Deucha Panchami: কয়লা খনির বিরোধিতায় আরও তীব্র আন্দোলনের পথে আদিবাসীদের ধরনা মঞ্চ

গত ১৩ জুলাই বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে খননের কাজ শুরু করে প্রশাসন। ১৪ জুলাই সেখানে কয়লার নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। সেই সমীক্ষায় মাত্র ১৬০ ফুট নিচে কয়লা মিলেছে বলে দাবি করে জেলা প্রশাসন।
কয়লা খনি বিরোধী মিছিল
কয়লা খনি বিরোধী মিছিল ফাইল ছবি - সংগৃহীত
Published on

দেউচা-পাঁচামীতে প্রস্তাবিত কয়লা খনির বিরোধিতায় আগেই আন্দোলন শুরু করেছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এবার তা আরও বৃহত্তর হবে বলে জানিয়েছে আদিবাসীদের ধরনা মঞ্চ।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বারোমেসিয়ার ডাঙালে শুরু হয়েছে ধরনা মঞ্চ। তারপর থেকে রিলে অনশন চলছে। কয়লা খনির বিরোধিতায় আদিবাসী মঞ্চের এই লাগাতার আন্দোলন ভাঙতে শাসক দলের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশি ঘেরাটোপে পাঁচামীর বুকে শুরু হয়েছে সমীক্ষার কাজ। গত ১৩ জুলাই পানীয় জলের জন্য বোরিংয়ের নাম করে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে খননের কাজ শুরু করে প্রশাসন। ১৪ জুলাই পানীয় জলের বোরিংয়ের জায়গায় কয়লার নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। সেই সমীক্ষায় মাত্র ১৬০ ফুট নিচে কয়লা মিলেছে বলে ১৫ জুলাই দাবি করেছে জেলা প্রশাসন, যাকে 'চমক' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

এই সমীক্ষার কাজে 'আদিবাসীদের ধরনা মঞ্চ' থেকে কোনও বিরোধিতা করা হয়নি বলে প্রচার করা হচ্ছে। কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনে ইতি পড়েছে, এমনই প্রচার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নানা মহল থেকে।

কিন্তু জানা যাচ্ছে - আদিবাসীদের ধরনা মঞ্চের আন্দোলন থেমে যায়নি। ঠিক যেদিন কয়লার স্তর জানতে মাটি খুঁড়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়, সেদিন থেকেই কয়লাখনি বিরোধীতায় রিলে অনশন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এখনও তা অব্যাহত আছে। রবিবারও সেই ধরনা মঞ্চে হাজির ছিলেন স্থানীয় বহু আদিবাসী মানুষ।

রবিবার, এই ধরনা মঞ্চ থেকে বীরভূম জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভার আহ্বায়ক গণেশ কিস্কু সাফ বলেন, 'অনেকে অনেক রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সব ভুল বলে প্রমাণিত হবে। কয়লাখনির বিরোধিতা থেকে এক ইঞ্চিও পিছু হটার প্রশ্ন নেই। চার দিন ধরে রিলে অনশনে আছি। এবার পথে নেমেই বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছি, যা খুব শীঘ্রই দিনের আলো দেখবে।'

এদিকে, দেউচা-পাঁচামীর প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, 'আটটি পর্যায়ের সমীক্ষার জায়গায় তৃতীয় পর্যায়ের সমীক্ষার কাজ চলছে। এভাবে প্রাথমিক কিছু সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানুষকে অন্ধকারে রেখে অবৈজ্ঞানিক ভাবে এক বিশাল লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রশাসনিক কাজ চলছে, চলছে সরকারী নানা ঘোষণা। এতে শুধু বিভ্রান্তি তৈরী হচ্ছে তা নয়, এ বিজ্ঞান বিরোধী এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ। এই চরম অবৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ বন্ধ হোক।'

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের এক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, 'এখনও পর্যন্ত ভূ-বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষণ থেকে যা জানা গেছে, তা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে ব্রাক্ষণী বীরভূম অঞ্চলে অনেকগুলি আপাত নিষ্কিয় চ্যুতি (Fault) বা ফাটল রয়েছে, যা ভূপৃষ্ঠের নিচে বিভিন্ন গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। খনন কাজের প্রয়োজনে বিস্ফোরক ব্যবহারের ফলে ঐ চ্যুতিগুলি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং ঐ এলাকা ভূকম্পন প্রবণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।'

স্বভাবতই উক্ত দুটি কোল ব্লক এলাকার অধিবাসী মানুষজন তাই জোট বেঁধেছে। দেউচা-পাচামি, কোল ব্লকটি দেউচা এবং ভারকাটা গ্রাম পঞ্চায়েত, দেওয়ানগঞ্জ হরিণসিঙা কোল ব্লক হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত সহ প্রায় ৩৬ টি গ্রামের মানুষ জন একত্রিত হয়ে তাদের বাসস্থান, জীবন জীবিকা, জল, জমি, প্রকৃতি রক্ষার আওয়াজ তুলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিরোধিতা করছে।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in