উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ ক্ষতিপূরণ ঘোষণা মমতার! ফের কাঠগড়ায় তুললেন ডিভিসিকে

People's Reporter: মমতা এদিন বলেন, “টাকা কখনও জীবনের বিকল্প নয়। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে মৃতদের পরিবারের কাউকে কারোর মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকতে হয়, সেই কারণেই চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
মমতা ব্যানার্জি
মমতা ব্যানার্জিছবি - মমতা ব্যানার্জির ফেসবুক পেজ
Published on

প্রবল বর্ষণ ও ধসের দাপটে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তিনি ঘোষণা করেন, বন্যা ও ধসে মৃত প্রত্যেকের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্যকে বিশেষ হোমগার্ড হিসেবে নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি ফের একবার ডিভিসিকে দুষলেন মমতা। এটাকে 'ম্যান-মেড-বন্যা' বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা এদিন বলেন, “টাকা কখনও জীবনের বিকল্প নয়। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে মৃতদের পরিবারের কাউকে কারোর মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকতে হয়, সেই কারণেই চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” সঙ্গে যোগ করেন, “আটকে পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির দিকে ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অরূপ ইতিমধ্যেই ধূপগুড়িতে পৌঁছেছেন। মমতা প্রথমে হাসিমারা হয়ে নাগরাকাটা ও পরে মিরিক যাওয়ার কথা জানিয়েছেন, যেখানে ধস ও জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৩ জনের, যার মধ্যে ১৮ জন মিরিক-কালিম্পং অঞ্চলের এবং ৫ জন নাগরাকাটায়। তবে প্রশাসনিক সূত্রে সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

এদিন ফের একবার ডিভিসিকে দুষলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গের বন্যা একেবারেই ম্যান-মেড। ইচ্ছে করে জল ছেড়ে বন্যা তৈরি করা হয়েছে। ভুটান, অসম থেকে রাজ্যে জল ঢুকছে, আর ডিভিসিও ইচ্ছে করে জল ছাড়ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “ডিভিসিতে সঠিকভাবে ড্রেজিং করা হলে এই বিপর্যয় হত না।”

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “কেন্দ্র রাজ্যকে টাকা দেয় না, কোনওমতে চালাতে হচ্ছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য একা লড়ছে।”

পর্যটকদের উদ্ধার নিয়েও রাজ্য প্রশাসন জোর দিচ্ছে। মমতা জানান, পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের নামিয়ে আনার জন্য ৪৫টি ভলভো ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের বাস মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫০ জন পর্যটককে শিলিগুড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। “যাঁরা এখনও আটকে আছেন, তাঁদের থাকার খরচ হোটেলগুলো না নিক— এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদে ফেরানো আমাদের দায়িত্ব,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও জানান, মিরিক ও নাগরাকাটায় ইতিমধ্যে কমিউনিটি কিচেন চালু হয়েছে। পাশাপাশি, যাঁদের টাকাপয়সা বা নথি জলে ভেসে গিয়েছে, তাঁদের জন্য আলাদা সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রবিবার বিকেলে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তিনি সেই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “উৎসব বড় নয়, মানবিকতাই বড় কথা। লক্ষ্মীপুজোর দিনেও আমাকে উত্তরবঙ্গে যেতে হচ্ছে, কারণ মানুষ এখন বিপদে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোই কর্তব্য।”

অন্যদিকে, এর আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চটজলদি উত্তরবঙ্গ যেতে আগ্রহী নন কেন? কারণ সেখানে ডিভিসি নামক বলির পাঁঠা নেই দোষারোপ করার জন্যে!” তিনি আরও লিখেছিলেন, “ওনার একটাই উদ্দেশ্য— অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো। কখনও ডিভিসি, কখনও সিইএসসি, কখনও বিহার বা উত্তরপ্রদেশ।”

গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিঙ, কালিম্পং, নাগরাকাটা, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের একাধিক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে পড়েছে গাছ, ভেঙেছে রাস্তা ও সেতু। তিস্তা, তোর্সা ও জলঢাকার মতো নদীগুলির জলস্তর বিপজ্জনক সীমা ছাড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ভূটান ও সিকিমের দিক থেকে জল নামছে, তার সঙ্গে ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এত জল যাবে কোথায়?”

বন্যা ও ধসের এই মারণ তাণ্ডবের মাঝেও মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, “রাজ্য সরকার মানুষের পাশে আছে! যতটা সম্ভব ত্রাণ, সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”

তিনি জানান, রাজ্য সদর দফতর এবং জেলাগুলিতে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু আছে। বিপর্যস্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, “অসহায় মানুষদের অনুরোধ করছি নবান্নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগ করুন।”

যোগাযোগ নম্বর: +91 33 2214 3526, +91 33 2253 5185

টোল-ফ্রি: +91 86979 81070/1070

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in