাথা নত করি না।' তাঁর কটাক্ষ, 'বিজেপি নেতারা রথযাত্রা করছে। তারা কি জগন্নাথ দেবের থেকেও বড়? দেবতারা চলে গিয়ে বিজেপি নেতারা এসেছে। রাবণও রথে চেপে এসে সীতাকে হরণ করেছিল। বাবুরা রথ বিক্রি করেছেন। সেই রথে ১০ তারা হোটেলের সুবিধা নিয়ে ফুর্তি করছেন। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে এরা কালিমালিপ্ত করেছে। ধর্মের নামে অধর্ম করছে বিজেপি।’ তিনি বলেন, 'রথে বিরিয়ানি, মাংস-পোলাও, কাবাব- ১০ তলার সমান রথ তৈরি করেছে। সাজ-বিশ্রাম-গানা থেকে শুরু করে সব রেডি। যেমন ১০ স্টার হোটেলে পাওয়া যায়।'

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমফান চলে গিয়েছে, মানুষ জিতেছে। কোভিড পালিয়ে গিয়েছে, মানুষ জিতেছে। আমরা থাকাকালীন কোনও বিপদ আপনাদের হবে না। আমরা চাই আগামী দিনেও বিনামূল্যে রেশন পান। আমাদের সরকার বিনামূল্যে রেশন দেবে। প্যারা টিচারদের বছরে বছরে ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি।’

বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘ঘরে বসে ফেক ভিডিও তৈরি করে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিজেপি বলে বাংলায় মহিলারা ঘর থেকে বেরোতে পারে না। উত্তরপ্রদেশে দলিতদের খুন করা হয়। বিজেপি নেতাদের বাংলার ঐতিহ্য সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই।’

তাঁর দাবি, ‘আমি নিজেকে কর্মী ভাবি। সরকার চালানোর সময় সাধারণ মানুষ ভাবি। তাহলেই দেখবেন মন থেকে দ্বিধা দন্দ্ব দূর হবে। একটি রাজনৈতিক দল অনেককে নিয়ে হয়। ধর্ম-বর্ণ অনেক থাকে।’

স্বাস্থ্যসাথি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী থেকে বিনামূল্যে রেশন, সব দিয়েছে রাজ্য সরকার। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয়, কাজ করে না। বিজেপি শুধু দাঙ্গা করে বেড়াচ্ছে। বীরসা মুন্ডার নাম করে অন্যের গলায় মালা পরিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘বিজেপি বলে ১৫ লক্ষ দেব, বলে পালিয়ে যায়। আমরা যেটা বলি, সেটা করে বলি-করেছি। লঙ্কা খেলে তো ঝাল লাগবেই। দাঙ্গা করবে-আমরা বলব না তা কী করে হয়।’

জেলার উন্নয়ন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘কালিয়াগঞ্জের হাসপাতাল ৩০০ বেডের করে দিলাম। রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ করার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। রাজবংশী ভাষায় পড়াশোনার জন্য ২০০ স্কুল করে দিচ্ছি। অলচিকি ভাষার জন্য ৫০০ স্কুল করে দিচ্ছি। হিন্দি, গোর্খা ভাষার জন্যও আলাদা স্কুল।’

বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জানে না। আমাদের সরকার বিনা পয়সায় রেশন দেবে। আদিবাসী ভাষার প্রসারে তৈরি হচ্ছে বিশেষ কেন্দ্র। বিজেপি বাংলার ভাল কাজ দেখতে পায় না।’

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারে একমাত্র তৃণমূল সরকার। প্রার্থী কারা হবে দেখার দরকার নেই। যারা দল বদল করতে পারে তাদের প্রার্থী করব না।’

এদিনের মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, 'দিল্লিকে বাংলা দখল করতে দেব না, আমরা রুখব।' বলেন, ‘আগে একটা বিড়ি তিনজন টানত। এখন কত টাকা। আমরা বলি হরে কৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল ঘরে ঘরে। আর ওরা বলে - হরে কৃষ্ণ হরে হরে, টাকা চুরি করে করে। টাকা দিলে নিয়ে নিন। বিজেপিকে ভোট দেবেন না। দিল্লিকে বাংলা দখল করতে দেব না, আমরা রুখব।’। তিনি বলেন, ‘আজ কংগ্রেস-সিপিএম বিজেপি এক হয়েছে। যগাই-মাধাই-বিদাই- তিনটেকেই জানাতে হবে বিদায়।’

বেকারত্ব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সওয়াল, ‘দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে, আর বাংলায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র কমিয়েছি। স্টিল ডেভলপমেন্ট, স্মল স্কেল, কৃষি, ১০০ দিনের কাজেও এক নম্বরে।’

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in