
ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের তহবিল নয়ছয় করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠল রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এনিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, সাংগাঠনিক সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ এবং রাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল বানসলের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দলেরই একাংশ। যা ফাঁস হতেই সরব তৃণমূল। ‘ইডি’, ‘সিবিআই’ তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। যদিও পুরো বিষয়টি ‘মিথ্যে’ বলে দাবি করেছেন জগন্নাথ।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন তিনি। তবে দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাঁকে। সেই জগন্নাথের বিরুদ্ধে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা জনৈক অজয় মুখোপাধ্যায়। অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তোলাবাজি থেকে শুরু করে দলের পুরানো নেতাদের উপর ছুরি ঘোরাচ্ছেন জগন্নাথ। রাজ্যস্তরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবশেষে ইমেল মারফত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অভিযোগপত্র পাঠান অজয়।
অভিযোগ, গত দু’বছরে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন জগন্নাথ। যার অধিকাংশ বৃদ্ধ বাবা, মা এবং শ্যালিকার নামে। যার বেশিরভাগই বীরভূমে। তবে কলকাতাতেও সম্পত্তি রয়েছে। জানা গেছে, নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা সরণিতে ৪ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের আবাসন রয়েছে শ্যালিকার নামে। ওই সম্পত্তির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। জানা গেছে, রাজনীতিতে প্রবেশের আগে জগন্নাথ বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের কোনও সম্পত্তি ছিল না।
এছাড়া জগন্নাথের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগপত্র অনুসারে, পঞ্চায়েত, পৌরসভা অথবা উপনির্বাচনের যাই হোক না কেন, দলের তরফে দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালী জেলা সভাপতিদের কাছে থেকে যোগ সাজেশ করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনে ভুয়া বুথ কমিটি দেখিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথের বিরুদ্ধে। ২০২৪-এ নির্বাচনী সহ-প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অভিযোগ, বুথ প্রতি দলের তরফে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। জেলা সভাপতি ও ক্লাস্টার ইনচার্জের সঙ্গে যোগ সাজেশ করে অতিরিক্ত বুথ দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা তছরূপ করেছে।
এছাড়া, জগন্নাথের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগপত্র অনুসারে, নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে। অভিযোগ, রাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সমর্থন রয়েছে এতে। যার কারণে জগন্নাথের এত বাড় বাড়ন্ত। গোটা বিষয়টি দলীয়স্তরে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।
এই অভিযোগপত্র ফাঁস হতেই তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দলীয় স্তরে তদন্ত হওয়ার তো কোনও বিষয় নেই। স্পষ্ট বেনামে সম্পত্তি তৈরির অভিযোগ রয়েছে। ইডি, সিবিআইয়ের উচিত তদন্ত করা। প্রয়োজনে আমি গিয়ে তথ্য দিয়ে আসব!” কটাক্ষ করে কুণালের আরও বক্তব্য, “আর্থিক দুর্নীতির মামলায় যদি এক চ্যাটার্জি পদবির সাজা হয়, তাহলে আরেক চ্যাটার্জি পদবির বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হবে না?”
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথের মন্তব্য, “কোনও প্রমাণ ছাড়াই কালিমালিপ্ত করার জন্য যাঁরা আমার বিরুদ্ধে আজগুবি অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদেরই তা প্রমাণ করতে হবে। না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব”। তাঁর সংযোজন, “আমি রাজনীতি করি বলে আমার বৃহত্তর পরিবারের সদস্যদের নিজস্ব উপার্জনে কেনা সম্পত্তিও আমার ‘বেনামি’ বলে হাস্যকর ভাবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা প্রমাণ করে, চোরের দলের প্রতিনিধিরা সামনের সকলকে চোরই ভাবে!”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন