
আপাতত স্থগিত বারাসাতের সাত কলোনির উচ্ছেদ অভিযান। জেলাপ্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে এই অভিযান। যার জেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন কলোনিবাসী গরিব মানুষ। এদিকে উচ্ছেদ স্থগিতের পরেই মঞ্চ বেঁধে ধর্না কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল।
শুক্রবার ছিল বারাসতের রেলের জমিতে বসবাসকারীদের উঠে যাওয়ার দিন। শনিবারই বুলডোজার নামিয়ে উচ্ছেদের দিন নির্ধারিত করা হয়েছিল। রেলের এই উচ্ছেদ সম্পর্কে জানত না জেলাপ্রশাসন। কার্যত, বস্তিবাসীদের সংগঠন ইউসিআরসি'র কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের ঘটনা জানতে পারে। রাজ্যের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিভাগ থেকে রেল প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরেই আপাতত সাত কলোনি উচ্ছেদ স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসনিক ভবনে ছিল বৈঠক। সেই বৈঠকে জেলাপ্রশাসক ছাড়া উপস্থিত ছিলেন - অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি সংস্কার), জেলার ভূমি সংস্কার আধিকারিক সহ পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিসনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই বৈঠক। এরপরেই কলোনি উচ্ছেদ স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
জানা গেছে, ওই বৈঠকে জেলাপ্রশাসকের অনুরোধেই এই উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রেখেছে রেল। পাশাপাশি, আগামী দিনে এই পরিকল্পনা কার্যকরের আগে জেলাপ্রশাসনকে আগাম বার্তা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। সাত কলোনির ওই এলাকায় বসবাস করেন দেড় হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে আগাম বার্তা ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান চললে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, "রাজ্য সরকারের যত কলোনি আছে সব আইনত স্বীকৃতি করে দেওয়া হয়েছে। তারা সময় সময় পাট্টা পেয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যত জমি আছে - কয়লা, রেল মন্ত্রকের জমিতে যারা বসবাস করছে, তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। আইন করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি জমিতেও যারা বাস করছে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ ঠেকাতে আইন করে দেওয়া হয়েছে"।
এমনকি একুশের নির্বাচনের আগে সেই আইনেই রাজ্য সরকারের জমি, রেলের জমি, কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রকের জমি এমনকি বেসরকারি জমিতে যারা বসবাস করছিলেন তাঁদের হাতে 'নিঃশর্ত দলিল' তুলে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রেলের জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা যাবে না। কিন্তু তারপরে কীভাবে রেল উচ্ছেদ নোটিস পাঠাতে পারে? প্রশ্ন উঠছে এই নিয়ে।
বারাসতে উচ্ছেদ অভিযানের মুখে পড়া সাত কলোনির বাসিন্দাদের সেই দলিল কেন দেওয়া যায়নি? উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যের ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, "জমি অধিগ্রহণ না করে বা জমি হস্তান্তর না করে দলিল দেওয়াই যায় না। অন্যের জমিতে কী করে রাজ্য সরকার দলিল দিতে পারে? জমি আগে রাজ্যের উদ্বাস্ত পুনর্বাসন দপ্তরের হাতে নিতে হবে। জমির মালিক রাজ্য সরকার হলে তবে সেই জমির নিঃশর্ত দলিল রাজ্য দিতে পারবে"।
এই প্রসঙ্গে ইউসিআরসি'র কার্যকরী সম্পাদক দীপক ভট্টাচার্য জানান, "ইউসিআরসির তৎপরতায় বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তুদের মাথা গোঁজার জায়গা থেকে স্বল্প সময়ের নোটিসে উচ্ছেদ আপাতত ঠেকানো গেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃতির জন্য উদ্বাস্তুদের লড়াই আরও জোরদার করতে হবে"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন