
সিবিআইয়ের পর এবার ইডিকে দেখে মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দিলেন মুর্শিদাবাদের আন্দিতে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। এমনকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের দেখে তিনি প্রথমে পালানোর চেষ্টা করেন বলেও জানা গেছে। এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল প্রায় ৬৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ককে। তদন্তে সহযোগিতা না করা এবং তথ্য-প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেবারেও সিবিআই আধিকারিকদের দেখে তিনি তাঁর দু'টি মোবাইল পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। পরে তা উদ্ধার করা হয়।
এবারে সোমবার সকালেই মুর্শিদাবাদের আন্দিতে জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গেছে। তবে এবার মোবাইল ছুঁড়ে ফেললেও সঙ্গে সঙ্গেই তা উদ্ধার করে সিবিআই তদন্তকারীরা। জানা গেছে, গত ৯০ দিনের কল রেকর্ড ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে অভিযোগ, দু'টি ফোনের পাসওয়ার্ড বলতে চাননি তিনি। এছাড়া তাঁর উত্তরে কিছু অসঙ্গতি আছে বলেও অভিযোগ।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার সকাল থেকে ফের তল্লাশি শুরু করেছে ইডি। এদিন কলকাতা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চলছে। মুর্শিদাবাদের আন্দিতে জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ি ছাড়াও রঘুনাথগঞ্জে তাঁর শ্বশুরবাড়িতেও হানা দিয়েছে ইডি। এছাড়া বীরভূমের সাঁইথিয়ায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থা হানা দিয়েছে। তিনি সম্পর্কে জীবনকৃষ্ণের পিসি হন।
এদিন সকালে ইডির পাঁচ আধিকারিকের একটি দল আন্দিতে জীবনকৃষ্ণের গ্রামের বাড়িতে হানা দেন। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় জওয়ান। জানা যায়, সেই সময় বিধায়ক নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকদের দেখে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সেই সময় বাড়ির পিছনের ঝোপে একটি মোবাইল ফেলে দেন তিনি। কেন্দ্রীয় জওয়ান তাঁকে ধাওয়া করে ধরে পিছনের দরজা দিয়েই বাড়িতে নিয়ে আসেন। আপাতত পাঁচ আধিকারিক তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এদিন জীবনকৃষ্ণ সাহা ছাড়াও বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তাঁর পিসি তথা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়িতেও তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। তল্লাশি চলছে রঘুনাথগঞ্জে জীবনকৃষ্ণের শ্বশুরবাড়িতেও। এছাড়া মহিষগ্রামের বাসিন্দা এক ব্যাঙ্ক কর্মচারী রাজেশ ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চলছে বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি কলকাতার একাধিক জায়গাতেও হানা দিয়েছে ইডি।
২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জীবনকৃষ্ণ সাহা। সেখানে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এরপর শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন তৃণমূল বিধায়ক। একাধিক বার জামিনের আবেদনের শুনানি পিছিয়ে যায়। ২০২৪-এর ১৪ মে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দেয়।
বড়ঞার বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত মিডলম্যান প্রসন্ন রায়কে সহায়তা করতেন। উল্লেখযোগ্যভাবে আজ সকালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের শ্বশুরবাড়়িতেও হানা দিয়েছে ইডি। সোমবার সকালে পুরুলিয়ার নিমটাঁড় এলাকায় ইডির একটি দল প্রসন্নর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন